স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরের পরপরই নড়াইলের রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, মাশরাফি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ২৫ নেতাকর্মীর বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা,সংঘর্ষ এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে একজন নিহত,একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ এবং কমপক্ষে ৩৫-৪০ জন আহত হওয়ার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে শহরের চৌরাস্তায় বিজয়োৎসবের পর বিক্ষুব্ধ জনতা মহিষখোলায় অবস্থিত মাশরাফি বিন মর্তুজার নড়াইলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেন। কিছু সময় পর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির কালিয়া শহরে অবস্থিত তার নিজস্ব কার্যালয় ভিতরে থাকা দু’টি মোটর সাইকেলসহ অনুমান রাত ৯টার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া জেলা আ’লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোসের বাড়িতে একই তান্ডব চলে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের কুড়িগ্রামে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলুর বাসভবনে আগুন দেয়া হয়। এতে দুটি প্রাইভেট কারও পুড়ে যায়। পরে সদরের আউড়িয়া গ্রামে অবস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সপ্নীল সিকদার নীলের বাড়িতে ভাঙচুর হয়। এদিন,নড়াইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক,স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাজীব মোহাম্মদ, আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ হুমায়ুন কবীরের বাড়ি,জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এস এম পলাশের বাড়ি, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ সিংহ পল্টুর বাড়ি, আ.লীগ নেতা মিলন খান, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান কায়েস, ব্যবসায়ী বুলু খান, রূপগঞ্জ টাউন ক্লাব, পোলট্রি ব্যবসায়ী বাটুল মজুমদার,ব্যবসায়ী নিপু সরকারের বাড়ি ও দেশি মদের দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল সিকদারের মার্কেট ও সেখানে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক রূপগঞ্জ শাখায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়াও শহরের টার্মিনালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যাললের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কমপক্ষে ৩৫-৪০ জন আহত হয়, যার মধ্যে সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছে।
এদিকে,সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নড়াইল শহরের বরাশুলা গ্রামের মাজেদ খাঁ (৩২) নামের একজনের বাড়িতে হামলা করে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। আহতকে চিকিৎসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক অলোক কুমার বাগচী তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া রাত সাড়ে আটটার দিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে বিবদমান দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়কালে একাধিক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতদের সঠিক নাম পরিচয় জানা জায়নি। এর আগে দুপুর থেকে নড়াইল শহরজুড়ে কয়েকহাজার আন্দোলনকারী রাস্তায় বিজয়ের স্লোগান দিতে থাকে। জেলা বিএনপি, জামায়াত, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শহরে খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল বের করেন।