গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র জহিরুল ইসলাম মিঠু (২৬) নামে এক স্থানীয় যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার মোড় এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ মৃত্যুর খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনারদিন রাতে শহরের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় ও প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মিঠু হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অভিযোগ ওঠেছে।
নিহত মিঠু উপজেলার বোকাইনগর গড়পাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি গৌরীপুর সরকারি কলেজের স্নাতক সমাজকর্ম বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মিটুর মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের লোকজন, সহপাঠীসহ সর্বত্রই শোকের মাতম বইছে। এমন অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা কেউ।
গৌরীপুর পাট বাজার এলাকার জুয়েলার্স দোকানের মালিক টিপু সুলতান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে পৌরসভার বাড়িওয়ালা পাড়া এলাকার এলবার্ড বাদলের ছেলে ডেভিড সেন্টু তার দোকানে পুরাতন স্বর্ণ বিক্রি করতে আসেন। এসময় স্বর্ণের দরদাম নিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে সে। খবর পেয়ে প্রতিবেশী নিহত মিঠুর চাচা দেলোয়ার হোসেন ঈশা খাঁ বিষয়টি আপোষ-মিমাংসা করে দিলে ঘটনাস্থল থেকে যান সেন্টু। কিছুক্ষণ পর সেন্টুর ভাই ডেভিড রকি স্বর্ণের দোকানে এসে পুনরায় টিপু সুলতানের সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে দেন। এসময় বাকবিতন্ডা শুনে মিঠু ঘটনাস্থলে এসে দু’জনের মধ্যে বিরোধ থামাতে চাইলে ডেভিড রকির সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার একপর্যায়ে ডেভিড রকি ক্ষিপ্ত হয়ে মিঠুর বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
পাটবাজার এলাকার সোমা ফার্মেসীর মালিক নিহত মিঠুর চাচা দেলোয়ার হোসেন ঈশা খাঁ সাংবাদিকদের জানান- ঘটনারদিন সন্ধ্যায় পাশের স্বর্ণের ব্যবসায়ী টিপু সুলতানের সাথে স্থানীয় বাড়িওয়ালাপাড়ার এলবার্ড বাদলের ছেলে ডেভিড সেন্টুর স্বর্ণের দরদাম নিয়ে প্রথমে কথাকাটি হয়। এসময় বিষয়টি আপোষ-মিমাংসা করে বাসায় চলে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর তিনি খবর পান ভাতিজা মিঠুর বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে গেছে সেন্টুর ভাই ডেভিড রকি।
তিনি আরও জানান- ডেভিড রকি ২০১৮ সালে গৌরীপুর রেলস্টেশন এলাকায় কিশোর কালাচাঁন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. মাহজাবিন সাংবাদিকদের জানান- হাসপাতালে আনার আগেই মিঠুর মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বুকের বাম পাশে একটি জখমের ক্ষত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তার হার্ট ছিদ্র হয়ে গেছে।
জানা গেছে, মিঠুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পৌর শহরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দোকান-পাট বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হাটে আসা লোকজন। ঘটনার পর এদিন রাতে পৌর শহরে মধ্য বাজারে জাহাঙ্গীর আলম, রিজন ও লিটনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। কালিপুর বাজারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সেক্রটারি মরহুম মাসুদুর রহমান শুভ্র’র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। এছাড়া এদিন রাতে বাড়িওয়াপাড়া এলাকায় দু’দফায় ডেভিড রকির বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। মধ্য বাজার এলাকার স্থানীয় কসমেটিকস ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান- মিঠু হত্যাকান্ডের সাথে তার কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। অথচ বিনা অপরাধে হত্যা মামলার সাক্ষী দেয়ার জেরে সুযোগ বুঝে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করেছে তৃতীয় পক্ষের লোকজন।
জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন- তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসদুর রহমান শুভ্র হত্যা মামলার একজন সাক্ষী। ইতিমধ্যে এ মামলায় আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন তিনি। এদিকে আদালতে সাক্ষী দেয়ায় এ মামলার আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে নানা হুমকীর পাশাপাশি হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল। এর জের ধরে মিঠু হত্যাকান্ডের দিন রাতে শুভ্র হত্যা মামলার কতিপয় আসামীর লোকজন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিক্ষস্ত ব্যবসায়ীরা জানান- আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য গৌরীপুরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে খবর দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারনে তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ফাইটার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান- অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে বিক্ষুব্দ জনতা তাদের গাড়িবহর আটকে দেন। পরে পুলিশ প্রহরায় ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে বিক্ষুব্দ জনতা তাদের গাড়িবহরে হামলা করে। এতে গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিসের লিডার হুমায়ূন কবির, ড্রাইভার আলী হোসেন, ফাইটার সদস্য মিন্টু মিয়া ও বাঁধন আহত হন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান- নিহত মিঠুর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য জোর অভিযান চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।