স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কালিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের চলমান বিরোধের জেরে ধারালো অস্ত্রের কোপে সাফায়েত শেখ ওরফে সারাফ শেখ (৪২) নামে একজনের বাম হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিপক্ষরা। একই সঙ্গে ডান হাতের কবজি ও দুই পা কেটে শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করেছে হামলাকারীরা। এ সময় সারাফের সহোদর ফুল মিয়া শেখসহ (৫০),শামীম শেখ (২৭), লোকমান হোসেন (৩৫) ও পলাশ শেখ (২৫) নামে আরও চারজনকে কুপিয়ে মারাতœক জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে চাঁচুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌরুত মোল্যাকে আটক করেছে পুলিশ।
আহতরা উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হাতের কবজি ও পা বিচ্ছিন্ন হওয়া ওই যুবক উপজেলার চাঁচুড়ী বাজারের একটি পরিবহন কাউন্টাররম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি চন্দ্রপুর গ্রামের মরহুম ছলেমান শেখের ছেলে। আহত সারাফ শেখকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ও গুরুতর আহত শামীম শেখকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যদেরকে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চন্দ্রপুর গ্রামের মহাসীন মোল্যা ও রবিউল মোল্যা গ্রুপের সঙ্গে আতাউর মৃধা ও লায়েক শেখ গ্রুপের বিরোধ চলছিল। দীর্ঘদিনের বিবাদের জেরে শনিবার সকাল সাতটার দিকে আতাউর মৃধা গ্রুপের সারাফ শেখ প্রতিদিনের মতো তার কর্মস্থল চাঁচুড়ী বাজারের ঈগল পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে যায়। এ সময় আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষ গ্রুপের মহাসীন মোল্যা ও রবিউল মোল্যার নেতৃত্বে রকিবুল মোল্যা,বিপ্লব মোল্যাসহ ৪০-৫০ জনের একদল সন্ত্রাসী রাম দা, ছ্যান দা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সারাফের ওপর হামলা চালায়। তখন সারাফ শেখ প্রাণ ভয়ে দৌঁড়ে নিজ গ্রামের আজেয়ার মোল্যার বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে ওই বাড়ির সিড়ির সামনেই হামলাকারীরা তাকে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাতের কবজি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এছাড়া ডান হাতের কবজি ও দুই পা কেটে শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। এ সময় হামলাকারীরা সারাফের সহোদরসহ একই গ্রুপের আরও চারজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ তাসমীম আলম বলেন,‘অন্য একটি মামলায় তৌরুত মোল্যা নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
একই বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ওই ইউনিয়নটিতে (পুরুলিয়া) আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। এরই জের ধরে শনিবার এক পক্ষ ওপর পক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’