ডেস্ক/নিউজ
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেট পড়ার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন প্রধানমন্ত্রী সংসদে বাজেট উপস্থাপন করলেন। বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিট তিনি বাজেট উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, কিছুদিন ধরে জ্বরে ভোগার পর মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে যান অর্থমন্ত্রী। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে রাতে হাসপাতালেই থেকে যান। এছাড়া বুধবার (১২ জুন) বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে হাসপাতাল থেকে পার্লামেন্টে যান তিনি। অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে অর্থমন্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় সংসদে প্রবেশ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল ৩টার দিকে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার সামান্য অংশ পড়েই অর্থমন্ত্রী অসুস্থতাজনিত কারণে দুইবার বিরতি নেন। বিকাল পৌনে চারটার পর বিরতি নিয়ে তিনি আর বাজেট বক্তৃতা পেশ করার অবস্থা না থাকলে অন্য কারও সহায়তা চান। এ সময় আগ্রহী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট বক্তৃতাটি সংসদে পেশ করেন। এর আগে, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এরপর অর্থমন্ত্রীকে বাজেট উপস্থাপনের জন্য আহ্বান জানান স্পিকার। এবারের বাজেট ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
এটি দেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে।
গতবছর সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন। তিনি টানা ১০ বার জাতীয় বাজেট পেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশে রেকর্ড গড়েন। ভ্যাট আইন কার্যকর ও বেকারদের জন্য ঋণ তহবিল গঠনসহ বেশ কিছু নতুন বিষয় থাকতে পারে এবারের বাজেটে। ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করা হতে পারে ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্রসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে। ঘোষণা থাকতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির।
দেশের জনগণের ওপর নতুন কোন করচাপ তৈরি করতে চান না অর্থমন্ত্রী। এজন্য তিনি এবারের বাজেটে করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবেন, যাতে করহার না বাড়িয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করা যায়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেটের করহারের বিষয়ে একাধিকবার বলেছেন, করের হার বাড়িয়ে কোন ধরনের করচাপ তৈরি হোক, এটা তিনি চান না। বরং করজাল সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতে চানা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য কানন কুমার রায় জানান, আগামী এক বছরে উল্লেযোগ্য সংখ্যক করদাতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে এবারের বাজেটে। বেকারদের জন্য প্রথমবারের মত ‘উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এছাড়া রফতানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ থাকতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তৈরি পোশাক পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যেভাবে প্রণোদনা পেয়ে আসছে, আরো কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, পুঁজিবাজারের ক্ষতির শিকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ঋণ ব্যবস্থার প্রস্তাব থাকবে এবারের বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৪ হাজার ৫০০ কোটি, কর ব্যতিত প্রাপ্তি ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সূত্রঃ বাসস।
