স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে চার আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৫ মার্চ) গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় এক এসআই ও তিন এএসআই আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে শর্টগানের ৪ রাউণ্ড গুলি ছোড়ে।
গুরুতর আহত পুলিশ কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই গোবিন্দ, এএসআই আনিসুজ্জামান, কাজী বাবুল ও বাবুল হাসানকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে’ এমন ঘোষণা দিয়ে আসামিপক্ষের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে লোহাগড়া থানায় জ্ঞাত ২২জন এবং অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রোববার রাতে লোহাগড়ার আমাদা গ্রামে দাঙ্গা-হাঙ্গামার আসামি গ্রেফতার করতে যায় পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে আসামিরা পাশের কামালপ্রতাপ গ্রামে মাছের ঘেরে ঘুমিয়ে আছে। এ সময় আলী আহম্মেদ খানের ছেলে রাঙ্গু খান (২৭), অহিদার খানের ছেলে নাইস খান (২৫), গ্রাম পুলিশ দাউদ মল্লিকের ছেলে সোহেল মল্লিক (২৩) ও মন্টু মল্লিকের ছেলে সোহেল মল্লিককে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আমাদা পশ্চিমপাড়া মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয়, গ্রামে ডাকাত পড়েছে। এ ঘোষণায় আসামিপক্ষের লোকজন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় লোহাগড়া থানার এসআই গোবিন্দ, এএসআই আনিসুজ্জামান, কাজী বাবুল ও বাবুল হাসান গুরুতর আহত হয়েছেন।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মোহাইমিন জিসান বলেন, সোমবার ভোরে আহত অবস্থায় চার পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
লোহাগড়া ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে’-মর্মে আমাদা পশ্চিমপাড়া মসজিদ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। আমাদার হামিদ মল্লিক মসজিদের মাইকে এই অপপ্রচার করেন। ৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে আহত করে আসামি ছিনতাই করে নেয়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে শর্টগানের ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ২২জন নামীয় এবং অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের বিরুদ্ধে লোহাগড়া থানায় মামলা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, প্রায় আট মাস ধরে লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবুল কাশেম খান এবং প্রতিপক্ষ আলী আহম্মেদ খানের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছে।
গত ২৪ মার্চ ভোরে আলী আহম্মেদ খানের সমর্থকেরা আবুল কাশেম খান সমর্থকদের ১৫টি বাড়িঘর ভাংচুর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শিশুসহ তিনজন আহত হয়েছে। বাড়িঘর ভাংচুরের সময় প্রতিপক্ষের লোকজন কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড গুলি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ মোতায়েনের মধ্যেই এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমাদা গ্রামে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তা কোন কাজে আসছে না বলে জানিয়েছেন সচেতনমহলসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচটি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের ১৪ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এছাড়া গত দুই মাসে আমাদা গ্রামে দুইপক্ষের মধ্যে চারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাড়িঘর ভাংচুরসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়।