নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে মারধর! আহত ৮!

0
57
নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে মারধর! আহত ৮!
নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে মারধর! আহত ৮!

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকের হলরুমে ব্যাপক হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হলরুমের চেয়ার, টেবিল ও মাইক্রোফোন তচনছ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুর ছয় সমর্থকসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পরও হামলা চলেছে বলে ফেসবুকে ছড়িয়েপড়া ভিডিওচিত্রে এমনটি দেখা গেছে। এ নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে নড়াইল জেলা প্রশাসকের হলরুমে প্রতীক বরাদ্দ শুরু হয়। প্রথমে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড এবং পরে সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতীক বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু হয়।
এ সময় সাধারণ ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী খোকন কুমার সাহা এবং ওবায়দুর রহমান একই তালা প্রতীক দাবি করায় তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী লটারির সিদ্ধান্ত হলে খোকন কুমার সাহা তা প্রত্যাখ্যান করে ওবায়দুর রহমানকে গালমন্দ করে মুখে কিলঘুষি মারলে ওবায়দুরও পাল্টা কিলঘুষি মারেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনার মধ্যেই হলরুমের পূর্বপাশে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুর প্রস্তাবকারী নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার শরিফুল ইসলাম এবং সমর্থনকারী কাশিপুর ইউনিয়নের মেম্বার সৈয়দ নওয়াব আলীকে হঠাৎ করেই মারধর শুরু করে দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ রয়েছে-জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিলয় রায় বাঁধনসহ বিপ্লব, ববি, পারভেজ, জয়, সাদি ছাড়াও আরো কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজনকে মারধর করে আহত করেন। হামলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ছয় সমর্থক আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে প্রস্তাব ও সমর্থনকারীসহ কয়েকজন প্রতীক বরাদ্দের সময় ডিসি অফিসে যান। অফিসের মধ্যে হঠাৎ করে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নোয়াগ্রাম ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম, কাশিপুর ইউপি সদস্য সৈয়দ নওয়াব আলী, নোয়াগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম কালু, শামুকখোলা গ্রামের কামাল কাজী, লাবু কাজী ও জাকির কাজী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আমি মামলা করব।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, আমি আনারস প্রতীক চেয়েছি। অন্যদিকে সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুর সমর্থকরাও আনারস চেয়েছেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাংখিত। ফুটেজ দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটুর সমর্থকদের ওপর হামলার বিষয়ে জেলা রির্টানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সদস্য প্রার্থী ওবায়দুর রহমান ও খোকন কুমার সাহাকে শোকজ করা হবে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনেও জানানো হবে।

জেলা প্রশাসক অসুস্থ থাকায় প্রতীক বরাদ্দের সময় উপস্থিত ছিলেন-অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, সহসভাপতি নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সোহবার হোসেন বিশ্বাস, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপির বাবা জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পর্ষদের সভাপতি অশোক কুমার, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ দলীয় নেতাকর্মী এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা।

এদিকে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস ছাড়াও দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন-লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু এবং আ’লীগ নেতা জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক সুলতান মাহমুদ বিপ্লব।

অন্যদিকে, সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চারজন ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন। এছাড়া সাধারণ ১ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচজন এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন। এক্ষেত্রে সদস্য পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি ১৯জন। আগামি ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।