স্টাফ রিপোর্টার
বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে “নড়াইলে ডাক্তারের ভুল চিকিংসায় রোগীর মৃত্যু” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন সিভিল সা/র্জন ডা: নাছিমা আকতার। নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার বিরদ্ধে তিন সদস্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন নড়াইল সদর হাসপাতালের জুনিয়র কলসালটেন্ট (সার্জারী) ডা : জিএম নুরজ্জামনকে সভাপতি জুনিয়র কলসালটেন্ট (গাইনী) ডা : সুব্রত কুমার বাগচী সদস্য ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা : সৈয়দ শফিক তমাল।
নড়াইল সিভিল সার্জন অফিসের স্মারক নং সি এস এন/শা-১/২০২২/১৩০/১১ চিঠিতে বলা হয়েছে, নড়াইল নিউজ ২৪.কম এ ১৯ জানুয়ারি’ ২২ তারিখে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ভর্তিকৃত রোগী ববিতা খানম পিতা আতিয়ার সরদার, সাং- বাগডাঙ্গা ইউনিয়ন হবখালী,নড়াইল সদর, নড়াইল। স্বামী মাগুরার মুহাম্মদপুর উপজেলার বড়লিন গ্রামের লায়েব সেখের স্ত্রী। তাকে নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ অপারেশন করেন পরে ১২ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন। এই ঘটনায় রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন উক্তরোগী ববিতা খানমকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার কারনে মৃত্যু বরন করেছেন।
উক্ত অভিযোগটি সরেজমিন তদন্ত করিবার জন্য নিম্ন বর্ণিত তদন্ত কমিটি গঠন করা হল। তদন্ত কমিটিকে নিন কর্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করিয়া উহার প্রতিবেদন নিম্ন স্বাক্ষরকারি দপ্তরে প্রেরনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সিভিল সার্জন ডা: নাছিমা আকতার বলেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসার কারনে আমরা গতকাল বিষয়টি দেখার পরপরই তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নড়াইল সদর উপজেলা হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার আতিয়ার সরদারের মেয়ে এবং মাগুরার মুহাম্মদপুর উপজেলার বড়লিন গ্রামের লায়েব সেখের স্ত্রী। নিহত ববিতা খাতুন ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
গর্ভকালীন নানা জতিলতার কারণে ববিতার মা রেবেকা বেগম চিকিংসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে আসার পথে রোগীকে পানি খাওয়ানোর জন্য জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের সামনে দাড়ান। এসময় জনতা ক্লিনিকের থাকা লিপি ও নাদিরা রেবেকা বেগম কে বলে আমাদের ক্লিনিকে ভালো ডাক্তার আছে আপনার মেয়ে সুস্থ্য হয়ে যাবে। এই বলে জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের কাছে নিয়ে যায়। ক্লিনিকের মালিক শিপন গর্ভবতী ববিতার চিকিংসার কাগজ পত্র দেখে ৭২ ঘন্টার মধ্যে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে বলে ২২,০০০ হাজার টাকা নেয় রেবেকা বেগমের কাছ থেকে। গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ ববিতা খাতুনের সিজার করে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার। সিজার করার পর ২/৩ দিন রেখে রেবেকা বেগমকে বলেন আপনারা বাড়ি চলে যান তিনদিন পর ক্লিনিকে এসে সেলাই কেটে যাবেন।
বাড়িতে গিয়ে ববিতা খাতুন আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তার পেট ফুলে প্রস্রাব পায়খানা বন্দ হয়ে জ্বালা যন্ত্রণা করে অসুস্থ্যতা বাড়তে থাকে। পরে রেবেকা তার মেয়ে ববিতা কে নিয়ে সদর হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিংসক (অব:) ডা: মীনা হুমায়ুন কবিরের কাছে নিয়ে যায় তিনি পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে বলেন, রোগীর পেটের মধ্যে ২/৩ প্যাকেট রক্ত পুজ জমা হয়ে আছে। তিনি জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলে শিপন ওই রোগী কে পুনরায় আবার ক্লিনিকে পাঠাতে বলে। পরে রোগী ববিতাকে নিয়ে তার মা রেবেকা আবার যায়। পরে সেই রোগীকে আবারও অপারেশন করে সেই ডাক্তার সুব্রত। অপারেশনের সময় ডাক্তার সুব্রত পায়খানা প্রসাবের নাড়ি সহ আরও অনেক গুরুত্বপুর্ন নাড়ি কেটে ফেলে বলে পরিবারের অভিযোগ।
রোগীর পেটে কোন সেলাই না দিয়ে টেপ লাগিয়ে দেয়। পরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। ডাক্তার সুব্রত ও কিøনিকের মালিক শিপন ভয় পেয়ে রোগীকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। তখন রোগী ববিতা ও তার মা রেবাকাসহ শিপনকে এ্যাম্বুলেন্স করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সেখানে তাদেরকে রেখে পলিয়ে চলে আসে বলে অভিযোগ করেন নিহত ববিতার মা।
পরে কিছু ব্যাক্তি তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করলে তারা আবার রোগীকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে ভর্তি করে। তখন দেখতে পায় সিজারের টেপ লাগানো ফাকা জায়গা থেকে পায়খানা প্রস্রাব উপর দিয়ে বের হচ্ছে রোগী খাওয়া দাওয়া করছে না। সেখান থেকে আবারও চিকিৎসকসহ ক্লিনিক মালিক শিপন তাদের যশোর উত্তরা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে গেলে একদিন পর ১২ জানুয়ারি মৃত্যু হয়।