নড়াইলে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর নিবাস প্রত্যাহার করলেন এক মুক্তিযোদ্ধা

0
22
নড়াইলে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর নিবাস প্রত্যাহার করলেন এক মুক্তিযোদ্ধা
নড়াইলে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর নিবাস প্রত্যাহার করলেন এক মুক্তিযোদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর নিবাস (বাড়ি) প্রত্যাহার করলেন এবং নীতিমালা বহির্ভূত বরাদ্দের প্রতিবাদ ও বাতিল দাবি করেছেন।

নড়াইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমিটির কমান্ডার এস.এ বাকি লিখিতভাবে সদর উপজেলা বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতির কাছে লিখিতভাবে জানান, সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ে সদর উপজেলায় ৩০জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তার নামও রয়েছে। কিন্তু কয়েকজন অসহায় ও গরীব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রয়েছেন, যারা আবেদন করেও ঘর পাননি। অথচ কয়েকজনকে বীরনিবাস দেওয়া হয়েছে যারা অবস্থা সম্পন্ন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন সদরের বাঁশগ্রামের আছাদুজ্জামান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা নড়াইল শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে বঙ্গবন্ধু পরিবার সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আত্ম স্বীকৃত খু/নি ফারুক-রশিদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি থেকে ২ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই বিতর্কিত ব্যক্তির নামে বীরনিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব কারণে তিনি বীরনিবাস প্রত্যাহার করেছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরতলি সিমাখালী এলাকায় উজির আহমেদ খান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ পাওয়া বীর নিবাস বাড়ি পেয়ে সেই বাড়িতে না থেকে ২ হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। আবার হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শেখ তিজাব উদ্দীন ও নড়াইল পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা দুলাল চন্দ্র শীল অভিযোগে জানিয়েছেন, ৬ মাস আগে তাদের বাড়ির কাজ শুরু হলেও বাড়ির কাজ চলছে ধীরগতিতে। ৬মাসে কেবল লিন্টন পর্যন্ত উঠেছে। ঠিকাদারদের বাড়ি নির্মাণের গতি বাড়াতে তাগাদা দিলেও তারা কর্ণপাত করছেন না।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার নড়াইল সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১১টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে অসহায় ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০টি বিরনিবাস বরাদ্দ দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকটি বাড়িতে ১৪লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি কক্ষ, ২টি বাথরুম, ১টি রান্না ঘর ও ১টি বারান্দা থাকবে।

জানা গেছে, সদরের সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের চুনখোলা গ্রামের হাফিজুল হক, মাইজপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাহারুল ইসলাম, ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিধি গ্রামের মমিনুদ্দীন সিকদার আবেদন করেও বীরনিবাসের বরাদ্দ পায়নি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বর্তমান নড়াইল শহরের স্থায়ী বাসিন্দা অ্যাডভোকেট এস.এ মতিন (ফোন নম্বর- ০১৮১৬৫০১৪২৫) ও মাইজপাড়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের ইকলাস মোল্যা (০১৭৬১-৮০২৭৪৬) সহ আরোও কয়েকজন সচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরনিবাসের বরাদ্দ পেয়েছেন।

বীর নিবাসের মালিক উজির আহমেদ খানের স্ত্রী এ প্রতিনিধিকে ফোনে বলেন, ওই বাড়িতে যাই-আসি, থাকি। ওই বাড়ির পাশের আমার এক আত্মিয় বাড়ি নির্মাণ করবে। সেজন্য ওখানে সাময়ীকভাবে রয়েছে, কোনো ভাড়ার বিনিময়ে নয়। তবে রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালে এ বাড়িতে গেলে বাড়ির বয়স্ক এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন আমি চাকরি করি। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাইনা।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস.এ বাকি (০১৭১৮-৯২৬৪৬৭) বলেন, বীরনিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য থাকেন ৬জন। এর মধ্যে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, নড়াইল-১ ও ২ আসনের দু’এমপির দু’জন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ১জন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিধিধি এবং উপজেলা প্রকৌশলী। এই কমিটি কিভাবে অসহায় ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ রেখে কিভাবে অবস্থাসম্পন্ন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিরা বীরনিবাসের বরাদ্দ পায় তা তার বোধগম্য নয়। ২০১৪ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন না হওয়ায় এসব অনিয়ম শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

বীরনিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামানের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আমরা তার নাম বাদ রাখার পরও তার নাম এসেছিল। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর চুড়ান্তভাবে তার নাম বাদ দিয়ে হাসান ইমাম নামে এক গরীব মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভক্ত করা হয়েছে। তিনি মোটামুটি নিরপেক্ষভাবে বীরনিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সদরে আরও ৫০টি বীর নিবাস পাশ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা এই বীর নিবাস পাবেন। তিনি বীরনিবাস ভাড়া দেওয়ার প্রশ্নে কোনোক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ বীর নিবাসে শুধু মুক্তিযোদ্ধার পরিবারই বসবাস করবে। যারা এসব ঘর ভাড়া দিচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেন।

বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলামের কাছে ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাবার পর কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। আপনি অফিসে এসে সেটি সংগ্রহ করে নেবেন। ফোন নম্বর ইউএনও-এর সিএ ইউনুস (০১৭৩৩-০৭৪৩৫৯) মুক্তিযোদ্ধা উজির আহমেদ-এর স্ত্রী ০১৭৪৭-৬০৬৯০৯ বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব উত্তম সরকার (০১৭৩৯-৪৭৭৭২৯)।