কালিয়ায় চাঁচুড়ী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনের দাবিতে গণস্বাক্ষর

0
24
কালিয়া
কালিয়া, নড়াইল ম্যাপ

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা প্রায় ৪০ বছর ধরে চাঁচুড়ী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। পক্ষান্তরে, ওই কমিটির একটানা প্রায় ২৫ বছর সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন বিএনপি নেতা আশরাফুল ইসলাম। তারা কেউই ব্যবসায়ী নন। মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবস্থাপনা কমিটি দিয়ে বাজারের কার্যক্রম পরিচালনা করায় ক্ষুদ্ধ সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্বেচ্ছাচারী কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম,অর্থ আত্মসাত ও নির্বাচনের দাবিতে ইমরুল ইসলাম,জান্নাত সরদার ও অসিকুর রহমানসহ দুই শতাধিক সাধারণ ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর করে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আবেদনপত্রে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে অংশ নেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

লিখিত অভিযোগে ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁচুড়ী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরকার পরিবর্তন হলেও বার বার বোল পাল্টে দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করেই উভয়েই বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে আসীন আছেন। এমনকি কেউ তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই নিজেদের ইচ্ছামতো কিছুদিন পর পর ভুয়া রেজুলেশন করে পকেটের লোকজন দিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সংযোজন ও বিয়োজন করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদকাল ৩ বছর পার হয়ে প্রায় চার দশক অতিবাহিত হলেও নতুন কোন কমিটি নির্বাচিত হয়নি। নির্বাচনের কোন উদ্যোগও নেয়নি কার্যনির্বাহী কমিটি।

অভিযোগে আরো জানা যায়, তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ প্রকৃতির হওয়ার কারণে দীর্ঘকাল বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও বাজারের সরকারি খাস জমি ও খালের পাড়ে গড়ে ওঠা বাজারের খালের জমি দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। প্রতিমাসে বাজার থেকে নৈশ পাহারার নামে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করলেও ঠিকমতো নৈশ প্রহরীদের বেতন পরিশোধ করেন না। দীর্ঘ ২০/৩০ বছর ব্যবসায়ী সমিতির ফান্ডে জমানো লক্ষ লক্ষ টাকার কোন হদিস নেই। প্রায়ই বাজারে চুরির ঘটনা ঘটলেও তারা বিভিন্ন ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে চোরদের নিকট থেকে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি অন্যতম চিংড়ী ও সাদা মাছের বিশাল বাজার গড়ে ওঠেছে এখানে। যেখানে কোটি কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা হয়।

অথচ দীর্ঘকালেও প্রাচীণ এই বাজারটিতে কোন গণসৌচাগার নেই, এমনকি ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কোন বসার জায়গাও নেই। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলা পরিষদ একটি গণসৌচাগার নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও সেটি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আত্মসাত করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও চাঁদা তুলে অর্থ আতœসাত করেন স্বেচ্ছাচারী কতিথ সভাপতি ও সম্পাদক। বাজারটিতে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই,সে কারণে বর্ষাকালে প্রায়ই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এভাবে এই হাট-বাজার অন্তহীন সমস্যা জর্জরিত হলেও কতিথ বনিক সমিতির নামে ওই দুই ব্যক্তিসহ তার সহযোগীরা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অনৈতিক বাণিজ্য করে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

চাঁচুড়ী বাজারের ব্যবস্থা কমিটির নির্বাচনের দাবি করা কর্মসূচীর অন্যতম সদস্য ও ব্যবসায়ী ইমরুল ইসলাম বলেন, ‘বহু দুরভিসন্ধি করে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদ যথাক্রমে প্রায় ৪০ বছর ও ২৫ বছর ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বাজারে সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এ ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতা কুক্ষিগতদের সঙ্গে কোনো প্রকার আপোস চলবেনা।’

এ ব্যাপারে বাজারের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাত সরদার বলেন,‘ বর্তমান বাজার কমিটির শতকরা ৯৮ ভাগ সদস্যই নতুন নির্বাচনের পক্ষে। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে বারবার বলার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’ বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘ ব্যবসায়ীরা আমাকে ভালোবাসেন বলে আমি দীর্ঘদিন সভাপতি পদে আসীন আছি।’

এ বিষয় জানতে চাইলে চাচুড়ী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল তাদের হী/নস্বার্থ চরিচার্থ করার জন্য এগুলো করছে। তাদের আনীত অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন,‘এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ আমার হস্তগত হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে বাজার কমিটির সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’