নড়াইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের গ্রাহকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে অস্বাভাবিক জরিমানা!

0
19
নড়াইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের গ্রাহকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে অস্বাভাবিক জরিমানা!
নড়াইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের গ্রাহকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে অস্বাভাবিক জরিমানা!

স্টাফ রিপোর্টার

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইল আঞ্চলিক অফিসের অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে অস্বাভাবিক জরিমানা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব গ্রাহককে মামলা এবং পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেওয়ায় তারা গরু বিক্রি, জমি বন্দক রেখে ও সুদে টাকা নিয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি অফিসের কর্মকর্মতা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ নড়াইল জোনাল অফিসের ৫৭জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ নড়াইল জোনাল অফিসের লাইন ম্যান আরিফ হোসেন গ্রাহকদের মিটার খুলে আনার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব গ্রাহক মিটারের সিল কেটে ফেলেছে আবার অনেকে গলিয়ে ফেলেছে। এতে মিটার ঠিকমতো ঘোরে না। অর্থাৎ স্লো হয়ে গেছে। ফলে বিল কম আসে।

নড়াইল সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দিনমজুর মুরাদ মিয়া জানান, গত ২২ জানুয়ারী সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে এসে দেখেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তার মিটার (মিটারের হিসাব নং ১৫৯/৪২৩৮) খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে বিদ্যুৎ মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে আমাকে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আমাকে যে নোটিশ দেওয়া হয় তাতে বলা হয় ২৭ জানুয়ারী মিটার টেম্পারিং-এর বিষয়টি অফিসে আমার উপস্থিতিতে অফিসের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা থাকলেও অফিস থেকে মামলা ও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোয় বাড়ির গরু বিক্রি করে ২৪ তারিখে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সেই জরিমানা পরিশোধ করি।

পার্শ্ববর্তী ষড়াতলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক কাশেম মোল্যার স্ত্রী রাণু বেগম জানান, ২১ জানুয়ারী বিদ্যুৎ অফিস থেকে মিটারটি খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ৩৪ হাজার টাকা নিয়ে দু’একদিনের মধ্যে অফিসে যেতে বলা হয়। না হলে ঢাকায় মামলা করা হবে। তখন ভয়ে জমি বন্দক রেখে, সুদে টাকা নিয়ে ২৫ হাজার টাকায় মিটমাট করি। তিনি বলেন, সর্বশেষ ডিসেম্বরে বিল পরিশোধ করেছি ৩২৮টাকা। সে সময় মিটার রিডার বিল করার সময় কোনো অভিযোগ করেনি। কিন্তু হটাৎ করে জানুয়ারী মাসে এ ধরনের অভিযোগ রহস্যজনক।
ষড়াতলা গ্রামের ৭০ বছরের দরিদ্র বিধবা সবেদা বেগম বলেন, দুইটি-বাতি আর দুইটি-ফ্যান ব্যবহার করি। প্রতি মাসে বিল আসে গড়ে ২শ টাকা বিল আসে। অথচ মিটার টেম্পারিং কওে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ এনে জরিমানা করা হয়েছে ৫১ হাজার টাকা। অফিস থেকে বলেছে, তিন দিনের মধ্যে টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অফিসে গেলে কর্মচারিরা আমাকে চোর বলে গালি দেয়। বলে বুড়ি বিদ্যুৎ চুরি করছিস টাকা না দিলে জেলে গিয়ে মরবি।

ষড়াতলা গ্রামের প্যারালাইজ দরিদ্র ইসলাম সরদার জানান,গত এক বছরে তিনি ২৪শ ৭৮টাকা (মিটারের হিসাব নম্বর ৩১৮/১৮০০) বিল দিয়েছেন। কোন মাসের বিলে কোনো অসংগতি ধরা পড়েনি। কিন্তু গত জানুয়ারী মাসের ২২ তারিখে ৪৫ হাজার ৭১৮ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি ডিজিএম-এর কাছে নিজের অসহায়ত্বেও কথা জানালে ধমক দিয়ে বের করে দেন এবং বলেন তুমি মরলেও আমার কিছু যায় আসেনা।

শড়াতলা গ্রামের মোঃ রাসেল মিয়া জানান, তার এলাকায় প্রায় অর্ধশত পরিবারের মিটার টেম্পারিং করার অভিযোগ এনে মিটার খুলে নেওয়া হয়েছে। যাদেও বিরুদ্ধে টেম্পারিং করার অভিযোগ করা হয়েছে তাদেও মাসিক বিদ্যুৎ বিল ২০০/২৫০ টাকার বেশি নয়। আর এক এলাকায় এত লোকের মিটার এক সাথে কিভাবে নষ্ট বা টেম্পারিং করা হলো তা মাথায় আসছেনা।

এ ব্যাপারে আউড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ জানুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভূক্তভোগী গ্রাহকদের নিয়ে ডিজিএম-এর কাছে গিয়েছিলাম। ঢালাওভাবে এদেও বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আনা ঠিক নয়। আমার মনে হয় এখানে কোনো কুচক্রিমহল মহল কাজ করছে। এছাড়া গ্রাহকদের গড় বার্ষিক বিল তাতে এক এক জনের সর্বচ্চ ৩-৪ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। কিন্তু এতো টাকা বিল হতে পারে না।

নড়াইল জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডঃ খন্দকার সোহেলী সুলতানা শিলী বলেন, যে কোনো অভিযোগের আগে নোটিশ করা, সময় দেওয়া এবং আইনি বাধ্যবাধ্যকতা আছে। তা না করে সরাসরি এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করাটা বেআইনি। আমি বিল সেকশনে কৌশলে কথা বলে জেনেছি, তারা আমাকে বলেছে এ সব টাকা আমরা বিল , বোনাস ইত্যাদি হিসেবে নিই।

জুনিয়র ইজ্ঞিনিয়ার মোঃ ইসমাইল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় মিটার টেম্পারিং হলে বিলে প্রভাব পড়ে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, টেম্পারিং হলে এক মাসের বিলের টাকার সাথে অন্য মাসের বিলের মিল থাকেনা। টাকার পরিমান অনেক কম-বেশি হয়। তাহলে জরিমানা করার ক্ষেত্রে বিলের ধারাবাহিকতা দেখা হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তিনি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সব কিছ ুজানেন বলে জানান।

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইল জোনাল অফিসের সদ্য যোগদানকারী ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এসএম শাহিন আহসান জানান, গ্রাহক মিটার টেম্পারিং করলে একটি তারিখ দিয়ে তাদের উপস্থিতিতে মিটার খুলে পরীক্ষাগাওে পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। জরিমানার জন্য ৩০দিন সময় দেওয়া হয়। তবে যদি কেউ আর আগে তাদের দোষ স্বীকার করে অর্থ জরিমানা দেওয় তাহলে আমাদের সে অর্থ নিতে কোন সমস্যা নেই। তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা এবং তাদের সাথে দুর্বব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।