স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার দেবদুন বাবুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসার চারতলা ভবন নির্মাণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসার সভাপতিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ঠিকাদার। বিষয়টি নড়াগাতী থানা, কালিয়ার ইউএনও ও সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। বুধবার (৯নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে মাদ্রাসার কমিটি ও স্থানীয়রা অনিয়ম ও সময় ক্ষেপনের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিকট উত্থাপন করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে ৪তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন হয় এবং ফ্যাসেলিটিজ ডিপার্টমেন্ট নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে খুলনার একটি স্বনামধন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টার প্রাইজের মালিক মোল্যা কামাল হোসেন সাব-ঠিকাদার হিসেবে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ৭শত ৮১ টাকায় চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। যা ২০২০ সালের গোড়ার দিকে কাজটি শুরু করে। সিডউল অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ সম্পন্নের নির্দেশনা থাকলেও এ পর্যন্ত ২তলার ছাদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিডিউল অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার পক্ষের নিকট থেকে দাবী করা হয়েছে, মালামাল চুরি ও মাদ্রাসার সভাপতি চাঁদা দাবী করে আসছেন।এবিষয় স্থানীয়রা মন্তব্য করেন,মালামাল চুরি বা চাঁদাদাবীর বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের গোড়ার দিকে বাবুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসার ৪তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সিডিউল অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ওই সময় ভবনের পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। ফান্ডে টাকার স্বল্পতা ও করোনার দোহাই দিয়ে ঠিকাদার দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখেন । কার্য ক্ষমতা লোপ পাওয়া মরিচা পড়া রড ও পরিত্যাক্ত ভবনের ইটের শুড়কি দিয়ে ঢালাই দিতে দেখা গেছে। এতে ওই ভবনটি হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ।
মাদ্রাসার সুপার মো.রকিবুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট হেমায়েত মোল্যা, জাহাঙ্গীর কাজী, দিদার কাজী বলেন, সভাপতিকে গালমন্দ ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় প্রতিবাদে মাদ্রাসায় সোমবার (৭ নভেম্বর)সকালে ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় গন্যমান্যদের নিয়ে মিটিং শুরু হয়। এ সময় ঠিকাদার কামাল মোল্যা তার লোকজন নিয়ে বিনা দাওয়াতে মিটিংয়ের মধ্যে প্রবেশ করেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মাদ্রাসার সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবন ঠিকাদার কিনে নিয়ে ওই নষ্ট ইটের শুড়কি দিয়ে কাজ করার কারণে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছেন। এ কথা বলার কারণে ফোনে মা-বাপ তুলে গালমন্দ ও হত্যার হুমকি দিয়েছে ঠিকাদার কামল মোল্যা ও তার সহযোগী শহীদুল। কামাল মোল্যা মিথ্যাচার করছে,আমি চাঁদা চেয়েছি ও মোটরসাইকেল ভেঙেছি একথা সঠিক নয়। ওই ঠিকাদারের অনিয়মের কারণে আগেও কয়েকবার যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি,এখনও করছি।
অভিযুক্ত ঠিকাদার কামাল মোল্যা বলেন,আমি হত্যার হুমকি দেই নাই। সভাপতিকে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় তিনি কাজে বাঁধার সৃষ্টি ও লেবারদের গালমন্দ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে কাজের সাইডে গেলে তার লোকজন আমার মোটরসাইকেলটি ভেঙে দেয়। বিষয়টি নড়াগাতী থানা ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অবহিত করা হয়েছে।
নড়াইলের ফ্যাসেলিটিজ বিভাগের সাব-এ্যাসিষ্টান্ট ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান বলেন, শিগগিরই সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখা হবে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে দেওয়া হবে না। ভাল মানের নির্মাণ সামগ্রী না দিলে ঢালাই বন্ধ রাখা হবে।