মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি- কোনো কর্ম বা কাজের কাঙ্খিত মান নিশ্চিত করার জন্য কাজটির উপাদানসমূহের গুণগত ও পরিমাণগত মান নিশ্চিত করার পদ্ধতিই হলো প্রক্রিয়া। নিম্নের দুটি উপমায়- পরিবার বা প্রক্রিয়াহীণ ও প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানব্যবস্থার লক্ষণীয় পার্থক্য ও গুরুত্ব যথাক্রমে ছক-১ক ও ছক-১খ-এ তুলে ধরা হয়েছে। উপমার জন্য প্রথমে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে- রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠার অনুকূলে বা জাতির মেরুদণ্ড গঠনে ব্যক্তি মানুষের আচরণজাত মূল্যবোধসমূহ কী কী?
আমরা ইতঃপূর্বে ব্যক্তি মানুষের আচরণ প্রকাশের আলোচনায় মূল্যবোধসমূহের বেশ কয়েকটি আলোচনা করেছি। উপমার জন্য তন্মধ্যে এখানে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করব। যেমন- ১. মানবিকতা, ২. নীতিনৈতিকতা, ৩. সততা, ৪. যুক্তিবাদিতা, ৫. নিষ্ঠা, ৬. কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি। আমাদের ধারণা ব্যক্তিকে শিক্ষা দেবে পরিবার। কিন্তু আমরা জেনেছি পরিবার ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত আচরণ সক্ষম করে তুলতে পারে না।
পরিবার বা প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাব্যবস্থা ছক-১ক ও
প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানব্যবস্থা ছক-১খ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করে উভয় ক্ষেত্রের পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
পরিবারের বা প্রক্রিয়াহীন শিক্ষাব্যবস্থাঃ
উপমাটিতে লক্ষণীয় (মনে করি) একমাত্র মধু পরিবার হতে আচরণের কাঙ্খিত মূল্যবোধসমূহ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সমাজ বা নাগরিক জীবনে বিভিন্ন স্তরে পরিবারসমূহের অবস্থানগত বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলেই পরিবারের উক্ত রূপ অক্ষমতা সহজেই বুঝা যায়। অর্থাৎ পরিবার বা পরিবারের শিক্ষা ব্যক্তি আচরণে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত মূল্যবোধ-সমূহ নিশ্চিত করে না।
প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থা ব্যক্তিসত্তাকে পরিবারে পারিবারিক আচরণ উন্মেষের সুযোগ না দিয়ে প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থার আওতাধীন বা বিত্তভুক্ত করে ব্যক্তি আচরণে কাঙ্খিত মূল্যবোধসমূহের উন্মেষ নিশ্চিতকরণ।
উপমা ছক-১খ লক্ষ করলে দেখা যায় ব্যক্তিসত্তা ও তার আচরণের মূল্যবোধসমূহ প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে বাধ্যতামূলক শিক্ষা দিলে ব্যক্তির কাঙ্খিত আচরণ মান নিশ্চিত করে। উক্ত উপমাটিতে প্রক্রিয়াজাত শিক্ষদান ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সহজে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনায় ব্যক্তি আচরণের মূল্যবোধসমূহ উন্মেষ প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানব্যবস্থায় কিভাবে নিশ্চিত করা যায় আমরা জানতে পারলাম। প্রাণী সত্তায় কাক্সিক্ষত আচরণ গঠন জটিল প্রক্রিয়া হলেও মানুষের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হলো- জন্মগতভাবে মানুষ কোনোরূপ গুণগত আচরণের অধিকারী হয়ে জন্মায় না। ফলে যথাসময়ে ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার আচরণে কাক্সিক্ষত মূল্যবোধসমূহের উন্মেষ সাধন করা সম্ভব।
আমাদের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য সুনাগরিক সমাজ ও আদর্শ রাষ্ট্র গঠন। যার একমাত্র শর্তই হলো- প্রতিটি নাগরিককেই সুনাগরিক রূপে গড়ে তোলা। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, গঠনের শুধু উদ্দেশ্য থাকলেই হয় না- গঠনের প্রক্রিয়া জানতে হয় এবং প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণও করতে হয়। অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানে ব্যক্তি আচরণে কাঙ্খিত মূল্যবোধসমুহের উন্মেষসাধনই হলো সুনাগরিক গড়ে তোলার একমাত্র উপায় । অতএব সুনাগরিক সমাজ পেতে হলে বা গড়ে তুলতে হলে- প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদান ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করে শিক্ষাদান করতেই হবে। যার কোনোই বিকল্প নেই।
উপরিউক্ত আলোচনাসমূহে প্রাপ্ত কয়েকটি সিদ্ধান্ত এ পর্যায়ে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন। যেমন-
(i) শিক্ষা বলতে মূলত সত্তার স্বকীয় (ক-আচরণ পারিবারিক) আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে কাঙ্খিত আচরণে সক্ষম করে তোলাকে বুঝায়।
(ii) শিক্ষার মান বলতে মূলত শিক্ষাদানে উন্মেষিত সত্তার (খ-আচরণ) আচরণ সক্ষমতা যে মানসম্পন্ন কর্মসম্পাদনে সক্ষম হয় সেই মানকে বুঝায়।
(iii) মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহের শিক্ষাদান ব্যতীত শুধু স্বাক্ষরতা বা পাঠদান-মূলক শিক্ষাব্যবস্থা কাঙ্খিত আচরণ গঠনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। এবং বিচরণ ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে আচরণ সক্ষম করে তুলতেও পারে না। (লেখা চলবে…) পূর্ব লেখাঃ