আবদুস ছালাম খান
পদ্মাসেতু ও কালনার মধুমতি সেতু চালু হওয়ার পর লোহাগড়া উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্যাদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে রফতানি ও নড়াইল-লোহাগড়ায় কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপনের উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক পথের পাশাপাশি পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে এ সম্ভাবনা আরো অবারিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এ নতুন দিগন্ত উন্মেুাচিত হওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রায় ইতমধ্যেই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে লোহাগড়া থেকে প্রতিদিন বড় বড় ট্রাক ভর্ত্তি উচ্ছে, পটল, ডাটা শাক, লাল শাক, খিরাইসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত কৃষি পণ্যাদি যেমন তালের শাস, ডাব, পানিকচু, আমড়া, কামরাঙ্গা, বাতাবি লেবু (ছোলম). রুম্বি কলা, বিচে কলা (দয়া কলা) রাজধানীর মোকামে চলে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন পরেই যাবে লিচু, আশফল, জামরুল, কাঠালসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অন্যান্য কৃষি পণ্যাদি। লোহাগড়া উপজেলা বরাবরই একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। উপজেলার অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী অর্থ্যাৎ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। বলতে গেলে উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ লোকই কোন না কোনভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত এসব অপ্রচলিত কৃষি ফসলাদি উপযুক্ত মূল্যে স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় এতদিন কৃষকেরা এসব ফসলের তেমন পরিচর্যা করতো না বা বাজার জাত করতো না। ফলে রাজধানীর বাজারে বিপুল চাহিদা থাকা সত্বেও এসব মূল্যবান অপ্রচলিত কৃষি পণ্যাদি নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে পদ্মাসেতু ও কালনার মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় প্রতিদিন একাধিক ট্রাক ভর্ত্তি এসব কৃষি পন্যাদি ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। লোহাগড়া থেকে ঢাকায় কলা ও আমড়া ইত্যাদি পাঠানো মঙ্গলহাটা গ্রামের আতাহার আলী জানান, ‘মূল রাস্তার সাথের সংযোগ সড়ক গুলি অপ্রশস্ত এবং ট্রাক চলাচলের অনুপযোগি। মালবাহী ট্রাক যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদন এলাকায় গিয়ে সরাসরি ট্রাকে মালামাল লোড দেয়া যায় না। প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহস্তের বাড়ি বা জমিতে গিয়ে এসব ফল-ফসল কিনে ভ্যানে করে সদরে এনে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকায় পাঠাই। গ্রামের মধ্যে ট্রাক নেয়া যায় না। তাই ভ্যানে করে সদরে নিয়ে আসি। তাতে ক্যারিং করচ বেশি পড়ে যায়। ঢাকা ছাড়াও নতুন মোকামে মাল পাঠানো যায় কিন্তু টাকার নিশ্চয়তা পাই না। অন্য মোকামে মাল পাঠালে যদি টাকা মাইর যায়’।
লোহাগড়ায় উৎপাদিত কৃষি পণ্যাদি রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে অপ্রচলিত কৃষি পণ্যাদি উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারী কৃষকদের স্বল্পসুদে কৃষিঋণ অথবা ভর্তুকী সহায়তা দিতে হবে এবং রফতানি সুুবিধার জন্য গ্রামে যাওয়ার রাস্তাগুলি প্রশস্তকরণ ও রাস্তার উন্নয়ণ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচের সাথে বাজারদরের সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। লোহাগড়ার কৃষি পণ্যাদি রাজধানী সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রফতানির সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় নড়াইল-লোহাগড়ায় কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য কালনায় মধুমিত নদী তীরের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া নড়াইলÑলোহাগড়ায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যায়। উল্লেখ্য ঢাকা-বেনাপোল মহাসড়ক সংলগ্ন কালনার মধুমতি সেতুর লিংক রোডে লোহাগড়ার অবস্থান। সমুদ্র বন্দরের সাথেও লোহাগড়ার লিংক রোড রয়েছে। কৃষি শিল্প স্থাপনে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনে সড়ক-মহাসড়কের পার্শ্বে প্রয়োজনীয় জমি রয়েছে। তাছাড়া লোহাগড়া থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১২০ কিলোমিটার।