ডেস্ক/এসএস
খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ সালে জন্মগ্রহণ করা গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের বিরুদ্ধে তরুণদের ভুলপথে চালিত করা, ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং দুর্নীতিকে প্রশয় দেওয়ার মতো অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে হেমলোক নামের বিষপান করিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে মৃত্যুর এত বছর পরেও কমেনি সক্রেটিসের জনপ্রিয়তা।
তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছিলেন, যা দীর্ঘ ২০০০ বছর পর ও পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। অথচ প্রাচীন গ্রিসের শাসকরা সক্রেটিসের তত্ত্বগুলিকে মানতে চায়নি। বরং নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তারা নির্মম ভাবে হত্যা করে এই সুক্ষ চিন্তার জগৎখ্যাত দার্শনিককে। তাই মৃত্যুর ২৪১৫ বছর পরে আবারো প্রশ্ন ওঠে সক্রেটিসের অপরাধের সত্যতা নিয়ে।
ইতিহাসবিদের মতে এথেন্সের তৎকালীন আরাধ্য দেবতাদের নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সক্রেটিস। একই সাথে তাঁর বিরুদ্ধে অত্যাচারী শাসকদের সমর্থনেরও অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও বলা হয়ে থাকে যে সক্রেটিস নির্দোষ হলেও মুখ বুজে বিচারকদের রায় মেনে নিয়েছিলেন। তাছাড়া মৃত্যুর আগে পালানোর সুযোগ পেলেও তিনি সেই সুযোগ গ্রহণ করেন করেননি। এছাড়াও তরুণদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, নতুন দেবদেবীদের সম্পর্কে প্রচার করা ইত্যাদি কারণে সক্রেটিসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে আদালতে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ বিচারপর্বে তুলে ধরা যায়নি বলেই অভিযোগ ওঠে।
যদিও হেমলক বিষপান করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বীনা সত্ত্বে মাথা পেতে নিয়েছিলেন সক্রেটিস তবু ও তাঁর প্রতি এই অবিচার এখনও মেনে নিতে পারেননি আনেকেই। এজন্য তিনি আদেও দোষী ছিলেন কি না, সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য এথেন্সের ওনাসিস ফাউন্ডেশনের একটি আদালতে ফের নতুন করে বিচারব্যবস্থার আয়োজন করা হয়। আর সেই বিচারেই মৃত্যুর ২৪১৫ বছর পর সক্রেটিসকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে সক্রেটিসের সমর্থনে লড়াই করা আইনজীবী বলেন, ‘‘কোনো ব্যক্তির অভিমত অপরাধ হতে পারে না। সক্রেটিস সত্যের সন্ধান করতেন। আর তা করতে গিয়েই তিনি তাঁর নিজস্ব মত তুলে ধরতেন। তবে আমার মক্কেলের একটাই দোষ, তিনি উস্কানিমূলক কথা বলে মানুষকে খ্যাপাতেন। আর সবসময় বাঁকা বাঁকা কথা বলতেন। যেমন- তিনি বলতেন, ‘দেখাও তোমাদের গণতন্ত্র কতটুকু খাঁটি ও বিশ্বাসযোগ্য’ ইত্যাদি।’ কিন্তু তিনি আরও বলেন যে সাধারণ মামলাকে জটিল করার জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দেওয়াটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ’’
সক্রেটিসের হয়ে এই মামলায় ফ্রান্সের এই বিখ্যাত আইনজীবী তার পক্ষে লড়াই করেন। বিপরীতে গ্রিস-সহ বেশ কয়েকটি দেশের আইনজীবীরা সক্রেটিসের বিরোধিতা ও করেন। এই মামলার বিচারের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপীয় বিচারকদের সমন্বয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল তৈরি করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরে সক্রেটিসের আইনজীবীর যুক্তিতেই সিলমোহর দেন বিচারকরা। তাছাড়া গত বছর নিউইয়র্কের একটি আদালতেও সক্রেটিস নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন। এতে সক্রেটিসের ভক্তদের আনন্দ বহু গুণ বেড়ে যায়।