কালিয়ায় উন্নয়নের নামে স্কুলের গাছ কেটে সাবাড়, প্রধান শিক্ষককে ‘ম্যানেজ’ করতে উপঢৌকন!

0
26
কালিয়ায় উন্নয়নের নামে স্কুলের গাছ কেটে সাবাড়, প্রধান শিক্ষককে ‘ম্যানেজ’ করতে উপঢৌকন!
কালিয়ায় উন্নয়নের নামে স্কুলের গাছ কেটে সাবাড়, প্রধান শিক্ষককে ‘ম্যানেজ’ করতে উপঢৌকন!

স্টাফ রিপোর্টার

সড়ক উন্নয়নের নামে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন কালিয়া-নড়াইল সড়কের পাশের গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। গাছগুলোর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। এদিকে, ক্যাম্পাস ঘেষা সড়কের পাশ দিয়ে লাগানো সারি সারি ২৬টি গাছ নির্বিঘেœ কর্তন করতে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামকে সবচেয়ে মূল্যবান দুটি মেহগনি গাছ উপহার বা উপঢৌকন হিসেবে দিয়ে ম্যানেজ করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ সীমানা লাগোয়া সড়কের পাশে রেইনট্রি, বাবলা,কৃষ্ণচূড়া,মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নড়াইল জেলা পরিষদের মালিকানাধীন নড়াইল-কালিয়া সড়কের উন্নয়নের কথা বলে গত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর নড়াইল-কালিয়া সড়কের সীমাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বারইপাড়া খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে থাকা ৫৪৩টির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে জেলা পরিষদ কার্যালয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যশোর জেলার মনিরামপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লুনা এন্টার প্রাইজ কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশে মোট ৫৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৫৪৩টি গাছ কাটার কথা বলা হয়। এই কার্যাদেশের মধ্যে স্কুল সীমানা ঘেষা সড়কের ২৬টি গাছ আওতাভূক্ত ছিল বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেন। সেই দরপত্র মোতাবেক গত সপ্তাহে স্কুল ক্যাম্পাস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের সড়কের বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় ২৪টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কের পাশেই শোভা বর্ধণকারী ও ছায়াদানকারী গাছগুলো কর্তন করায় বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন,পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা উন্নয়ন চাই না।
এদিকে, চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ক্যাম্পাস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের সড়কের গাছ প্রথমে স্কুলের মালিকানা দাবি করে কাটতে বাধার সৃষ্টি করে। পরে আবার গাছ কাটতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট সবচেয়ে মূল্যবান দুটি মেহগনি গাছ উৎকোচ দাবি করেন। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে গালিগালাজ ও নানাভাবে হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম।

গাছ কাটা কাজের তদারক করছেন মো. মালেক মোল্যা নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দাবি করে বলেন,‘দরপত্র মোতাবেক নিয়ম মেনে স্কুল সীমানা ঘেষা সড়কের গাছ কাটতে গেলে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম উৎকোচ দাবি করে বাধা দেয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এমনকি পুলিশ দিয়েও হয়রানি করে। পরে বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করলে ঝামেলা এড়াতে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামকে সবচেয়ে মূল্যবান দুটি মেহগনি গাছ উৎকোচ হিসেবে দেয়া হয়েছে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ক্যাম্পাস সংলগ্ন দক্ষিণ সীমানার ২৪টি গাছ ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। স্কুলের প্রধান ফটকের ডানপাশে ৫ ফুট বেড়ের ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি এবং সাড়ে চার ফুট বেড়ের ১৫ ফুট লম্বা সাইজের আরেকটি মূল্যবান মেহগনি গাছ দন্ডায়মান আছে। প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামকে ম্যানেজ করতে উপঢৌকন হিসেবে মূল্যবান এ মেহগনি গাছ দু’টি দেয়া হয়েছে বলে কাঠ ব্যবসায়ী মালেক মোল্যা নিশ্চিত করেন।

এবিষয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘ স্কুলের গাছ কাটতে প্রথমে আমি বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার আমার কথা শোনেনি। পরে দু’টি গাছ স্কুলের আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য নিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য নয়।’