নড়াইলে এমদাদ-হোনজো বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করলেন জাপানী বন্ধু হোনজো

0
80

বাংলাদেশ ও জাপনী বন্ধুর অর্থায়নে নির্মিত স্কুল পরিদর্শন করলেন জাপানী নাগরিক মি. হোনজো ও তাঁর পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামে নারী শিক্ষার অগ্রসরে শিক্ষানুরাগী ড. সৈয়দ এমদাদুল হক ও তাঁর জাপানী বন্ধু রিউজুকে হোনজোর অর্থায়নে নির্মিত ‘‘এমদাদ-হোনজো আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়” পরিদর্শন করলেন রিউজুকে হোনজো ও তার পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছালে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে বিদ্যালয় চত্বরে বন্ধু রিউজুকে হোনজো র নাম ফলক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা সহ অতিথিবৃন্দ।

এ উপলক্ষে বিদ্যালয় চত্বরে অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের উপস্থিতি মত বিনিসময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিক্ষানুরাগী ড. সৈয়দ এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, বিশেষ অতিথি লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র, যশোর শিক্ষাবোর্ডর স্কুল পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহীন আহম্মেদ, লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার এমএম আরাফাত হোসেন, জাপানী নাগরিক রিউজুকে হোনজো, নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসরাম কালু, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী শামসুল হক সহ অনেকে।
বক্তব্যকালে স্কুলের অর্থদাতা জাপানী নাগরিক রিউজুকে হোনজো বিদ্যালয়ের উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে জাপানী শিক্ষানুরাগী রিউজুকে হোনজোর পরিবারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রসরে জাপানী বন্ধুর এই অবদান এই প্রতিষ্ঠানের সকলেই আজীবন স্মরণ করবে। আগামীতেও তাঁর সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

মতবিনিময় সভা শেষে একটি নাম ফলক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। জাপানী বন্ধু রিউজুকে হোনজো ও নোয়াগ্রামের কৃতি সন্তান ড. সৈয়দ এমদাদুল হকের অর্থায়নে লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামে ২০১৬ সালে ‘‘এমদাদ-হোনজো আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়”টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় হতে ২০১৮ সালের জে এসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ এলাকায় সুনাম ছড়িয়েছে।
ড. সৈয়দ এমদাদুল হক জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে জাপানের রাজধানী টোকিওতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। এর মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে জাপানী নাগরিক রিউজুকে হোনজো র সাথে।

ড. এমদাদুল হক অবহেলিত নিজের এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যপ্ত অর্থ সংগ্রহে না থাকায় তিনি তার ঘনিষ্ঠ জাপানী বন্ধু রিউজুকে হোনজো র সাথে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে হোনজো স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

সেই মোতাবেক ২০১৫ সালে নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের পূর্বপাশে শুরু হয় স্বপ্ন বাস্তবে রূপদানের। ড. সৈয়দ এমদাদুল হকের নিজের ক্রয়কৃত ৫০ শতক জমির ওপর ৫তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে দ্বোতলা পর্যন্ত নির্মাণ করে ৬ষ্ঠ হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চলছে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টি যশোর বোর্ড কর্তৃক একাডেমীক স্বীকৃতি পেয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ এমদাদুল হক বলেন, ‘‘ আমার জন্মস্থান লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামের অবস্থান জেলা শহর হতে ৩০ কিলোমিটার এবং লোহাগড়া উপজেলা শহর হতে ১৪ কিলোমিটার দূরে। গ্রাম থেকে জেলা ও উপজেলা শহরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সুযোগ পেলে এলাকায় একটি গালস স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। পড়াশোনা ও পেশাগত কারনে জাপানে অবস্থান করায় আমার স্বপ্নটি ঘনিষ্ঠবন্ধু হোনজো কে জানালে তাঁর কাছ থেকে ভাল সাড়া পাই। তিনি ২০১৫ সালে আমার এলাকায় পরিদর্শনে আসেন এবং স্কুল নির্মানে অর্থনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তখন আমাদের জমির ওপর স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করি। দুজনের এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্কুলটির নাম ‘‘ এমদাদ-হোনজো আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’’ নামকরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর এলাকাবাসীর সাড়াও পেয়েছি বেশ ভাল। মেধা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। যার কারণে বিদ্যালয়ের ফলাফলও সন্তোষজনক। ২০১৮ সালে জেএসসিতে নড়াইল জেলার মধ্যে শতভাগ পাশ করেছে আমাদের প্রতিষ্ঠান হতে। এবছর প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। আশা করি এসএসসিতেও ভাল ফলাফল হবে। আগামীতে স্কুল এ্যান্ড কলেজে উন্নীত করার স্বপ্ন রয়েছে।’’

এদিকে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পর অর্থদাতা জাপানী বন্ধু রিউজুকে হোনজো তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা স্কুলে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। সারাদিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে সময় দিয়েছেন। গল্প করেছেন, সেলফি তুলেছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি স্কুলে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আমার খুবই ভাল লেগেছে। বিগত সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন আমি দিয়ে আসছি। আগামীতেও আমি বেতনের অর্থ দিয়ে যাবো। ভবন নির্মানের জন্যে সহযোগিতা করবো।’’

বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানান, স্কুলটি হওয়া আমরা নির্বিঘ্নে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারি। আগে অনেক দূরের স্কুলে যাওয়া লাগতো। এখন অল্প সময়েই স্কুলে আসতে পারি। পড়াশেনাও ভাল হচ্ছে। অভিভাবক মোঃ আকায়েত হোসেন বলেন, আগে দুরের স্কুলে মেয়েকে পড়াতে ভয় লাগতো। দূরের স্কুলে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনা, বখাটেদের উপদ্রব সহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতো। কিন্তু বাড়ির কাছে স্কুল হওয়াতে আমাদের এখন ও কোন দুঃশ্চিন্তা করতে হয় না। তাছাড়া পড়াশোনার মানও অনেক ভাল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যায়ের শিক্ষকদের আন্তরিক চেষ্টায় অত্যান্ত সুনামের সাথে পাঠদান চলছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হলে দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে ১০ জন শিক্ষক কর্মচারীরা স্বাভাবিক ভাবেই জীবন যাপন করতে পারতো’।

নোয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে আর কোন বালিকা বিদ্যালয় নেই। এই বিদ্যালয়টি হওয়ায় মেয়েদের নিরাপত্তায় পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে কলেজে রূপান্তর করতে পারলে নোয়াগ্রাম, শালনগর, লাহুড়িয়া, ও নলদী ইউনিয়ন সহ আশেপাশের ইউনিয়নের মেয়েরা একটি গার্লস কলেজে পড়াশেনার সুযোগ পাবে।
নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, বিদেশী বন্ধু রিউজুকে হোনজো বাংলাদেশ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতেও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অন্যান্যক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা রইল।