স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের ক্রিকেটের তারকা চিত্রা নদীর পাড়ের ছেলে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা কৌশিক ও তার বাল্য বন্ধু রবির একটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হলো। ছবিতে তাদের একান্ত কিছু সময় কাটছিল। হয়তো কোন পুরনো স্মৃতিচারণ করছিলেন দুজনে। ছবিতে এমপি মাশরাফীর পাশে তার বন্ধু চর্মকার রবিও নিজ কর্মে প্রাঞ্জল ও মনোযোগী। চর্মকার পেশা সমাজের পদমর্যাদায় বা মানদণ্ডে ছোট হলেও বাস্তবতায় এই পেশা পার্থিব মর্যাদাপূর্ণ। আর্যরা যেভাবে কর্ম অনুযায়ী মানুষের মাঝে স্তর তৈরি করে দিয়েছে তা বহুকালের চর্চা দিয়ে সমাজ সেটা অন্যমনস্ক হয়ে বরণ করে নিয়েছে। মানুষের চিত্ত বলতে পারে কর্ম মানুষকে ছোট করতে পারে না। রবি-কৌশিকের এই বিরল সম্পর্ক বা মুহূর্ত এসকল গোড়ামী ও ভাবনাকে পেছনে ফেলে দিয়ে সত্যকে বরণ করে নেয়।
সমাজের অধীরতা ও মাশরাফীর জনপ্রিয়তা ছবিটিকে ভাইরাল করেছে। কারণ মাশরাফী শুধু জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকাই নন, একইসাথে তিনি নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি নিজেও হয়তো জানতেন না এমনভাবে ছবিটি ভাইরাল হবে। তবে মাশরাফী বলে কথা। তার অনুচারীর সংখ্যা গুনে শেষ হবে না। অনেকেই বলছেন এত বড় মানুষ হয়েও নিজের অতীত ভোলেননি মাশরাফী। শৈশব-কৈশোরের বন্ধু-বান্ধব তারা যে শ্রেণি-পেশার হোক না কেন, সবার সঙ্গে আজও আগের মতোই আড্ডায় মাতেন তিনি। এমন বক্তব্য আসতেই পারে। তবে এটাই মাশরাফীর সহজাত স্বভাব। যারা বন্ধু প্রিয় তারা এমনই হয়।
বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বন্ধু নিজেও জানে না। তবে আত্মীয়ের থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্কও কম না। যার বন্ধু আছে সে বলতে পারবে। এরিস্টটল বলেন, বন্ধু হলো “একই আত্মার দু’টি শরীর।” এজন্যই হয়তো শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ জেলা নড়াইলে আসলেই মাশরাফী খুৃঁজে বের করেন শৈশব ও কিশোরের বন্ধুদের। আড্ডা মারেন তাদের সঙ্গে। এখন সংসদ সদস্য হিসেবে কাজের পরিধি বেড়ে গেলেও সময়-সুযোগ পেলেই বন্ধুদের জন্য ঠিকই সময় বের করে নেন।
মাশরাফীর অগণিত বন্ধু আছে। বন্ধুদের মধ্যে একজন রবি। পেশায় তিনি চর্মকার। নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে নাম বললে, একনামে সকলেই তাকে চিনবে। একটি মেহগনী গাছের নিচে বসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জুতা-স্যান্ডেল মেরামত করে তিনি উপার্জন করেন। চাঁদাবাজিতো করেন না।
ফেসবুকে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে রবি জুতা সেলাই করছেন। হুডি ও মাস্ক পরে গল্প করছেন মাশরাফী। ছবিটি অন্তর ছুয়ে গিয়েছে। আসলে এই জামানায় আশা করা যায় না এমন দৃশ্য। বন্ধুর পাশে কি সরলভাবে সদাব্যস্ত সাংসদ ক্লান্ত সময় পার করছেন যেখানে তার বন্ধু কর্মে ব্যস্ত। রবিও হয়তো মনে মনে গাইছেন, “আরো কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু…আরো কিছু কথা কি হবে?”