জমি নিয়ে বিরোধ এর জেরে এক পরিবারের সাথে, মিথ্যা মামলায় জড়ালেন ১৬ পরিবারকে!

0
7
বাঘারপাড়ায় একদিনের ব্যবধানে একই ইউনিয়নের তিন বাড়িতে ডাকাতি সংগঠিত
বাঘারপাড়া

বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের বাঘারপাড়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৬ পরিবারকে হয়রাণির অভিযোগ উঠেছে। জমি নিয়ে বিরোধ এক পরিবারের সাথে অথচ মামলায় জড়ানো হয়েছে ১৬ পরিবারের ২১ সদস্যকে।

দিনমজুর, স্কুল ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য, ইজিবাইক-অটোভ্যান চালক কেউই বাদ যায়নি মামলার হাত থেকে। ঠুনকো কোনো ঘটনা ঘটলেই টুকে দেন মামলা। এ অভিযোগ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের মৃত তবিবর মোল্যার ছেলে শামছুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু শামছুর রহমান নয় তার গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দখল, মারামারি, সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন মানুষের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করাই তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার (০৬ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের বাসিন্দা টিপু সুলতান তাদের পৈত্রিক জমি বন্টনের জন্য সার্ভেয়ারের মাধ্যমে মাপজোক করাচ্ছিলেন। মাপজোকের শেষ পর্যায়ে শামছুর রহমান ও টিপু সুলতান পরিবারকে যার যার জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর টিপু সুলতানের ভাই মিজানুর রহমান সীমানা পিলার বসাতে যায়। এসময় শামছুর রহমানের ভাই ইলিয়াস, রাজ্জাক, আসাদ ও তাদের ছেলেসহ ১৫-২০ জন ধারালো দা, বাঁশের লাঠি ও লোহার রডসহ তাঁর উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে তাঁর মাথায় ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ইলিয়াস। এসময় তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে প্রতিবেশি ইসমাইল হোসেনসহ ৬ জন গুরুতর আহত হন। এঘটনায় ওই দিন রাতে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন টিপু সুলতান। ঘটনার ৪ দিন পর ২১ জনের নাম উল্লেখ ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত করে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন শামছুর রহমান। মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারা অধিকাংশই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আনিচুর রহমান ও খালেক শ্রমিক হিসেবে মাঠে কাজ করছিলেন, মহাসিন ইজিবাইক ও হৃদয় অটোভ্যান চালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তারিন দশম শ্রেণির টেষ্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলেন রায়পুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে এমন আরো অনেকে ঘটনাস্থলে না থেকেও আসামী হয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য জামির হোসেন ও স্থানীয় প্রতিবেশি আজাহার আলী থানা পুলিশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকেও তারাও আসামী হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে যেয়ে প্রতিবেশী ১৬ পরিবারের সদস্যদের নাম জুড়ে দিয়েছেন বাদী শামছুর রহমান।

শনিবার সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামছুর গংদের ভয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে সাহস পায় না। জমি দখল, মারামারি, সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিরোধপূর্ণ জমি যেখানে আছে, শামছুর গং সেখানেই আছে। কয়েক বছর আগে ইলিয়াস ও শামছুর সহ তারা ৫ ভাই মিলে তাদের আপন মামাতো ভাই আব্দুল হাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালত তাদের ৫ ভাইকেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে খালাশ পায়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পদসাধু নামে এক সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে তার জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। ইলিয়াস পরিবারের পাশাপাশি তার আত্মীয় স্বজনও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছেন।

ইলিয়াসের শ্যালক রামকান্তপুর গ্রামের ওয়াদুদ শেখেরবাতান গ্রামের তরিকুল ইসলাম নামে এক মটরসাইকেল চালককে হত্যা করেন। এঘটনায় ওয়াদুদ দীর্ঘদিন কারাভোগও করেন।

বাঘারপাড়া থানায় করা মামলার বাদী টিপু সুলতান জানিয়েছেন, শামছুর-ইলিয়াসদের সাথে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ আমার পরিবারের। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মাপজোকের মাধ্যমে জমি বন্টন করে দেন সার্ভেয়ার। ইলিয়াসরা জমি বন্টন মেনেও নিয়েছিলেন। আমাদের অংশে আমার ভাই সীমানা পিলার বসাতে গেলে অতর্কিত হামলা চালায় ইলিয়াস পরিবার। এঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি। কিন্তু চার দিন পরে জানতে পারি তারা আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি মামলায় আমার প্রতিবেশী, স্কুল ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যসহ ২১ জনের নাম দেওয়া হয়েছে।

বিরোধপূর্ণ জমি বন্টনে যশোরের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম হোসেন জানান, স্থানীয় চারজন সার্ভেয়ার ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দু’পক্ষকে জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। দু’পক্ষ সীমানা বুঝে নেয়। শুনেছি পরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে করা মামলার বাদী শামছুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।