স্টাফ রিপোর্টার
মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে নড়ইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর, জয়পুর, ইতনা, কোটাকোল ইউনিয়নের মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে । মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের ফলে এ সকল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধুমতি নদী ভাঙন রোধের দিকে কোন খেয়াল নেই বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।
জানা যায়,নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙন কবলিত মানুষরা নদীর অপরপাড়ে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ও বুড়াইচ ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে। মধুমতি নদীর তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর, শিয়েরবর গ্রাম, চর আজমপুর, মন্ডলবাগ, চর গোপালপুর খেয়াঘাট, চাকশী, নওখোলা মিয়াপাড়া, চরশালনগর, কাশিপুর, মাকড়াইল ও চর মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর, মল্ডলবাগ এলাকায় বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও পাকা রাস্তা মধুমতি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে।
ভাঙ্গন কবলিত গ্রামের বসবাসকারী লোকজন নদী ভাঙ্গনের ভয়ে তাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। মাকড়াইল গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ ইতোমধ্যে নদীতে ভেঙ্গে গেছে এবং ওই গ্রামে অবস্থিত বাংলালিংকের মোবাইল টাওয়ার অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপজেলার শিয়েরবরের হাট রক্ষার জন্য নদীতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সম্প্রতি নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হাটটি। একই রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, মন্ডলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্ডলবাগ আল-নুর জামে মসজিদ, নওখোলার আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসা, চাকশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদসহ শতাধিক বাড়ীঘর ও ফসলি জমি।
নদী ভাঙ্গনের শিকার মন্ডলবাগ গ্রামের নূর মোহাম্মদ ও কামরুল শেখ বলেন, এ বছর মধুমতি নদী ভেঙ্গে গ্রামের পাকা রাস্তা, বসতবাড়ী গাছ-পালা ও ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া চর খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিন্না মিয়া, সাত্তার মিয়াসহ অনেকে জানান,ওই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী নওখোলা, চরশালনগর, চরকাশিপুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বাড়ী-ঘর সরিয়ে নিয়ে নদীর অপর পাড়ে বসবাস করছে। জরুরীভিত্তিতে শিয়েরবরের হাট ও নদী ভাঙ্গন কবলিত গ্রামগুলো রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।
কয়েক বছর ধরে মধুমতি নদী ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার কাতলাশুর, চরগোপালপুর, চাকশী, চরখড়কদিয়া, চরশালনগর, চরমাকড়াইল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জমি-জমা নদীর অপর পাড়ে চলে যাওয়ায় তারা সেখানে ঘর-বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে।
এ বিষয়ে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বপন কুমার জানান,‘যে সমস্ত জন-গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’