নড়াইলে কৃষি ব্যাংকের ২০ নিরাপত্তাকর্মীর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করে পুনর্নিয়োগ!

4672
70
নড়াইলে কৃষি ব্যাংকের ২০ নিরাপত্তাকর্মীর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করে পুনর্নিয়োগ!
নড়াইলে কৃষি ব্যাংকের ২০ নিরাপত্তাকর্মীর নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করে পুনর্নিয়োগ!

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল অঞ্চলের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ ৭টি শাখার ২০জন নিরাপত্তাকর্মীর নিকট থেকে চুক্তি নবায়নের জন্য জনপ্রতি অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জেএসএস সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামে তাঁদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

কৃষি ব্যাংকের নড়াইল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, নড়াইল অঞ্চলের কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ ৭টি শাখার জন্য ২০জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেএসএস সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক নিরাপত্তাকর্মীর জন্য মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হলে আবার দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়। এ জন্য তাঁদের প্রত্যেকের নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছে জেএসএস সিকিউরিটি সার্ভিসেস। আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক কর্মচারী লুৎফর রহমানের ২২০১-০৩১০০৩৮৮৮ হিসাবের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত অর্থ লেনদেনের ভাউচারের তথ্য সংরক্ষিত আছে।

সূত্র আরো জানায়, গত ২১ মার্চে নড়াইল অঞ্চলের ৭টি শাখার ২০জন নিরাপত্তাকর্মীর নিকট থেকে মোট ৩লাখ টাকা সংগ্রহ করে আঞ্চলিক কার্যালয়ের পিয়ন লুৎফর রহমানের ২২০১-০৩১০০৩৮৮৮ হিসাবের মাধ্যমে জমা করা হয়। কৃষি ব্যাংক কালিয়া শাখার গত ২১ মার্চের ৭৫৯২ নং জমা ভাউচারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপক সুদীপ কুমার দে ২২০১-০৩১০০৩৮৮৮ হিসাবে এ-সংক্রান্ত অর্থ লেনদেন করার প্রমাণ মিলেছে।

এরপর জেএসএস লিমিটেড খুলনার তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে লোকমারফত ওই অবৈধ অর্থ নড়াইল আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে গ্রহণ করা হয়। অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের পর গত ২৪ মার্চে জেএসএসএসলিঃ/বিকেবি/নিয়োগ/২০২১/৬৬২ স্মারকে নড়াইল অঞ্চলের ২০জন কর্মী যথাক্রমে আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত মো. ইলু শেখ, নড়াইল শাখায় দেব্রত বিশ্বাস ও মান্নাফ সরদার, লোহাগড়া শাখায় মিলন মুন্সী,আলী আকবর ভুঁইয়া ও কবির উদ্দিন শেখ,কালিয়া শাখায় মো. মহসিন শেখ ও বদরুজ্জামান খাঁন,শেখহাটী বাজার শাখায় সোহাগ শেখ, মাহাবুবুর রহমান অপু ও বাবুল আক্তার, লাহুড়িয়া বাজার শাখায় আনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও নিজাম উদ্দিন বিশ্বাস, হবখালী শাখায় মফিজুর রহমান, মিজানুর রহমান ও তবিবর সরদার, নড়াগাতী বাজার শাখায় শওকত হোসেন শিকদার, মিল্টন মোল্যা ও মিজানুর রহমানকে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ওইসব নিরাপত্তাকর্মীদের অভিযোগ, নিয়োগ দেওয়ার সময় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকের নিকট থেকে ২০-৫০ হাজার করে নিরাপত্তা জামানতের নামে টাকা নিয়েছে। সন্তোষজনকভাবে কাজ করায় ব্যাংক আবার তাঁদের রেখে নতুন চুক্তি করেছে। কিন্তু কোম্পানি প্রতি দুই বছর পর পর প্রত্যেকের নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করছে। টাকা না দেওয়া হলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি হুমকি দেওয়া হয়, টাকা না দিলে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘প্রতি দুই বছর পর পর জেএসএস কোম্পানি কৃষি ব্যাংকে কর্মরত কর্মীদের নিকট থেকে চুক্তি নবায়নের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস করে না। কথা বলায় এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্টি থাকার পরও কোম্পানি চুক্তি নবায়নের সুযোগ না দিয়েই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়ে হঠাৎ আমাদের শাখায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ দিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমরা অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পুনর্নিয়োগের সুযোগ পেয়েছি।’

কৃষি ব্যাংক নড়াইল অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (আরএম) ফ.ম.খলিলুর রহমান বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে দরপত্রের মাধ্যমে জেএসএস সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে নিয়োগ নবায়নের জন্য নিরাপত্তা কর্মীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগের বিষয়টি জেএসএস কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন। এ ঘটনার সঙ্গে কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোন সম্পৃক্ততা বা যোগসাজস নেই।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কালিয়া শাখার ব্যবস্থাপক সুদীপ কুমার দে বলেন, ‘আমার নিয়ন্ত্রণাধীন কালিয়া শাখায় জেএসএস সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের মাধ্যমে দুইজন গার্ড নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, অত্র শাখায় নিয়োগকৃত নিরাপত্তা কর্মীর প্রত্যেকের নিকট থেকে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান জেএসএস কর্তৃপক্ষ জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা করে নিয়ে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নিয়োগ নবায়ন করেছেন। এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোন সম্পৃক্ততা নেই।‘

নিয়োগ নবায়নের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি জানতে জেএসএস লিমিটেডের জেষ্ঠ্য ব্যবস্থাপক এবং খুলনা বিভাগের নিয়োগ ও পুনর্নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোপাল হাওলাদারের মুঠোফোনে কল দিলে সাজেন্ট মো.আলী আকবর রিসিভ করে বলেন, ‘গোপাল হাওলাদার ছুটিতে আছেন। তিনি অফিসে আসলে এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (১৭জুন) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আবারও তাঁর মুঠোফোনে কল দিলে পরিচয় জানার পর তিনি অসুস্থতার কথা বলে কেটে দেন।’

একই প্রসঙ্গে জেএসএসএসএল-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) মো.ফেরদৌস উর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। আমার কোম্পানি তাদের নিয়োগ দিয়েছে এটা সঠিক। অনেকে নিয়োগ ও পুনর্নিয়োগের বিষয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেন করে থাকেন। তবে নবায়নের নামে কথিত উৎকোচ গ্রহণের সঙ্গে আমার কোম্পানির কেউ জড়িত নয়।’