স্টাফ রিপোর্টার
মোঃ আলী কাওছার সুমন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের সহকারী পরিচালক (মহাপরিচালকের দপ্তরে সংযুক্ত) পদে কর্মরত। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে পরিচয় দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব। এই উপ-সচিব পরিচয়ে তিনি নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে টেন্ডারকৃত একটি সরকারী সড়কের ইট তুলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছেন। এর ফলে পৌরসভার ৫টি পরিবার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পৌরকাউন্সিলর, সাংবাদিকসহ সকলের অনুরোধেও মন গলেনি ওই উপ-সচিব পরিচয়দানকারী সহকারী পরিচালকের। অবরুদ্ধ একটি পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করার একদিন পর পুনরায় একদল ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে ফের কাজ শুরু করেছেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে উপ-সচিব পরিচয়দানকারী মোঃ আলীকাওছার সুমনের দাপটে এলাকার মানুষ কুকড়ে গেছেন। তার এ দাপটে পাওয়ার ব্যাংক হিসেবে কাজ করছেন তার স্ত্রী মুকসুদপুর উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত নাজনীন জাহান।
সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে,বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সহকারী পরিচালক মো: আলী কাউছার সুমন গত ১ মে সকালে লোহাগড়া পৌর এলাকার লক্ষীপাশা আদর্শপাড়ার ৭নং ওয়ার্ডে তার স্ত্রী সাব-রেজিস্ট্রার নাজনীন জাহান’র নামীয় জমিতে সিমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীর নির্মাণ কালে পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত প্রায় ২’শ ফুট ইটের ফ্লাটসলিং তুলে অন্তত ৫টি পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। প্রাচীর নির্মাণ ও ইটেরসলিং তুলে ফেলার বিষয়ে পৌরসভা থেকে কোন প্রকার অনুমতি নেয়া হয়নি। রাস্তা বন্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে তিনি নিজেকে ৩৪ বিসিএসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-সচিব ও তার স্ত্রী নাজনীন জাহান সাব-রেজিস্টারের পরিচয় দিয়ে অবরুদ্ধ পরিবারের নামে মামলার-হামলার ভয়ভীতি দেখান। তার এমন পরিচয় পেয়ে তটস্থ হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় সাংবাদিক ও আশে-পাশের মানুষজনের কাছেও তিনি উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখান। পরেবি টিআরসি’র ওয়েবসাইটের তথ্যে দেখা যায়, তিনি উপ-সচিব নন, তিনি উপ-সহকারী পরিচালক পদে ঢুকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে (সংযুক্ত রয়েছেন মহাপরিচালকের কার্যালয়ে) কাজ করছেন এলএলশাখায়। পৌরসভার অনুমতি ব্যতীত ও পৌর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সরকারী ইট তুলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় পৌর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অবরুদ্ধ পরিবারের মালিক শেখ সিরাজনূর বলেন, ২০০৫ সালে আমি ৯ শতক জমি কিনে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি।আমার এক সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও এক সন্তান খুলনার সরকারী ব্রজলাল কলেজে সম্মান শ্রেনিতে পড়ালেখা করছে। পৌরসভা থেকে ওই বছরেই আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ইটের সলিং করে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে মোঃ আলী কাওছার সুমন নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে সড়কের ইট তুলে আমার বাড়ী থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করতে প্রাচীর নির্মাণ করছে। তাকে অনেক অনুরোধ করেও কাজ হচ্ছেনা। উল্টো আমার ও আমার শ্যালকের নামে লোহাগড়া থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। অবরুদ্ধ মো: জাকারিয়া শেখ বলেন, উপ-সচিব ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তার জমির ভিতরে ২ থেকে ৩ ফুট প্রবেশ করে প্রাচীর নির্মাণ করছেন। এতে তিনি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাই লোহাগড়া থানা ও লোহাগড়া পৌরসভায় পৃথক দু’টি অভিযোগ দিয়েছেন।
লোহাগড়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ শাহাজাহান সিরাজ বিদ্যুত এর কাছে পৌরসভার রাস্তার সরকারী ইট তুলে ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ কাজে ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তাটি প্রায় ১২থেকে ১৩ বছর আগে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার সৈয়দ আব্দুস সবুর করেছিলেন। রাস্তার ইট তুলে নেয়ার বিষয়ে মেয়রকে তিনি অবহিত করেছেন বলে জানান। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য মোঃ আলী কাওছার সুমন এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া য়ায়নি।
লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র সৈয়দ মসিয়ুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে পৌরকাউন্সিলর ও ভূক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাস্তার ইট অপসারণ ও কয়েকটি পরিবার অবরুদ্ধের বিষয়ে অবহিত হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পৌরবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।