স্পোর্টস ডেস্ক
বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি নাম মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। টাইগার দলের সকল খেলোয়াড়কে সব সময়ই করেছেন সমর্থন, ছায়ার মত আগলে রাখেন দেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী। মাশরাফীর এমন ভালোবাসা আজও ক্রিকেটাররা মনে-প্রা*ণে স্মরণ করে।
সাকিব আল হাসানের মত বড় তারকা থেকে শুরু করে একালের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন পর্যন্ত সকলেই মাশরাফীর সমর্থন পেয়েছেন। সম্প্রতি এক লাইভ শো অনুষ্ঠানের শেষদিকে এসে তামিম ইকবাল বলেন, ‘সে সত্যিকারের কিংবদন্তি ও অধিনায়ক। বাংলাদেশ কখনো তার মত অধিনায়ক পাবে না।’
করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সকলেই মানসি*কভাবে বিধ্বস্ত। এ অবস্থায় বর্তমান ও সাবেক তারকাদের নিয়ে নিজের ফেইসুবক পেইজে লাইভ আড্ডা আয়োজন করে আসছেন তামিম। সেই লাইভে সকলেই মাশরাফীর অবদানকে স্বীকার করেন। তামিম তার প্রথম লাইভ শো করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের সাথে। পাঁচ বছর আগে মুশফিক মুদ্রার উলটো-পিঠ দেখেছিলেন। যখন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অন্যের কাছে মুশফিককে নিয়ে অভিযোগ করতেন।
একমাত্র মাশরাফী ঐ সময়, মুশফিকের পাশে ছিলেন এবং তাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিলেন। সে সময় মনে হয়েছিলো হাথুরুসিংহে তাকে দল থেকে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু আগলে রেখেছেন মাশরাফী। মুশফিক বলেন, ‘কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই মাশরাফী সবসময়ই ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ান। তার সেই সাহস আছে এবং সবসময় দলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।’
তামিম বেশ কয়েকবারই বলেছিলেন, তার ক্যারিয়ারের পেছনে মাশরাফীর ভূমিকা কতটুকু। তিনি বলেন, ‘কেউই তার মত না। কখনও কখনও মনে হয়, তিনি ভিন্ন গ্রহ থেকে এসেছেন। তিনি যেভাবে ভাবেন, যেভাবে একজন খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়ান, তা সত্যিই অসাধারণ। তিনি যদি ভাবেন কারও সম্ভাবনা আছে, তিনি তাকে সমর্থন করা থেকে পিছপা হন না।’
ক্যারিয়ারে বিভিন্ন সময়ে মাশরাফীর সমর্থন পেয়েছেন- মনে করছেন বাংলাদেশ দলের আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। ২০১৯ বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহকে বাদ দেয়ার কথা উঠেছিলো, সেখানে হস্তক্ষেপর করেন মাশরাফী। মাহমুদুল্লাহর পক্ষে কথা বলেন তিনি।
মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে যখন আমি চা*প অনুভব করেছি, তিনিই (মাশরাফী) একজন, যে আমাকে সবসময়ই বিভিন্ন সমস্যায় সহায়তা করেছেন।’ গত বিশ্বকাপে তিন নম্বরে ব্যাট করার কথা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে বলেছিলেন সাকিব। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টে সাকিবকে তিন নম্বরে ব্যাটিংএ পাঠাতে রাজি ছিলো না। এমনকি তামিমও চাননি সাকিব তিন নম্বরে ব্যাট করুক।
সকলেই চেয়েছিলো, সাকিব মিডল-অর্ডারে ব্যাটিং করুক। একমাত্র মাশরাফীই, সাকিবের ইচ্ছার পক্ষে সমর্থন করেন। টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের বিপক্ষে গিয়ে সাকিবকে তিনে ব্যাট করার সাহস দেন ম্যাশ। আর তাতেই ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়েন সাকিব। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে দু’টি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান করেন সাকিব। গড় ছিলো- ৮৬ দশমিক ৫৭। গত বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন সাকিব।
তামিম বলেন, মাশরাফীই প্রথম চিন্তা করেছিলেন, কোন খেলোয়াড়রা তামিম-মুশফিক-সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর স্থান নিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘লিটন-সৌম্য-সাইফউদ্দিনের মধ্যে সেই সম্ভাবনা পেয়েছিলেন মাশরাফী। পুরোপুরিভাবে তাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। লিটন-সৌম্য প্রায়ই বলেন, মাশরাফী কিভাাবে সমালোচনা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।
লিটন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার শুরুটা খুবই সাধারণ ছিলো। আমার প্রথম ১৭টি ওয়ানডেতে আমি একটিও হাফ-সেঞ্চুরি পাইনি। এমনকি আমার ১০টি ইনিংস ছিলো সিঙ্গেল ডিজিটে। আমার সমালোচনা করতে দর্শক ও সমালোচকদের সুুযোগ করে দিয়েছিলো। এমন কঠিন সময়ে, মাশরাফী ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে বাধ্য করেছিলেন, আমাকে দলে রাখতে।’
লিটন এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক। সর্বশেষ সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৬ রান করেন তিনি। তাই বর্তমান সিনিয়দের জায়গায় নেয়ার সুযোগ থাকছে লিটনের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত শুরু করেও, সেটি ধরে রাখতে পারেননি সৌম্য। এখানেও মাশরাফী সমর্থন ও সাহস দিয়েছেন সৌম্যকে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন রান করতে ভুলে গিয়েছিলাম, তখন মাশরাফী ভাই আমাকে সমর্থন যোগান। তিনি আামকে অনুপ্রাণিত করেন এবং অবশেষে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।’ (সূত্রঃ বাসস)