লোহাগড়া প্রতিনিধি (নড়াইল)
প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নড়াইলের লোহাগড়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের লাশ গুম করার জন্য প্রথমে ডুবা পুকুরের কচুরি পানার তলে পরে সেখান থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি বাগানের মধ্যে ফেলে রেখে এসিড দিয়ে লাশের মুখমন্ডল পুড়িয়ে ঝলশে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে প্রেমিকা ইয়াসমিনসহ তার পিতা-মাতা ও ভাইকে আসামী করে লোহাগড়া থানায় বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত ৪ জনকেই আটক করে শুক্রবার কারাগারে পাঠিয়েছে । মূল আসামি সবুর শেখ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েেেছ। শুক্রবার বিকালে নড়াইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামের কৃষক ইকরাম শেখের ছেলে স্থানীয় স্বরসতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ (১৬) সাথে একই গ্রামের টিউবয়েল মিস্ত্রি সবুর শেখের মেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খানম(১৫) মধ্যে প্রেমর সম্পর্ক হয় । উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হত এবং মেয়ের বাড়ীতে প্রায় সিরাজ যাতায়াত করত। বিষয়টি ইয়াসমিনের মা শাহীনা বেগম জানলেও বাদ সাধে পিতা সবুর শেখ ও ভাই জাহিদুল ইসলাম। লোহাগড়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন হত্যার রহস্য উন্মোচনে সবুরের বরাদ দিয়ে জানান, সিরাজ গত শনিবার (৬মে) রাতে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইয়াসমিনদের বাড়ী যায়। বাড়ীতে দেখে সবুর শেখ সিরাজকে লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিরাজ অন্ধ্যকারে মেহগিনি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। এ সময় সবুরের কাছে থাকা কাঠের কোদালের আছাড়ি দিয়ে সিরাজের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়ে মারা যায় । সেখান থেকে সিরাজের মরদেহ টেনে হেচড়ে সবুর তার বাড়ীর পাশে পুকুরের কচুরির পানার তলে লুকিয়ে রাখে। সিরাজ মারা গেছে কিনা তা সন্দেহ করে পরের দিন(৭মে) রাতে সবুর গরু জবাই করা ছোরা দিয়ে সিরাজের গলায় ও মাথায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে । সেখান থেকে ছেলে জাহিদকে সাথে নিয়ে সবুর নিহতের মরদেহ কাধে করে ফাঁকা মাঠের মধ্য দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার হেটে দক্ষিণ লংকারচর গ্রামে শওকত হোসেন মিরুর আম ও মেহেগিনি বাগানের মধ্যে ফেলে রাখে । কেউ যাতে লাশ সনাক্ত করতে না পারে সেকারনে ব এসিড দিয়ে সিরাজের মুখমন্ডল ও মাথা পুড়িয়ে ঝলশে দেয় সবুর ও ছেলে জাহিদ।
এদিকে সিরাজ নিখোজের তিনদিন অতিবাহিত হলেও বাড়ীতে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করে না পেয়ে লোহাগড়া থানায় মোবাইলে কল আসা দুটি নাম্বার উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে।পুলিশ উক্ত মোবাইল নাম্বার দুটি ট্রাকিং করে তা প্রেমিক ইয়াসমিনের ও পিতা সবুর ব্যবহার করে । এর সূত্র ধরে সিরাজকে উদ্ধারের চেষ্টা করে পুলিশ । কিন্তু বিধি বাম, চার দিন পর বুধবার দুপুরে দক্ষিণ লংকারচর গ্রামের শওকত হোসেন মিরুর বাগান থেকে পুলিশ সিরাজের মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে।ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ওইদিন সিরাজের প্রেমিকা ইয়াসমিনসহ পিতা সবুর শেখ,মা শাহীনা বেগম,ভাই জাহিদুল শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা ইকরাম শেখ বাদী হয়ে আটককৃত ৪ জন উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামী করে বৃহস্পতিবার রাতে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারে অভিযুক্ত আসামী চর দৌলতপুর গ্রামের ইয়াসমীনের পিতা সবুর শেখ,মা শাহীনা বেগম,ভাই জাহিদুল শেখ ও ইয়াসমিন খানমকে শুক্রবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানান এস আই মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকালে নড়াইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রধান আসামি সবুর শেখ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি কিভাবে হত্যা করেছেন এবং লাশ গুম করার জন্য এসিড দিয়ে নিহতের শরীর ঝলশে দিয়েছে তা আদালতে বনর্না দিয়েছেন। আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছোরা, কোদালের আছাড়ি, রক্তমাখা পলিথিন ও একটি টি-শার্ট উদ্ধার করেছে।