স্টাফ রিপোর্টার
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নড়াইল জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর গত দুই বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি মূল ভবনের কোনো নির্মাণ কাজ। পাইলিংয়ের কিছু কাজ করলেও সেটা এখন এলাকাবাসীর জন্য মৃত্যু ফাঁদ। এ নিয়ে হতাশ নড়াইলের মানুষ। শহরের,দুর্গাপুর এলাকায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
জানা যায়, মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জুুনে। নির্ধারিত সময়ের আট মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ বলছে, সব প্রতিবন্ধকতার সমাধান করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জুলাই মাসে নড়াইল পৌর শহরের দুর্গাপুর এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কাজের মেয়াদকাল ছিল ১৮ মাস। এরপর ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পরপরই মেসার্স ইডেন এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেন। অথচ কাজ শুরুর ২ বছরেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও মূল ভবনের নির্মাণ কাজ এখনো শুরুই হয়নি। পাইলিংয়ের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। আর তাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ফলে এখনো দৃশ্যমান হয়নি মসজিদটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও এটি যেন এখন এলাকাবাসীর জন্য অনেকটা মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কারণ পাইলিংয়ের সময় খুঁড়ে রাখা বড় বড় গর্তের ভেতর রডগুলো সূঁচের মাথার মতো উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর উপর আবার সেখানে পানি জমে থাকায় ঠিক পাশেই খেলার মাঠে খেলতে আসা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। সেই মোতাবেক নির্দিষ্ট নকশায় নড়াইল জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প শিরোনামে জেলা পর্যায়ে চারতলা ভবন নিমাণ কাজ শুরু করা হয়। এ মসজিদ নির্মিত হলে ৮শ’ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়াও নারী-পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজের স্থান, পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, হজ্জ যাত্রীদের নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্পসহ বহুমুখী ইসলামিক কার্যক্রম ও সেবার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান মসজিদের সভাপতি নজরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণকাজে ধীরগতি না বলে স্থবিরতা বিরাজ করছে বলা যায়। একদিকে, পুরনো মসজিদ ভেঙে ফেলায় অস্থায়ী একটি টিনের ছোট্ট ছাপড়া ঘরে আমাদের নামাজ আদায় করতে হয়। গরমের সময়, ঠান্ডার সময় ঠান্ডা ও গাদাগাদি করে মুসাল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়। আবার একটু বৃষ্টি হলেই ছাউনী দিয়ে পানি পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মুসাল্লীদের। এমনকি কোরান-কিতাবসহ মসজিদের মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের মুসাল্লী ইছাহাক মিয়া ও টিপু শেখ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,‘ দুই বছরেও জেলা শহরে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ না হওয়াটা দুঃখজনক। পাইলিংয়ের সময় করে রাখা বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকায় প্রায়ই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তাই মসজিদটি যেন এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শহরের দূর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল হকসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘পাইলিংয়ের গর্তে পানি জমে রডগুলো জং ধরে নষ্ট হচ্ছে। ফলে পরবর্তীতে এর উপর মূল ভবনের নির্মাণ কাজ করা হলে এর স্থায়িত্বও হুমকির মূখে পড়বে। এখানে তো কারও উদাসীনতা থাকার কথা নয়। তবে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে ? কাদের গাফিলতির জন্য এত দেরি হচ্ছে,তা খতিয়ে দেখা দরকার।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইডেন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধর আলমগীর হোসেন বলেন,‘ গণপূর্ত বিভাগ অর্থ ছাড় দিচ্ছেনা তাই কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেড় কোটির টাকার মতো ফান্ড পেয়ে পাইলিংয়ের কাজে শেষ হয়েছে। নতুন করে আর বরাদ্ধ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারছি না।’
নড়াইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজ বলেন,‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজে ধীরগতি হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’