স্টাফ রিপোর্টার
‘চারুকুঠি’ শিশুদের একটা সংগঠন। আর এই সংগঠনের কর্ণধার হলো বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের হাতে গড়া শিষ্য প্রচার বিমুখ ধর্মদাস মল্লিক (যিনি নড়াইলে চিত্রশিল্পী ডি ডি মল্লিক নামে পরিচিত)। তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজের অর্থায়নে তার গুরুর ”শিশু স্বর্গের” মত নড়াইলের শিমুলিয়া গ্রামে তৈরি করেছেন শিশুদের নিয়ে সংগঠ’ন ‘চারুকুঠি’।
‘চারুকুঠি এর শিশু সদস্যদের তিনি নাম দিয়েছেন ‘চারুযোদ্ধা।’ তাদের তিনি বিনা মূল্যে ছবি আঁকা শেখান, শেখান কি করে অর্গানিক শস্য উৎপাদন করতে হয়, শেখান কি করে পরিবেশ নষ্ট করা পলিথিন ও বর্জ্য দিয়ে ভাস্কর্য বানানো যায়, আরও শেখান কি করে মাটি নিয়ে কাজ করতে হয় , গাছ লাগাতে হয়, পুরনো ফেলে দেওয়া কাপড়কে শৈল্পিক আঁচড়ে কি করে নতুন করা যায়, গাছের বাকলসহ প্রাকৃতিক যে কোন উপাদান কি করে শিল্পে পরিণত করতে হয়। গুরু হিসেবে তিনি শিশুদের যে শিক্ষা দেন তা প্রচলিত শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি শিশুদের মাটির ঘ্রাণ চেনান, ভেজা মাটিতে খালি পায়ে হাঁটতে শেখান।
কিন্তু সম্পূর্ণ অবৈতনিক ও নিজের অর্থায়নে হওয়ায় তার একার পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না রং তুলির যোগান দেওয়া। তাই যা থাকে তা সম্বল করেই চলে শিশুদের আঁকাবুকি।
কিছুদিন আগে নড়াইল এর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক আমাতুল মোর্শেদা একজন আসামিকে সংশোধিত হওয়ার বিভিন্ন শর্তে সাজা দেওয়ার পরিবর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে প্রবেশনে প্রেরণ করেন। অন্যান্য আরো অনেক ভালো শর্তের সাথে একটি শর্ত আদালত জুড়ে দেন সেটি হল আসামি নিজেকে ‘চারুকুঠি ‘ নামক অবৈতনিক সংগঠনের বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করবেন এবং শিশুদের কাছ থেকে শৈল্পিক বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে নিজের মানসিক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন।
শর্ত মোতাবেক আসামি নিজেকে চারুযোদ্ধাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে তাদের রং তুলি ও ছবি আঁকার কাগজ কিনে দিয়েছেন, নিজেও ছবি আঁকা শেখার চেষ্টা করছেন। আদালতের রায়ের এই ধরনের গঠনমূলক শর্তে হাসি ফুটেছে শিশুদের মুখে। শিশুদের হাসি দেখে হাসি ফুটেছে প্রবেশনে প্রেরণ করা আসামির মুখেও। আসামি পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী ও সাংবাদিক মোঃ তরিকুজ্জামান লিটু প্রতিবেদককে জানান এই ধরনের অভিনব শর্ত মানুষকে ভালো কাজ করার প্রেরণা দেয়, সমাজের উন্নয়ন ঘটায়।