বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি
মরণ ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মকে বাঁচাতে হৃদয়বান ব্যক্তি সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইলেন বাবা। জুবায়ের আহমেদ (১৪) যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলাবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী। ১৩ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে সে। যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে প্রতি মাসে দুইবার অন্যের রক্ত নেওয়া লাগে। শরীরে রক্ত না দিলে সে শয্যাশায়ী থাকে। এরজন্য প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও ঔষধ সামগ্রী কিনতে আরও ১১ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় প্রতিমাসে।
ঢাকা থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকদের মতে, বোন মেরু প্রতিস্থাপন করলে জুবায়েরের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা আছে। এ কাজে ব্যয় হবে ৩০লক্ষ টাকা। বেকার ও অসুস্থ বাবা এত টাকা যোগাড় করবেন কিভাবে!
জুবায়ের উপজেলার ক্ষেত্রপালা গ্রামের মামুন মোস্তাফী জয়ের ছোট ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট জুবায়ের। জুবায়েরের বয়স যখন ৯ মাস তখন মরনব্যাধি থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে তার শরীরে। সেই থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসছে জুবায়ের। রক্ত দিতে দেরী হলেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে জুবায়ের। এসময় জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় পড়তে হয় তাকে। জুবায়েরের বাবা একজন চায়ের দোকানি। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৪শতক জমি আছে তাঁর। সেখানে বোনের দেওয়া ঘরে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। বড় ছেলে হৃদয় আহমেদ নারিকেলাবড়িয়া ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। চিকিৎসাসহ লেখাপড়ার খরচ মেটাতে ধার-দেনা ও ভাই বোনের সয়াহতা নিতে হয় প্রতিমাসে।
মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের এখন ঢাকা থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জুবায়েরের বাবা মামুন মোস্তাফী জয় বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। একসময় তিনি (বাবা আব্দুস সালাম) যশোর প্রেসক্লাবের সহ সভাপতির পদে ছিলেন। মাতৃভূমি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে ৪শতক জমি পাই। সেটাই আমার একমাত্র সম্বল। তিনি আরও বলেন, একসময় আমি ঢাকায় ব্যবসা করতাম। পুঁজিও ভালো জমে। লোভে পড়ে একটি বিদেশী কোম্পানিতে সে পুঁজি বিনিয়োগ করার কয়েক মাসের মধ্যে তারা উধাও হয়ে যায়। আমি সবকিছু হারাই। এরপর যশোরে ফিরে একটা চায়ের দোকান দেই। কিন্তু নিজের অসুস্থতার কারনে গত দুই বছর গ্রামের বাড়িতে বেকার জীবন কাটাচ্ছি। তিনি বলতে থাকেন, ছেলেকে নিয়ে প্রতি মাসে ঢাকায় যেয়ে রক্ত দিতে হয়। রক্ত দিতে না পারলে ছেলের দিকে আমি তাকাতে পারিনা। নিজেকে অথর্ব মনে হয়।
ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকরা বলেছেন, বোন মেরু প্রতিস্থাপন বা বিদেশে (ভারতে বা সিঙ্গাপুরে) চিকিৎসা করাতে পারলে ছেলে পরোপুরি সুস্থ হয়ে যেতে পারে। যার জন্য ৩০ থেকে ৩৫লক্ষ টাকার দরকার’। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মামুন মোস্তাফী জয়। কান্নাজড়িত কন্ঠে ছেলের জীবন ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন তিনি। এর পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহায়তাও চাইলেন তিনি।
এ বিষয়ে নারিকেলবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদ হোসেন জানান,‘ জুবায়ের খুব মেধাবী। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর ছেলেটির স্বাভাবিক গ্রোথ কমে গেছে। এজন্য উচ্চতায় সে বেশ ছোট। ওদের অর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। পরিবার থেকে জুবায়েরের চিকিৎসা ব্যায় মেটানো সম্ভব নয়। ভালো চিকিৎসা পেলে ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠবে’।
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা জানান, জুবায়ের আহমেদের দাদা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারটি অত্যন্ত গরীব। জুবায়েরের চিকিৎসা ব্যায় মেটানো ওই পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়’। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী জুবায়েরকে নিচের হিসাবের (বাবা মামুন মোস্তাফী জয়ের নম্বর) মাধ্যমে সহায়তাা করা যাবে। হিসাব নম্বর-২৩০৩৬০১০০৭০৬৯, সোনালী ব্যংক, বাঘারপাড়া শাখা ও বিকাশ নম্বর- ০১৭৯৩-৩৯৪১২৪ এবং নগদ হিসাব নম্বর-০১৭৯৩-৩৯৪১০৬।