এমএসএ
মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নড়াইল বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিসৌধের ঠিক পেছনে চিত্রার বুকে নেমে গিয়েছে বাধাইকৃত সিঁড়ি। সিঁড়ির ওপর লাল সবুজের রঙ। ঠিক যেন বাংলাদেশের পতাকা। স্থানটি ঘুরে এসে গত ৬ মার্চ তরুণদের সংঘটন নড়াইল ভলান্টিয়ার্স ফেসবুকে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। নিজেদের একাউন্টে তুলে ধরে, “কিছুদিন ধরেই বধ্যভূমি সংস্কারের কাজ চলছে। কিছুদিন আগ থেকেই দেখছি বধ্যভূমিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আলোকে সিঁড়ি রং করা হয়েছে। আমাদের স্বল্পজ্ঞানে মনে হয়েছে এখানে আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। আপনাদের মতামত জানতে চাই।”
মন্তব্যে সংহতি জানান অনেকে। নড়াইলের আইনজীবী বশিরুল হক লেখেন, “ঠিক হয়নি, সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দ্রুত রং পরিবর্তন করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।” ঝিমলি খান মন্তব্য করেন, “একেবারে ঠিক হয়নি জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে এই মুহূর্তে এটাকে পরিবর্তন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে দৃষ্টি আকষর্ণ করছি।” আবদুল্লাহ ফশিয়ার লেখেন, “ঠিকই বলেছেন আমাদের জাতীয় পতাকা অবমাননা করা হচ্ছে।” এদিকে বিষয়টিকে প্রতীকী হিসেবে দেখতে চান আমিরুল ইসলাম। তিনি মন্তব্য করেন, “যাদের কারণে আজকে আমরা পতাকা পেয়েছি তাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা স্বাধীন আমি মনে করি না লাল সবুজ রং দেওয়ায় পতাকা অবমাননা হয়েছে। এখন সেখানে যদি আমরা জুতা পরে অসম্মান করি সেটা ভিন্ন বিষয়।”
পরবর্তীতে প্রতীকীতে অবমাননা হবার আশংকায় সিড়ির রঙ পরিবর্তন করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ৮ মার্চ (শুক্রবার) নড়াইল ভলান্টিয়ার্স বধ্যভূমির সিঁড়িটির ছবিসহ পোস্ট করে। সেখানে লেখেন, “অবশেষে বধ্যভূমির সিড়ির রংটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করলে আমরা অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে পারি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ যারা আমাদের পাশে ছিলেন সবসময় নড়াইল ভলান্টিয়ার্সের সাথে থাকুন পরিবর্তনে অংশ নেন”।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে নড়াইল জেলা ছিল মহাকুমা। এসময় সারাদেশের মত নড়াইলেও ধর্ষণ, নির্যাতন এবং নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকবাহিনী। নড়াইলের নদীগুলোতে গণহত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দিত পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের দল। নড়াইল জেলা জজ আদালতের ২৫ গজ দূরে ডাক অফিসের দ্বিতল বাড়ির পেছনে অবস্থিত চিত্রা নদীর পাড়ের লঞ্চ ঘাট ছিল মানুষ বধের কারখানা। আটক বাঙালিদের ধরে এনে জল্লাদ দিয়ে নির্মম হত্যা চালাত পাকবাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগী আলবদর-রাজাকারেরা। এরপর চিত্রার বুকে সে লাশগুলো ফেলে দেয়া হত। গাঙের টানে স্রোতে ভেসে যেত লাশগুলো। মরদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিড়ে খেত শকুনের দল। পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক চিত্রা নদীর পাড়ে এই লঞ্চঘাটের পল্টুনের উপর ২৮০০ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় নড়াইল। স্বাধীনতার পর থেকেই চিত্রার পাড়ের এই বধ্যভূমিতে নিহত ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে নড়াইলবাসী।