স্টাফ রিপোর্টার
সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক (ফিংগার স্ক্যানার) হাজিরা মেশিন ক্রয়ে শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্ব স্ব বিদ্যালয়ের ‘স্লিপ কমিটি’ স্বাধীনভাবে দেখেশুনে এ মেশিন ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক নেতাদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট বেশী দামে এ মেশিন ক্রয়ে বাধ্য করছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকরা কোনো মুখ খুলতে পারছেন না। এ অনিয়মের ঘটনায় নড়াইলের মিত্র কম্পিউটার, নিড কম্পিউটার, টাইম লাইন এবং ই-নেশন আইটি প্রতিষ্ঠান নড়াইল-২ আসনের এমপি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাইচ-চেয়ারম্যানসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং মেশিন ক্রয় আপাতত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ ৫ সদস্যের একটি ‘স্লিপ কমিটি’ এটি ক্রয় করবে। কিন্তু সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তা না মেনে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যশোরের খরহশশরহমপপ নামে একটি‘আইটি’ প্রতিষ্ঠান থেকে সদরের ১শ৭৫টি বিদ্যালয়ের সবগুলোতেই এ মেশিন ক্রয় করা হচ্ছে। খরহশশরহমপপ নামের এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমে ফাঁকা বিল ভাউচার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রধান শিক্ষকরা সিন্ডিকেটের নির্দেশ মতো ২৩ হাজার টাকার বিল করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, স্লিপ কমিটির মাধ্যমে স্বধীনভাবে তাদের এ মেশিন কেনার কথা থাকলেও তিন জন শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ৭জন শিক্ষক নেতা বেশী দামে বায়োমেট্রিক মেশিন কিনতে বাধ্য করছেন। সম্প্রতি এক প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্লাষ্টার মিটিংয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা এ মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
নড়াইল শহরের আইটি ব্যবসায়ী অজিত মিত্র ও সাব্বির হোসেন জানান, বিদ্যালয়গুলোর জন্য ড়হংঢ়ড়ঃ নামে যে কোম্পানির বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন নির্বাচন করা হয়েছে তা ব্রান্ডহীন ও নিন্মমানের। এ কোম্পনির ওয়েবসাইটে এ মেশিনটির মূল্য, গুনগত মান এবং যাবতীয় তথ্য থুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সদরের ২০টি বিদ্যালয়ে এ মেশিন কেনা হয়েছে। নড়াইল শহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম তুহিন বলেন, স্লিপের টাকা দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ৫সদস্যের শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ২৩ হাজার টাকা মূল্যে এ মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এটি ক্রয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়েছে কিনা এ প্রশ্নে বলেন, এটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভালো জানেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য সদর উপজেলা ভাইচ-চেয়ারম্যান তোফায়েল মাহমুদ তুফান এ প্রতিনিধিকে বলেন, মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মেশিন ক্রয়ে হস্তক্ষেপ এবং ব্রান্ডহীন মেশিন নিষেধ করলেও কোনো কর্ণপাত করেননি। তিনি প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকার দূর্নীতির আশংকার কথা জানান।
বায়োমেট্রক হাজিরা মেশিন বিক্রয়কারী আইটি প্রতিষ্ঠান যশোরের খরহশশরহমপপ-এর মালিক মোঃ আরিফ ফোনে জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটির সাথে ১শ৭৫টি স্কুলে মেশিন, কেবল, সফটওয়্যার সাপোর্টিং,সার্ভিস চার্জসহ ২১ হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছে এবং ২০টি স্কুলে এ মেশিন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আমাদের এ মেশিনকে নিন্মমানের ব্রান্ড বলার চেষ্টা করছেন তাদের মেশিন সম্পর্কে কোনো ধারনাই নেই।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসিত বরণ পাল বলেন, এ মেশিন ক্রয়ে নেতৃ পর্যায়ের কিছু শিক্ষক আমার কাছে এসে পরামর্শ চেয়েছিল। শুধুমাত্র তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি ক্রয়ে আমাদের কোনো প্রভাব নেই। আপনারা শিক্ষকদের কাছে শুনবেন শিক্ষা অফিসার কোনো টাকা চেয়েছে কিনা?
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়ারুল ইসলাম জানান, বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় ৯ জুলাই ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত মেশিন ক্রয় স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।