কঙ্কা কণিষ্কা
জি-২০ সম্মেলন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও তার অনুসারীরা নানা নেতিবাচক মন্তব্য করা শুরু করেছেন। এনিয়ে বিশিষ্ট কূটনীতিকরাই বলছেন এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই শিষ্ঠাচার বর্হিভূত। তারা আরও বলেন এই সম্মেলনে যা যা হয়েছে তা যেকোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে খুবই স্বাভাবিক। এসব যায়গায় প্রত্যেক দেশের নেতা অন্য দেশের নেতার সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন। যার যার পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী কৌশলগত আলোচনা করেন। মত বিনিময় করেন। বন্ধুত্ব করেন। কোন কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কে সমস্যা হলে সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে একটা সমাধানের দিকে যায়। এভাবেই সভ্যতা এগোয়।
সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন এর আয়োজক এবং বিশিষ্ট কূটনীতিক হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। তিনি বলছিলেন, এবার সম্মেলনে বাংলাদেশকে যুক্ত করে তাদের আন্তর্জাতিক নীতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক দেশের ক্ষেত্রে তাই হয়। কেউ না কেউ তাকে প্রথমবারের মত সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। তাই সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে এই সম্মেলনে গেস্ট কান্ট্রির মর্যাদা দেয়া হলো।
সুযোগ পেয়ে প্রতিটি দেশই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এগিয়ে যায়। পাঠক আসুন দেখা যাক, বাংলাদেশ সেই সুযোগ কতটুকু কাজে লাগাতে পারলো? আমরা যদি শুরু থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচি লক্ষ্য করি। তাহলেই দেখবেন একটা বিশ্লেষণী চিত্র পেয়ে যাবেন। এটি ধরে আমরা একটি মূল্যায়নও পেতে পারি নিশ্চই।
নরেন্দ্র মোদীর পঞ্চবটী কূটনীতি
শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি বাসভবন পঞ্চবটীতে অভ্যর্থনা জানানো হয়। কূটনীতি বিশ্লেষকরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, এই অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বকে এক ভিন্ন রকম বার্তা দিয়েছে ভারত। প্রথমত বোঝানো হয়েছে, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত। দ্বিতীয়ত, ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ খুবই সময়োপযোগী। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে ভারত সমর্থন করে। শান্তি রক্ষায় শেখ হাসিনা সরকারের বিকল্প নেই। তৃতীয়ত প্রধানমন্ত্রীর নিজের বাসভবনে শেখ হাসিনাকে আতিথিয়তার মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ সবসময় ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
অতিথি দেশ হয়েও বক্তব্য প্রদান
অতিথি দেশ হয়েও জি-২০’র মত একটি বৈশ্বিক সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে বিশ্বে সংহতি জোরদার এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং কৃষিসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাদের বাজার খোলা রেখে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি তিনি নারীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে বিশ্বনেতাদের আহবান জানান। এমন একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে শেখ হাসিনার এই সময়োপযোগী আহবান সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
বাইডেন-হাসিনা কুশল বিনিময়
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিভিন্ন ইস্যুতে অযাচিত হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতিও দেয়া হচ্ছে। ঠিক এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেখা যায়, তিনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে শেখ হাসিনার সাথে কুশল বিনিময় করছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘ ১৫ মিনিট আলোচনা হয় জো বাইডেন ও শেখ হাসিনার। এসময় বাইডেন জানান, বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির কথা তিনি জানেন।
কথা বলতে বলতে শেখ হাসিনার সাথে সেলফি বন্দি হন বাইডেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের এই সাময়িক বৈরি সম্পর্ক অবসানের একটি ক্ষেত্র হলো জি-২০ সম্মেলন। ভারত অনেকটা নিজের থেকেই বাংলাদেশকে এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
ঋষি সুনাক ও অন্য রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে শেখ হাসিনা
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে দেখা যায় তিনি শেখ হাসিনার বসার চেয়ারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কুশল বিনিময় করছেন। এটা শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি জায়েদ আল নাহিয়ান এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। জি২০তে আরও আসেন বিশ্বের বাঘা বাঘা রাষ্ট্রপ্রধানরা। সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তাঁরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আবার একইসাথে কূটনৈতিক আলোচনাও সেরেছেন।
১৯৯৯ সালে শিল্পোন্নত ২০টি দেশের সমন্বয়ে যে অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল সেটিই জি-২০ জোট। এবারের জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক ছিল ভারত। বাংলাদেশ জি-২০ জোটের সদস্য নয়। কিন্তু সদস্য দেশ ছাড়াও এবার ভারত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরো ৯টি দেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ।