লালমনিরহাটে পু’ড়িয়ে হ’ত্যায় ৩টি মা’ম’লাঃ “গু’জ’ব ছ’ড়িয়ে আমার স্বা’মীকে হ’ত্যা করা হয়েছে”

2
14
লালমনিরহাটে পু'ড়িয়ে হ'ত্যায় ৩টি মামলাঃ
আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহী'দুন্নবী

ডেস্ক রিপোর্ট

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বু’ড়িমারীতে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহী’দুন্নবী (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পু’ড়িয়ে হ’ত্যার ঘটনায় ত’দ’ন্ত শুরু করেছে পুলিশের অ’পরা’ধ ত’দ’ন্ত বিভাগসহ (সিআ’ইডি) বিভিন্ন সংস্থা। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। একই ঘটনায় গ’ণপি’টুনিতে আহ’ত হন সুলতান জোবায়ের নামের একজন। জোবায়ের ও শহীদুন্নবী রংপুর শহরের শালবন এলাকার মি’স্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা।

শুক্রবার লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘট’নাস্থল পরিদ’র্শন করে আ’লা’মত সংগ্রহ করেছি। সিআ’ইডিসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনার বিষয়ে ত’দ’ন্ত শুরু করেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়’ন্ত্রণে আছে। তবে এ ঘ’টনায় এখন পর্যন্ত কোনো মা’ম’লা হয়নি, কেউ আ’টকও হয়নি।

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ঘটনা ত’দ’ন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মোমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের ত’দ’ন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেগম কামরুন্নাহার। ত’দ’ন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই কমিটির সদস্যরা ঘ’টনাস্থল পরি’দ’র্শন করেছেন। তাঁরা আ’লামঃত সংগ্রহ করছেন। প্রত্য’ক্ষদর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ১ নভেম্বর ত’দ’ন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে বলে তিনি জানান।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, পবিত্র কোরআনের অব’মা’ননার অভিযো’গে বৃহস্পতিবার আসরের নামাজের পর বু’ড়িমা’রী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে ছয়জন ব্যক্তি শহী’দুন্নবী ও জোবায়েরকে মা’রধ’র করেন। খবর পেয়ে বু’ড়িমা’রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজুল ইসলাম তাঁদের সেখান থেকে নিয়ে যান। তাঁদের ইউপি কার্যালয়ের একটি ক’ক্ষে রাখা হয়। এরপর কক্ষের দরজায় তা’লা লা’গিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাটি জানাজানি হলে উ’ত্তে’জিত জনতা বু’ড়িমা’রী ইউপি চত্বরে জমায়েত হয়ে দরজা ভে’ঙে ভেতরে ঢু’কে দুজনকে মা’রধ’র করেন। পুলিশ জোবায়েরকে স’রিয়ে নিতে পারলেও শহী’দুন্নবীকে উ’দ্ধা’র করতে পারেনি। সেখানেই গ’ণপি’টুনি দিয়ে ও আ’গুনে পু’ড়ি’য়ে মা’রা হয় তাঁকে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

বু’ড়িমা’রী কে’ন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে দুই ব্যক্তিকে মা’রধ’র করলে ইউপি সদস্য হাফিজুল তাঁদের নিয়ে যান। ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাঁদের নিয়ে এসে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তালা দিয়ে রেখে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের খবর দিই। পরিস্থি’তি এমন পর্যায়ে ছিল যে তাঁদের পরি’চয়ও নিতে পারিনি। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের লোকজন এলেও পরি’স্থিতির উন্নতি হয়নি। লোকটাকে কেউ বাঁ’চাতে পারল না!’

নিহ’ত শহীদুন্নবী রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে এবার এইচএসসির পাস করেছেন ও ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

শুক্রবার সকালে শহী’দুন্নবীর শালবনের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীসহ আ’ত্মীয়স্বজনের ভিড়। শহীদু’ন্নবীর *স্ত্রী জেসমিন আক্তার আ’হাজা’রি করছেন। বিলা’প করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার স্বা’মী অনেক সহজ সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। যারা গু’জ’ব ছ’ড়িয়ে আমার স্বা’মীকে হ’ত্যা করেছে আমি তাদের বি’চার চাই।’

স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে ২০১৬ সালে চাকরি চ’লে যাওয়ায় শহী’দুন্নবীর একমাত্র উপার্জনপথ ব’ন্ধ হয়ে যায়। এতে মান’সিকভাবে অনেকটা ভে’ঙে পড়েছিলেন তিনি। চিকি’ৎসকের পরামর্শে সব সময় ওষু’ধ সেব’ন করতেন। শহী’দুন্নবীর বোন হাছনা আক্তার বলেন, মান’সিক য’ন্ত্রণার কারণে তাঁর ভাই ভারতীয় ও’ষুধ খেতেন। তাই সীমান্তের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় চেনাজানা মানুষজনের কাছে ও’ষুধ আনাতে গিয়েছিলেন।

এদিকে নৃ’শং’সভাবে শহী’দুন্নবীকে হ’ত্যার প্রতিবা’দ ও দা’য়ী ব্যক্তিদের গ্রে’প্তার করে শা’স্তির দা’বিতে সচেতন রংপুরবাসীর ব্যানারে শুক্রবার বিকেলে রংপুর নগরের পায়রা চত্বর এলাকায় মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, শনিবার দুপুর ১২টায় রংপুর জিলা স্কুল প্রাক্ত’ন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জিলা স্কুলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ও বা’দ জোহর জিলা স্কুল মাঠে শহীদুন্নবীর গায়ে’বানা জা’না’জা অনুষ্ঠিত হবে।

জ’ড়িতদের শা’স্তির দা’বিঃ পি’টিয়ে ও পু’ড়িয়ে হ’ত্যার এ ঘ’টনার সঙ্গে জ’ড়িত লোকজনের দৃষ্টা’ন্তমূলক শা’স্তি দাবি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠন তিনটির নেতারা শুক্রবার পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্ম’মভাবে শহী’দুন্নবীকে হ’ত্যা করা হয়েছে। এই হ’ত্যাকা’ণ্ডের সঙ্গে জ’ড়িত প্রত্যেককে গ্রে’প্তার করে দৃ’ষ্টান্তমূ’লক শা’স্তি নিশ্চিত করতে হবে।

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে এসে ঘট’নাস্থল পরি’দর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রংপুর রে’ঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। তারা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘট’নায় তিনটি মা’ম’লা দা’য়ের হয়েছে। এরমধ্যে নিহ’তের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশ বা’দী হয়ে অপর মা’ম’লাটি দা’য়ের করে।