নড়াইলে কোরবানীর পশুর চাহিদা ২৭২৮২ টি
পশু মোটাতাজা করেছে ৬৪৭৪৮টি
দেশে বন্যার কারনে দু:চিন্তায় ৪৭৯২ খামারি ও কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলে কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই বানিজ্যিকভাবে দেশিয় পদ্ধতিতে জেলার খামারী ও চাষিরা গবাদি পশু মোটাতাজা করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে। গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১২ হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেছে জেলার চাষিরা। এ বছর কোরবানী ঈদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৮ হাজার পশুর যোগান দিবে নড়াইলের স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা। গত বছর ভারত থেকে নড়াইলে কোরবানীর হাটে পশু কম আমদানী করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা লাভও করেছিল বেশি। তাই এই বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে লাভের আশায় জেলাতে কোরবানীর চাহিদার তুলনায় ৩৮ হাজার দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। তবে হঠাৎ করে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ায় দু:চিন্তায় পড়েছে জেলার প্রায় ৫ হাজার খামারি ও কৃষকেরা।
জেলা প্রানি সম্পদ অফিস সুত্রে জানা গেছে, পূর্বে থেকে নড়াইলের কৃষকেরা ও খামারীরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে। এ বছর জেলার চার হাজার সাত শত বিরানব্বই জন খামারী ৬৪ হাজার সাত শত আটচল্লিশটি গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছে। যার মধ্যে ১৮ হাজার ৪শ ৬৭টি দেশি গরু, ৪৬ হাজার ৯৬টি ছাগল এবং ১৮৫টি ভেড়া রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২৯হাজার ৮ শত ৯০টি পশু বেশি মোটাতাজা করা হয়েছে। এ বছর তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
নড়াইল জেলা প্রানি সম্পদ সুত্রে জানাগেছে, এ বছর কোরবানি ঈদে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে সব (গরু, ছাগল ও ভেড়া) মিলিয়ে ২৭হাজার ২শত ৮২টি। জেলার খামারিরা যে পরিমান পশু মোটাতাজা করেছে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৭ হাজার ৪শত ৬৬টি পশু (গরু, ছাগল ও বেড়া) বিভিন্ন জেলায় যোগান দিতে পারবে।
স্থানীয় খামারিরা জানান, গত বছর ভারতীয় গরুর উপস্থিতি স্থানীয় বাজারে কম থাকায় দেশি গরু ও ছাগলের চাহিদা ছিল বেশি। খামারী ও কৃষকেরা লাভ ও করেছিল বেশি। অনেক খামারি গত বারের তুলনায় এবছর আরও বেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করছে। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারন কৃষকেরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুটি করে গরু, ছাগল মোটাতাজা করছে। শেষ সময়ে ঈদ মৌশুমে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ায় দু:চিন্তায় পড়েছে জেলার খামারি ও কৃষকেরা।
লোহাগড়া উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের খামারী মামুন শেখ জানান, গত বছর তার খামারে ৬টি গরু ছিল ঈদের সময় বিক্রি করে লাভও ভাল হয়েছিল। এবছর তিনি ১১টি গরু মোটাতাজা করেছেন। আর এক খামারী রিদয় শেখ বলেন, গত বছর ভারত থেকে গরু কম আসায় কৃষকও খামারীরা লাভবান হয়েছিল সেই আশায় চলতি বছরও তার মত শত শত কৃষক লাভের আশায় গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছে। তার দাবী চলতি বছরে যেন ভারত থেকে কোরবানী উপলখ্যে গরু আমদানী না করা হয়। মরিচপাশা গ্রামের কৃষক মাহাবুল মোল্ল্য বলেন, গতবারের থেকে এবছর তিনি ৪টি পশু বেশি মোটাতাজা করেছেন। বর্তমানে তার খামারে গরু ও ছাগলের সংখ্যা ১৪টি। সমিতি থেকে লোন নিয়ে খামারে খরচ করেছেন তিনি। বন্যার কারনে কোরবানীর চাহিদা কমে গেলে পশুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে আশংকায় তিনি।
বর্তমানে জেলার চাষিরা শেষ সময়ে নিজ নিজ খামারের পশু মোটাতাজা করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। চাষিরা জানান, দেশিয় পদ্ধতিতে তারা গরু মোটাতাজা করেন তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটা গরু ৫৫ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রয় করেছেন এখানকার চাষিরা। চলতি মৌশুমে জেলার খামারীরা মাঝারী সাইজের গরু বেশি মোটাতাজা করেছে। বড় গরুর সংখ্য এ জেলায় খুবই কম।
খামারি ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, জেলায় মোট যে পশু মোটাতাজা করা হয় তার ৬০ ভাগ মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৪০ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে জেলার সাধারন কৃষকেরা। প্রতিটা কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দুটি করে মোটাতাজা করন গরু রয়েছে। আর এসকল গরু কোরবানিকে সামনে রেখে মোটাতাজা করছে তারা।
মৌশুম গরু ব্যাবসায়ী আমিনুর বলেন, প্রতি বছর ঈদের সময় তিনি নড়াইলের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এবছর সিলেট থেকে কোন ব্যবসায়ীই গতকাল (২০ জুন) অবদি কোরবানী পশু নেওয়ার জন্য যোগযোগ করেনি। সিলেটের কয়েক ব্যাবসায়ীর কাছে ফোন দিলে এবছর গরু নিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাকে।
মাইজপাড়া হাটের ইজারাদার বাবুল আক্তার জানান, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চল থেকে বেশি ব্যাবসায়ী আসে নড়াইলে গরু কিনতে। বন্যার কারনে এবছর সিলেট থেকে অন্তত আশি শতাংশ ব্যাবসায়ী নড়াইলে গরু কিনতে আসবেন না বলে ধারনা এই ইজারাদারের।
স্থানীয় মৌশুম গরু ব্যবসায়ী তজিবর জানান, প্রতি বছরে কোরবানীর সময় নড়াইলের হাজার খানেক মৌশুম গরু ব্যবসায়ী স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে বাইরের জেলার থেকে আসা বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। আর সেই গরুগুলো বড় ব্যবসায়ীরা ট্রাকে এবং নৌ পথে নিয়ে ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলাই বিক্রি করে । এতে স্থানীয় কৃষক, খামারী এবং ব্যবসায়ীরাসহ সকলেই লাভবান হয়। করোনার কারনে গত ২/৩ বছর বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাবসায়ীরা। এবছরও বন্যার কারনে ব্যাবসা কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। ঈদকে সামনে রেখে আরও কয়েক জায়গায় অস্থায়ী গরুর হাট বসে। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এসকল হাটে গরু বিক্রয় করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট ৪টি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট, এবং পহরডাঙ্গা গরুরহাট। বর্তমানে এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৪২ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন শেনী পেশার মানুষ)।
নড়াইল জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মারুফ হাসান জানান, ১০/১২ পূর্বে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করত। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু মোটাতাজা করে নড়াইলে চাষিরা। চলতি ঈদ মৌশুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৮ হাজার পশুর (গরু, ছাগল) যোগান দিবে নড়াইলের স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা।