মীর আব্দুল গণি, জার্মানি থেকে
“শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।“ কথাটি অতিব সত্য। কিন্তু শিক্ষার কোন কোন বিষয়, উপাদান বা উপকরণসমূহ জাতির অদৃশ্য দেহে মেরুদণ্ড গঠন করে তা জানার জন্য অবশ্যই শিক্ষা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আদর্শ জাতি গঠনের জন্য ঐ সকল বিষয়, উপাদান ও উপকরণসমূহ শিক্ষাদান-ব্যবস্থায় অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করা একান্ত দরকার। কিন্তু প্রশ্ন হলো- শিক্ষার ঐ সকল বিষয়, উপাদান বা উপকরণসমূহ কি ভাবে জানা সম্ভব?
জানার উপায় হলো- যুক্তির আলোকে শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে যথা সম্ভব প্রশ্ন উত্থাপন ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করে প্রশ্নসমূহের যৌক্তিক উত্তর খুঁজে নেয়া।
বিষয়:
যেমন- “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।“
মূল প্রশ্ন
১। শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয় ?
সম্ভাব্য প্রশ্নসমূহ
যেমন
ক) জাতি কি?
খ) জাতির মেরুদণ্ড কি? এবং জাতির মেরুদণ্ডের উপাদান বা উপকরণসমূহ কি কি?
গ) শিক্ষা কি?
ঘ) শিক্ষাদান মূলতঃ কি?
উল্লেখিত সম্ভাব্য প্রশ্নসমূহের যৌক্তিক উত্তর জানতে পারলেই মূল প্রশ্নের উত্তরও আমরা পেয়ে যাবো।
সম্ভাব্য প্রশ্নসমূহের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা :
ক) জাতি কী?
রাষ্ট্রীয়-পরিমন্ডলে ‘‘রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত ও আরোপিত আইন, নীতি নিয়ম
ও মানবিক মূল্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত ব্যক্তি-সমষ্টি বা জন সমষ্টিই হলো জাতি।‘‘
বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীন জনসমষ্টিকেই বলা হয় জাতি।
উপরোক্ত আলোচনায় জাতি গড়ে উঠার যে সকল উপাদান উপকরণসমূহ আমরা দেখতে পাই
সেগুলো হলো
ব্যক্তিসমষ্টি, ব্যক্তির মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন ও নীতি নিয়ম…. ইত্যাদি।
খ) জাতির মেরুদণ্ড কি? এবং জাতির মেরুদণ্ডের উপাদান বা উপকরণসমূহ কি কি?
আমরা ইতিপূর্বের আলোচনায় জেনেছি
ব্যক্তির (ব্যক্তিসমষ্টির) মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন ও
নীতি নিয়ম ইত্যাদি উপাদান ও উপকরণসমূহকে ভিত্তি করে জাতি গড়ে উঠে। ১
যেহেতু ঐ সকল উপাদান উপকরণসমূহকে ভিত্তি করে জাতি গড়ে উঠে সেইহেতু ঐ সকল উপাদান ও উপকরণসমূহের সমষ্টিই হলো জাতির মেরুদণ্ড। এবং একই সঙ্গে ঐ সকলই হলো জাতির মেরুদণ্ডের উপাদান ও উপকরণসমূহ।
অতএব সংক্ষেপে আমরা উল্লেখ করতে পারি- ব্যক্তির (সমষ্টির) মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ এর সমষ্টি এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন ও নিতীনিয়মসমূহের প্রতি ব্যক্তিসমষ্টির আনুগত্যবোধ হলো জাতির মেরুদণ্ড।
গ) শিক্ষা কী?
শিক্ষা শব্দের আভিধানিক অর্থ জ্ঞানার্জন।
ব্যক্তি-জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানসমূহ ব্যক্তি কি নিজ থেকে পরিপূর্ণভাবে অর্জন করতে পারেন? পারেন না। (যদি কেউ পারেন সে ব্যতিক্রম।)
বাস্তবতা হলো কারো কাছ থেকে ব্যক্তিকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় বা শিখতে হয়।
যিনি শেখান বা শিক্ষা দান করেন তিনি শিক্ষা দাতা বা শিক্ষক।
ব্যক্তির এই (জ্ঞানার্জণ) ‘শেখাকেই শিক্ষা বলা হয়।‘
শিক্ষা কী উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম।
এ পর্যায় হতে শিক্ষা দেওয়াকে আমরা ‘’শিক্ষাদান’’ বলে উল্লেখ করবো।
আমাদের মূল প্রশ্ন :
১। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড কেন বলা হয়?
প্রশ্নটির উত্তর পেতে হলে জাতির মূল উপাদান, ব্যক্তিসমষ্টির উৎস তাদের পরিবারসমূহের বৈশিষ্ট্য নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে।
কারণ আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো বিবিধ কারণে বিভিন্ন পরিবারে ব্যক্তির মানবিক মূল্যবোধ সমূহের উপলব্ধির মাণ ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার হয়ে থাকে।
অর্থাৎ ব্যক্তি সমষ্টির যে মূল্যবোধসমূহকে ভিত্তি করে জাতি গড়ে উঠে ব্যক্তি নিজে সেই মূল্যবোধসমূহ পরিপূর্ণরূপে যেমন অর্জণ করতে সক্ষম হন না তেমনি তার পরিবারও তাকে সম্মৃদ্ধ করে তুলতে পারেন না। (যদি কেউ হয়ে থাকেন ব্যতিক্রম।)
(লেখাটির কলেবর ছোট রাখার জন্য উদাহরণ দিচ্ছি না।)
ফলে শিক্ষা-দিয়ে ব্যক্তিসমষ্টিকে মানবিক মূল্যবোধসমূহে সম্মৃদ্ধ করে জাতি গঠনের যোগ্য করে তুলা হয়।
যেহেতু ‚‘‘শিক্ষা দিয়ে‘‘ ব্যক্তি-সমষ্টিকে জাতি গঠনের উপযোগী করে তুলা হয়
সেইহেতু ‘‘শিক্ষাকে‘‘ জাতির মেরুদন্ড বলা হয়।
জাতির মেরুদণ্ড কী পুনরায় তুলে ধরছি-
ব্যক্তি বা জনসমষ্টির মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহের সমষ্টি এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন ও নীতিনিয়ম এর প্রতি আনুগত্যবোধ হলো জাতির মেরুদণ্ড।
শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য :
শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য পূরণের জন্য যথাযত শিক্ষাদানব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়।
শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলেই বিষয়টি বুঝতে সহজ
হবে। ২
শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী?
অতি সরলভাবে বলা যায়- শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো-
১) মানবিক বিষয় শিক্ষাদান
২)বিষয় ভিত্তিক শিক্ষাদান
১) মানবিক বিষয় শিক্ষাদান
মানবিক বিষয় হলো- যে সকল গুণাগুণ বা মূল্যবোধসমূহ একজন ব্যক্তিকে আদর্শ মানুষ রূপে স্বীকৃতি দেয়।
যেমন মানবিকতা, নীতি নৈতিকতা,সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্য পরায়ণতা, যুক্তিবাদিতা ….ইত্যাদি।
(মূলতঃ মানবিক মূল্যবোধসমূহই হলো পশু আর মানুষের পার্থ্যক। এবং যে মানুষ মানবিক মূল্যবোধসমূহে যত সম্মৃদ্ধ সে পশু হতে তত দূরে।)
কিন্তু মানুষ মানবিক মূল্যবোধসমূহ পরিপূর্ণরূপে নিজে অর্জন করতে যেমন সক্ষম হন না তেমনি প্রতিটি ব্যক্তিই নিজস্ব বোধ বা স্বকীয়তা ধারণ করে থাকেন।
সে জন্য ব্যক্তির স্বকীয়তাকে অপসারণ করে মানবিক বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে জাতি গঠনের যোগ্য করে তুলতে হয়।
আদর্শ জাতি গঠনে এবং শিক্ষার প্রত্যাশিত ফল পেতে হলে মানবিক শিক্ষার কোনই বিকল্প নাই।
আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে মানবিক শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে সময়, পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া নির্ভর। সে জন্য মানবিক বিষয় শিক্ষাদানের সঠিক সময় নির্বাচন ও কৌশল শিক্ষাদানব্যবস্থায় অবশ্যই থাকতে হবে।
কারণ :
মানবিক-শিক্ষাদান হলো ব্যক্তি সত্তার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সাধন বা সত্তার স্বকীয়তার অপসারণ এবং ইপ্সিত মূল্যবোধের প্রতিস্থাপন।
যে শিক্ষাদানব্যবস্থাকে (Padagogig বা Science of Teaching.) বাংলায় আমরা বলতে পারি শিক্ষাদান বিজ্ঞান।
শিক্ষার্থীর শিশু বয়স হতে পর্যায় ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ কি কৌশলে বা উপায়ে শিশুর মানস পটে জাগ্রত করে তুলতে হয় শিক্ষাবিজ্ঞান হলো তারই দিকনির্দেশনা।
উন্নত বিশ্ব শিশুর ৩ বছর বয়সে কিন্ডারগার্ডেনে মানবিক বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করে থাকেন।
শিশু বয়সেই প্রাণী সত্তার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যে সহজ
তার একটি উদাহরণ:
আমরা দেখেছি একটি হরিণ শাবক ও একটি ব্যঘ্র শাবক অতি শিশু বয়স হতে এক
সঙ্গে রেখে বড় করে তুললে স্বগোত্র হতে দূরে থাকাতে তাদের গোত্রগত আচরণ বা স্বভাব জাগ্রত হবার সুযোগ পায় না। ফলে তারা খাদ্য খাদক সম্পর্ক ভুলে একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠে।
২) বিষয় ভিত্তিক শিক্ষাদান :
বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা হলো- কোনোও বিষয়ে বা একাধিক বিষয়ে ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা।
যেমন বাংলা, অংক,ইংরাজি, বিজ্ঞান,ডাক্তারি….ইত্যাদি।
এখন আমরা সহজেই দেখতে পাই ১) ও ২) এ উল্লেখিত উভয় বিষয়সমূহ শিক্ষাদান হলো পরিপূর্ণ শিক্ষা।
শিক্ষার প্রত্যাশিত ফল পেতে হলে উক্ত ১) ও ২) উভয় বিষয়সমূহ শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া অবশ্যই শিক্ষাব্যবস্থায় থাকতে হবে এবং শিক্ষা দিতেই হবে। যার কোনই বিকল্প নাই। ৩
অতএব আমরা উল্লেখ করতে পারি ১) ও ২) এ উল্লেখিত বিয়সমূহ শিক্ষাদানের-ব্যবস্থাই হলো পরিপূর্ণ শিক্ষাদানব্যবস্থা।
এখন আমরা বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাদানব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখবো ১) ও ২) এ উল্লেখিত
বিষয়সমূহ শিক্ষানের প্রক্রিয়া গ্রহণ ও শিক্ষাদানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কি না ?
বাংলাদেশের শিক্ষাদান ব্যবস্থা লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই
শুধু ২) বিষয় ভিত্তিক শিক্ষাদান
যেমন
অক্ষর জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞান, ডাক্তারি …ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়সমূহে শিক্ষাদানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
কিন্তু
১) মানবিক বিষয় শিক্ষাদান
যেমন
মানবিকতা, নীতিনৈতিকতা, সততা, নিষ্ঠা…..ইত্যাদি মূল্যবোধসমূহ শিক্ষাদানে যেমন কোনো প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয় নাই তেমনি কোন গুরুত্বই দেয়া হয় নাই।
অতএব ১) এ উল্লেখিত মানবিক বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবণ করলেই বোঝা যায় আমাদের শিক্ষাদানব্যবস্থাটি অসম্পূর্ণ।
জাতি গঠনে বিবেচ্য
আমরা জানি যে, যে কোনো নির্মাণ বা গঠনে ব্যবহৃত উপাদান ও উপকরণ সমূহের গুণগত ও পরিমাণগত মাণ এবং সে সকলের যথাযত সমন্বয়ের উপর গঠনটির মাণ ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে।
জাতি গঠনেও তার উপাদান ও উপকরণসমূহের গুণগত মাণ ও সমন্বয়ের গুরুত্ব একই।
প্রশ্ন হলো জাতি গঠনের উপাদানসমূহের গুনগত মাণ ও যথাযত সমন্বয় নিশ্চিত করবে কে?
জাতি গঠনের উদ্যোগ যেহেতু রাষ্ট্রের
সেইহেতু মানবিক মূল্যবোধসমূহে ব্যক্তি সমষ্টিকে সম্মৃদ্ধ করে তোলা এবং তাদেরকে
আইন নীতিনিয়ম এর অনুগত করে তোলা রাষ্ট্রের অবশ্যই করণীয়।
রাষ্ট্রের ঐ অবশ্যই করণীয় কাজ যথাযত ভাবে পালন করাই হলো-
উপাদান ও উপকরণসমূহের যথাযত সমন্বয় সাধন।
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো-
ঘ) শিক্ষাদান মূলতঃ কী?
উদাহরণ :
লিখতে বা পড়তে জানে না এমন কোন ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা হয়
যেমন :
’ক’) ১+১=?… ব্যক্তির ‘’স্বকীয়’’ অভিব্যক্তি (অনাকাঙ্ক্ষিত।)
’খ’) ১+১=২ ‘’শিক্ষাদান’’ (কাঙ্ক্ষিত।)
উদাহরণটিতে দেখা যায়, শিক্ষাদান মূলতঃ-
ব্যক্তির স্বকীয় বোধ ’ক’ এর স্থলে
কাঙ্ক্ষিত বোধ ’খ’ এর প্রতিস্থাপন।
বা সত্তায় কাঙ্ক্ষিত বোধের ’খ’ এর জাগরণ ঘঠানো বা উন্মেষ সাধন।
অতএব আমরা উল্লেখ করতে পারি শিক্ষাদান মূলতঃ- ৪
সত্তার ‘স্বকীয় বোধ’(..? ’ক’) এর স্থলে
‘কাঙ্ক্ষিত বোধ (’খ’ ১+১=২) এর প্রতিস্থাপন বা জাগরণ ঘটানো।
অর্থাৎ সত্তার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সাধন বা বোধ-চেতনার জাগরণ ঘটানো।
মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সাধনে সত্তার বয়স ও শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়।
দার্শনিকগণ মনে করেন, শিশুর পরিচ্ছন্ন মনজগতে অতি যত্নে, কৌশলে ও সতর্কতার সঙ্গে পর্যায় ক্রমে কাঙ্ক্ষিত বোধের জাগরণ ঘটাতে হয়। তবেই তা স্থায়িত্ব পায়।
উন্নত দেশ কিন্ডারগার্ডেনে শিশুর মানসিক গঠন বা পরিবর্তন সাধনে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত (শিক্ষক) শিশু পালণকারী বা যত্নকারী নিযুক্ত করে থাকেন। (এরা মূলত: নেপোলিওনের সেই বিখ্যাত বাণী শিক্ষিত মা এর বিকল্প মা।) যারা শিশুর কমল মানসপটে পর্যায়ক্রমে কাঙ্ক্ষিত বোধের উন্মেষ সাধন করেন।
শিক্ষা বিষয়ে সরকারের যথেষ্ঠ আন্তরিকতা থাকা সত্বেও ‘শিক্ষাদান বিজ্ঞান’ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের ধারণা অনেক পুরানো ও অপূর্ণ ফলে তারা সঠিক পদ্ধতি গ্রহণে এখনও সক্ষম হন নাই।
আমাদের শিক্ষাদান ব্যবস্থা আধুনিক করে গড়ে তুলতে নিম্ন লিখিত বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
যেমন :
১। ব্যক্তির মানবিক ও মৌলিক বিষয়ে শিক্ষাদান
২। নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে পর্যায়ক্রমে মানবিক ও মৌলিক বিষয়সমূহে শিক্ষাদান।
৩। কিন্ডারগার্ডেনে মনস্তাত্বিক প্রক্রিয়ায় শিশুর মানসিক গঠনদানে শিশুলালনকারিকে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে।
৪। শিশুর ৩ হতে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত অক্ষর জ্ঞানদান না করে মানসিক গঠনদান করতে হবে।
৫। শিক্ষানীতি দ্বারা কিন্ডারগার্ডেন পরিচালিত ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
যে কেউ শিক্ষা বিভাগের অনুমোদন নিয়ে কিন্ডারগার্ডেন করতে পারেন,
তবে অবশ্যই উল্লেখিত শর্তসমূহ পালন ও অনুসরণ করতে বাধ্য থাকবে।
৬। শিক্ষককে আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে অবশ্যই প্রশিক্ষিত হতে হবে।
সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায়:
কোন মানুষই সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী হতে পারেন না। জাতির বৃহৎতর স্বার্থে কর্তৃপক্ষের উচিত
যাঁরা শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেন বা ভাবেন তাঁদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে কর্তৃত্ব পরায়ণ বিশ্বে জাতি বদলের হাতিয়ার শিক্ষাদানের মত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল কোনো দেশই কোনো দেশকে দিবে না।
কেউ কী মনে করেন আধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরীর কৌশল, কোনো দেশ কি কোনো দেশকে দিয়েছে বা দিবে? অবশ্যই দিবে না।
শিক্ষাদান কৌশল তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। এটা কেউ আমাদেরকে দিবে না। গবেষণা করে যুক্তি দিয়ে নিজেদেরকেই খুঁজে নিতে হবে।
বাংলাদেশে বেশ পরিচিত এবং জার্মানিতে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জার্মান প্রফেসরকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ণে সহযোগীতা করার জন্য। তিনি সময়ের অজুহাত দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
৫
শিক্ষাপদ্ধতির উপর একটি বই লিখে সমাজের বেশ কিছু মান্যজনকে দিয়েছি। ভেবে ছিলাম তাঁরা জাতির স্বার্থে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিবেন।
মনে হয় তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছি।
জ্ঞানীজনদের কাছে সবিনয় অনুরোধ-
‘কে বলছে বিবেচনায় না রেখে, ‘কি বলছে তা কি যুক্তি দিয়ে বিচার করে জাতির বৃহৎ-স্বার্থে আমরা কী গ্রহণ করতে পারি না?’
আমাদের জ্ঞানের বাতিঘর :
প্রত্যেক জাতিরই রয়েছে জ্ঞানের বাতি ঘর। আমাদেরও আছে। নিজেকে আলোকিত করবো ভেবে তাঁদের কাছে যাবার সাধ্য মত চেষ্টা করেছি।
যেসব বাতি ঘরে যাওয়া সম্ভব হয়েছে দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে, মনে হয়েছে ঐ সকল বাতি ঘরের বাতি জ্বলছে অনেক অনেক পুরাতন জ্ঞানের জ্বালানিতে।
ঐরূপ জ্বালানির বাতি সমগ্র জাতিকে কখনই আলোকিত করতে পারে না পারবেও না।
জাতিকে আলোকিত করতে হলে, নিয়ত নবায়ণকৃত জ্ঞানের জ্বালানি একান্তই দরকার।
শ্রদ্ধেয় বহু জনের কাছে জানার জন্য জিজ্ঞাসা করেছি ‘শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয় কেন?’
উত্তর পাই নাই।
সন্মানীত পাঠক আমার লেখাটি একটু মনযোগ দিয়ে পড়লেই ‘শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদন্ড বলা হয়‘ আশা করি সহজেই বুঝতে পারবেন।
৬