স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের ঐহিত্যবাহী নাকসী মাদরাসা হাট ও পশুহাটে দীর্ঘদিন ধরে বেহালদশা চলছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত হাটটি। এদিকে, পশুহাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে নির্মিত দুই চালা বিশিষ্ট টিনশেডের ঘরটি তিন বছরেও শেষ হয়নি। এখন হাটের গলারকাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে-ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কাঁদামাটি, জলাবদ্ধতা, পুরাতন ভাঙ্গাচেরা শেড, হাটের বিভিন্ন গলিতে কাঁচা ও ভাঙ্গা রাস্তা এবং সীমানা প্রাচীরের অভাব। এমনটিই জানিয়েছেন হাট কর্তৃপক্ষ। তাই দিন দিন কমে যাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম। অথচ উপজেলা প্রশাসন থেকে চলতি অর্থবছরেও ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় হাটটি কিনেছেন ইজারাদার হাদিউজ্জামান।
প্রায় ৬০ শতক জমির ওপর পশুহাট এবং ৪০ শতাংশে কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবারে এখানে গরু, ছাগলসহ বিক্রিযোগ্য অন্যান্য পশু এবং কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের হাট বসে।
হাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নড়াইল শহর সংলগ্ন নাকসী মাদরাসা হাট ও পশুহাটটি প্রায় ৩০ বছরের ঐহিত্য বহন করছে। শহরের কাছাকাছি এবং নড়াইল-যশোর সড়কের কোল ঘেঁষে অবস্থিত হাটটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় বিগত সময়ে এখানে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ছিল। নড়াইল জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পাশের জেলা যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে কাঁচামাল ও গরু-ছাগল ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ব্যবসায়ী আজম মোল্যা (৬৫) বলেন, ঐহিত্যবাহী এই হাটটিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে গরু বেচাকেনা করছি। নড়াইল-যশোর-কালনাঘাট সড়কের পাশে হাটটির অবস্থান হওয়ায় যে কোনো যানবাহন নিয়ে আমরা এখানে আসতে পারি। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে হাটের বেহালদশা। বর্ষাকাল ছাড়াও যে কোনো সময় বৃষ্টি হলেই কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। বর্তমানে কাঁদাপানির কারণে হাটের বেশির ভাগ জায়গা খালি পড়ে আছে। গরু-ছাগল বিক্রি করা যায় না।
নড়াইল সদরের ফারুক শেখ (৫০) জানান, কাঁদার কারণে হাটে ঠিকমত চলাফেরা যায় না। এতে হাটে লোকসমাগম কমে গেছে। নাকসী এলাকার সুলতান খান বলেন, পশুহাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য টিনশেডের দুইচালা বিশিষ্ট ঘরটি তিন বছর আগে নির্মাণ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতদিনে নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবে, এটি বড় প্রশ্ন। আর কাঁচাবাজারের ঘরগুলোর অবস্থাও করুণ। দীর্ঘদিন ধরে নাকসী মাদরাসা হাট ও পশুহাটের বেহালদশা থাকায় অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা সড়কের পাশে অবস্থান করেন। পশুবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন সড়কের পাশে পার্কিং করেন। জীবনের ঝুঁকিসহ সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
হাট ব্যবসায়ী মফিজ সিকদার বলেন, ৩০ বছরের ঐহিত্যবাহী নাকসী মাদরাসা হাটটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ইজারাদার হাদিউজ্জামান বলেন, পশুহাটটি প্রায় ৬০ শতক জমির ওপর অবস্থিত হলেও কাঁদামাটি, জলাবদ্ধতা ও ভাঙ্গাচেরা গলির কারণে বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে। ফলে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য বিক্রিযোগ্য পশু বেচাকেনায় সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া কাঁচাবাজারের দু’টি টিনশেডের ঘরই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। চালা দিয়ে পানি পড়ে এবং কংক্রিটের পিলারগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। এ কারণে টিনের চালার নিচে পলিথিন দিয়ে বেচাকেনা করছেন সবাই। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে। পশুহাটের সীমানা প্রাচীরও জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নাকসী মাদরাসা নড়াইলের ঐহিত্যবাহী হাট। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে ব্যবসায়ীরা আসেন। কোরবানির সময় পশুহাটে আরো লোকসমাগম হয়। এই হাটের ঐহিত্য ধরে রাখতে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দৃষ্টি দিবেন। আমি নিজেও সরেজমিন পরিদর্শন করব। আশা করছি মাসখানেকের মধ্যে হাটের বেহাল অবস্থা দুর হবে।