একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

0
12
একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ওশান প্রতিবেদক

একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সন্ধায় জেলা শিল্প একাডেমিতে বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন তিনি ছিলেন মানুষের কবি, তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন গুণি মানুষকে হারিয়েছেন ।গত কালঅনুষ্টানে শিল্পী র প্রতিকৃতিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠান সূচীর মধ্যে ছিল -উন্মুক্ত বিজয়গীতি পরিবেশন, কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা এবং বিজয়গীতির আসর।বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাঃ মেহেদী হাসান, প্রফেসার রবিউল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ সুবাস চন্দ্র বোস, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ন কবীর, অধ্যক্ষ রওশন আলী, কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান। বীর মুক্তি যোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, নড়াইল প্রেস ক্লাব সভাপতি এডঃ মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী, মলয় কুন্ডু, রফিকুল ইসলাম, এসএম আকরাম শহীদ চুন্নু প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাশ্বতী শীল। চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী (৪ ডিসেম্বর)। মায়ার বাঁধন ছেড়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়ায় চিরন্তন উপলদ্ধি ফুটে উঠেছে তার সুরমূর্ছনায়।
তিনি গেয়েছেন-যেমন আছে এই পৃথিবী / তেমনিই ঠিক রবে/ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে…। মায়ার বাঁধন ছেড়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়ায় এই চিরন্তন উপলদ্ধি সহজেই অনুমেয়। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানের কথায়, সুরমূর্ছনায় বিজয় সরকার স্মৃতির পাতায় ‘স্মৃতি’ হয়েছেন ৩৮ বছর আগে। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোকগমন করেন কবিয়াল বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার দুই ছেলে কাজল ও বাদল অধিকারী ভারতে বসবাস করেন।
কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকার নবমশ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, মতান্তরে মেট্রিক পর্যন্ত। তার দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউ বেঁচে নেই। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন তিনি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত তিনি। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন বিজয় সরকার।

আধ্যত্মিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিজয় সরকার গেয়েছেন-‘নবী নামের নৌকা গড়/আল্লাহ নামের পাল খাটাও/বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/ কূলের তরী খুলে দাও…।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বল মোমিন/ আল্লাহ রসূল বল/ এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/ সোজা পথে চল…।’

স্ত্রী বীনাপাণির মৃত্যুর খবরে গানের আসরেই গেয়েছেন-‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/ সে আমারে ভুলবে কেমনে…।’ প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন-‘তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা…’।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এর ‘নক্সী কাথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থের নায়ক-নায়িকা ‘রূপাই’ ও ‘সাজু’র প্রেমকাহিনী নিয়ে বিজয় সরকার গেয়েছেন-‘নক্সী কাঁথার মাঠেরে/ সাজুর ব্যাথায় আজো রে বাজে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি…।’ ‘কী সাপে কামড়াইলো আমারে/ ওরে ও সাপুড়িয়ারে/ আ…জ্বলিয়া পুড়িয়া মলেম বিষে’সহ অসংখ্য গান।