স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজার এলাকায় সরকারি খাস জমি জোরপূর্বক দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ। কতিথ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন তিনি। জেলা প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের বন্দোবস্ত কিংবা অনুমতি ছাড়াই এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে, সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কল্যাণে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।
জানা গেছে, চাঁচুড়ী বাজারের সর্ব উত্তরের গলিপথের পাশ ঘেষা “পান-সুপারি”র হাট-বাজারের চূড়ান্ত বি,এস রেকর্ড পর্যালোচনা অনুযায়ী বাজারের পেরিপেরি নকশাভূক্ত ধাড়িয়াঘাটা মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের বি,এস ৩৭ নম্বর দাগের প্রায় ২ শতাংশ সরকারি খাস জমির ওপর বহুকাল ধরে চাঁচুড়ী হাট-বাজারের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। প্রতি হাট-বাজারে ওই জমিতে নানা ধরনের পান-সুপারি বিক্রি হয়।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে সরকারি খাস জমি কোন প্রকার বন্দোবস্ত না নিয়ে দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। একই সময় সরকারি খাস জমি দখল করায় চাঁচুড়ী বাজারের ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে দখলদাররা হামলা-মামলার ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়,গত ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার ছুটির দিনের সুযোগবুঝে ২ শতাংশ খাস জমির পুরোটাই দখল করে ছাদ দিয়ে একটি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বাজার কমিটির কতিথ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। কোনো প্রকার বন্দোবস্ত বা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই তিনি ও তার সহযোগিরা সরকারি খাস জমিতে ভবন নির্মাণ করছেন। তিনতলা ফাউন্ডেশনের ওই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে তিনি ভাড়া দিবেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। বাজার কমিটির নির্বাচন ছাড়াই তিনি প্রায় দুই দশক ধরে জোরপূর্বক সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন থেকে বাজারের সরকারি সম্পত্তি লুটপাট করে খাচ্ছেন। চাঁচুড়ী বাজারের সরকারের খাস জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা যেন মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।
সরকারি ভূমি খেকো আশরাফুল ইসলাম ইতিপূর্বে চাঁচুড়ী হাট-বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কৃষ্ণপুর-কদমতলা খালের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ ও বাজারের পশ্চিশ অংশের একটি সরকারি খাস জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রাচীণ এই বাজারটিতে কোন গণসৌচাগার নেই, এমনকি ব্যবসায়ী সমিতির কোন বসারও জায়গা নেই। বিধায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চায় প্রশাসন এই সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কল্যাণে ব্যবহারের সুযোগ দিলে উপকৃত হবেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই শতাংশ সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনতলা ফাউন্ডেশনের ওপর বিম ও পিলার বাসানোর জন্য বড় বড় গর্ত খোঁড়া হয়েছে। পাশে ইট ভাঙানো মেশিনে ইট ভাঙছে শ্রমিকরা। আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই জমিতে ৬-৭ জন নির্মাণ শ্রমিক ভবন তৈরির প্রাথমিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চাঁচুড়ী বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী অসিকুর রহমান মোল্যা বলেন,‘চাঁচুড়ী বাজার কমিটির তথাকতিথ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সরকারি ২ শতাংশ খাস জমির পুরোটাই দখল করে বণিক সমিতির নামে ব্যক্তিগত স্বার্থে মার্কেট নির্মাণ করছেন। এখানে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন পান-সুপারি বিক্রি হয়। অথচ তিনি ও তার সহযোগিরা হাটের এ খাস জমিতে দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে তিনি ভাড়া দিবেন।’
এ বিষয়ে চাঁচুড়ী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নিজেও সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন আমরা বণিক সমিতির অফিস নির্মাণের অনুমতি চেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট আবেদন করে কাজ শুরু করেছি।’ অনুমতি এখনো পাননি। তাহলে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করলেন কিভাবে-এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে পুরুলিয়া ইউনিয়নের ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা বলরাম পোদ্দার বলেন,‘ছুটির দিন আমরা বাড়িতে থাকায় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ তার লোকজন সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করেছে। পরে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। সরকারি ভূমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে কালিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেয়েছি। এই জমি বন্দোবস্তের জন্য একাধিক ব্যক্তি আবেদন করেছেন। তবে কাউকে এখনো কোন বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি। সরকারি জমিতে কেউ ভবন নির্মাণ করতে পারবে না। এটি বে-আইনি। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে সরকারি ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। তাহলে ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে বিধি মোতাবেক উচ্ছেদ করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’