গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ময়মনসিংহের খামারি মালিকরা। দাম বাড়ায় কম খাদ্য দেয়ায় কমেছে দুধের উৎপাদন। এতে খাদ্য ও শ্রমিক খরচ মিটিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের। খাবারের দাম কমাতে অথবা দুধের দাম বাড়াতে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারী দিচ্ছেন খামারীরা।
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গরুর খামারে ঘুরে জানা যায়, সম্প্রতি গো-খাদ্য ভুসি ও দানাদার খাবারের দাম বাড়ায় খামার মালিকরা দুগ্ধ গাভী ও ষাড় গরুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেক খামারী ভুসি, দানাদার খাবারের পরির্বতে শুকনা খড় ও ঘাস খাওয়াচ্ছেন। এতে কমেছে দুধ উৎপাদন ও ষাড় গরুর ওজন। খাদ্যের দাম না কমলে গরু বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে অনেক। আবার কোন কোন খামারী আন্দোলনে নামার কথাও বলেছেন।
এবিষয়ে কথা হয় জেলার গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের গুঁজিখা এলাকার বিবিএফ এগ্রোভেট ফার্মের মালিক আলিমুদ্দিন আলিম’র সাথে তিনি বলেন আমি প্রথমে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় গরু লালনপালন করে কোরবানীর ঈদে বিক্রি করতাম। কিছুদিন আগে একই জাতের কয়েকটা গাভীও লালনপালন শুরু করেছি। বর্তমানে ১০ টি ষাড়, ৬টি গাভী, বাছুরসহ মোট ১৯ টার গরু আছে।
তিনি বলেন, সামনে কোরবানীর ঈদ, আমার মত অনেক ছোট ছোট অনেক খামারী আছে, যারা দৈনিক বাজার থেকে গো-খাদ্য এনে গরু লালন পালন করে। খাদ্যের দাম বাড়ায় তারাই বেশি বিপদে পড়েছে। ভুসি ৩৫ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। এক মাসে ভূট্টার কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা কেজি হয়েছে। সয়াবিন ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর খাবার অনেক বেশি দিতে হয়। যে কারণে অনেকেই গরুর চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য কিনতে পারছে না। আবার, খরচ কমাতে গো-খাদ্যের পরিবর্তে ঘাস ও খড় দিচ্ছেন অনেকে।এদিকে, খাবারের দাম বাড়ার সাথে সাথে গরুর দামও কমেছে। এখন না পারছি গরু বেচে দিতে, না পারছি গরু লালনপালন করতে।
একজন খামারী হিসাবে আমি মনে করি, যদি এভাবে খাবারের দাম বাড়তে থাকে। আমাদের গরু লালন পালন করা ছেড়ে দিতে হবে। যারা নতুন উদ্যোক্তা আছে, তারাও সরে আসবে। এতে ক্ষতি আমাদেরই হবে। এমতাবস্থায় খামারীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের জরুরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার এবং আপনাদের মাধ্যমেই আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা সরকারের কাছে পৌছে দিতে চাই। যেন সরকার জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
গৌরীপুরের ভবানীপুর এলাকার সুরমা ফিসারীজের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, খামারে ২৩ টি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আছে। এর মধ্যে দুধের গাভী ৬ ও ৯ টি আছে ষাড় গরু। বাকীগুলো ছোট ছোট বাছুর।
হিসাব মতে, ৬ টি গাভীকে দৈনিক ৫ কেজি করে ৩০ কেজি দানাদার (ফিড) এবং ৪ কেজি করে ২৪ কেজি ভুসি খাওয়ানো হতো। এখন খাদ্যের দাম বাড়ায় খাবারের পরিমান কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে প্রায় দৈনিক ৭০ কেজি দুধ দৈনিক উৎপাদন হলেও এখন তা কমে ৫৫ থেকে ৬০ কেজি হয়েছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে দৈনিক খাবারের সাথে দুধ উৎপাদনের মিলিয়ে লোকসানই হচ্ছে। এভাবে খাবারের দাম বাড়তে থাকলে গরুর খামার ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।
এবিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হারুয়া বাসস্টেন্ড এলাকার আরএনএস ডেইরী ফার্মের মালিক শফিকুল ইসলাম সাথে। তিনি বলেন, আমি ফার্মাসিস্টে চাকরী করতাম। ২০১৬ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে গরুর খামার গড়ে তুলি। বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ১৩ টি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আছে।
তিনি বলেন, গত বাজেটে সরকার বলেছিল পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাজেটের পর থেকে গো-খাদ্যের দাম ৭ বার বেড়েছে। এরমাঝে ভুসি গত বছরের জুন মাসে ছিল ১২৯০ টাকা। ১১ মাসের ব্যবধানে হয়েছে ২১৫০ টাকা। সিন্ডিকেটের কারণেই দফায় দফায় এসবের দাম বাড়ছে। কিন্তু সরকার কোন কিছুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। তাই, গো-খাদ্যের দামও সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যেহেতু দেশের সবকিছুর দাম বাড়ছে। সেই অনুযায়ী দুধ ও গরুর দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করে দাম বাড়িযে দিবে, এটাই আশা করছি। যদি তা না করে আমরা আন্দলনে নামব।
তিনি বলেন, এক বছরে যদি ভুসির দাম প্রায় ৮০০ টাকা বাড়তে পারে। সেখানে দুধের দাম দাম হওয়ার কথা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি। কিন্তু, দুধের দাম এক বছরে এক টাকাও বাড়েনি। আমার খামারে ১৩ টি গরুর পিছনে দৈনিক খরচ আছে প্রায় ৪৫০০ টাকা। এর মধ্যে ৫টি গাভী দুধ দেয় ৯০ কেজির মত। ৯০ কেজি দুধের মাঝে মিস্টির দোকানে ৫৫ টাকা কেজি ও চায়ের দোকানে ৬০ কেজি দরে ৫২০০ থেকে ৫৩০০ টাকা বিক্রি হয়।
এরমধ্যে শ্রমিক খরচ, চিকিৎসা খরচ, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এক টাকাও থাকে না। দিন শেষে আরও পকেট থেকে দিতে হয়। যদি গো-খাদ্যের দাম এভাবে বাড়তেই থাকে। তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ মনোরঞ্জন ধর বলেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা কোম্পানী মালিকদের সাথে আলোচনা করছেন। যেভাবে খামারী ও কোম্পানী মালিক কেউই যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সেসব বিষয় নিয়েই আমরা কাজ করছি। তাছাড়া, যে সকল খামারের রেজিস্ট্রেশন আছে। তারা যদি লোনের আবেদন করেন। তাহলে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতার করব।