সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে গোপন চুক্তি

18
6

মুক্তি পেতে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছিলেন ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল। সৌদি রাজপরিবারের সদস্য ওয়ালিদ বিন তালাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে প্রায় তিন মাস আটক রাখা হয়েছিল। এরপর তিনি গোপন চুক্তি করে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেতে তিনি সৌদি সরকারের সঙ্গে ‘নিশ্চিত বোঝাপড়ার’ ভিত্তিতে একটি গোপন চুক্তি করেছিলেন। তবে এটাকে তিনি কোনোভাবেই সমঝোতা চুক্তি বলতে নারাজ। ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সবচেয়ে স্বীকৃত ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রিন্স আলওয়ালিদ। আলওয়ালিদ বিন তালাল বিশ্বজুড়ে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব সরকার ও আমার মধ্যে নিশ্চিত বোঝাপড়া হয়েছে। এটা কনফিডেনশিয়াল এবং গোপন চুক্তি। সেই চুক্তিকে আমার সম্মান করতেই হবে।’

গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দুর্নীতির অভিযোগে প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালসহ ১১ যুবরাজ ও সাবেক এবং বর্তমান ৩৮ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ। বরখাস্ত করা হয়েছে নৌবাহিনীর প্রধানকে। প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালসহ প্রায় এক ডজন প্রিন্সকে দুর্নীতির অভিযোগে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে বন্দী রাখা হয়েছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে। এর তিন মাস পর এ বছরে ২৭ জানুয়ারি মুক্তি পান তিনি। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বেশির ভাগ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতা হওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল।

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতিবিরোধী ব্যাপক ধরপাকড়ে আটকের প্রায় তিন মাসের বন্দিত্বের দিনগুলোর কথা গণমাধ্যমকে জানালেন প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল। ২৭ জানুয়ারি মুক্তির আগে তিনি ৮৩ দিন রাজধানী রিয়াদের বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলে বন্দী ছিলেন। তবে তিনি ‘গ্রেপ্তার’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাদশাহের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারপর বলা হয় হোটেল রিটজ-কার্লটনে যেতে। আমাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে করা হয়েছে।’

তবে সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী ব্যাপক ধরপাকড়ে রাষ্ট্রের তহবিলে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি জমা হয়েছে। সে অর্থ কীভাবে তা তিনি জানাননি।

বন্দিত্বের দিনগুলো সম্পর্কে প্রিন্স ওয়ালিদ বলেন, তখন তিনি সকাল ৬টা বা ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। খেলাধুলা ও হাঁটাহাঁটি করে, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে সময় কাটাতেন। বাইরের সব খবরই তিনি জানতে পারতেন। হোটেলের ভেতরে ব্যাপক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বা উত্তেজনার বশে কিছু করলে তাঁকে শান্ত করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তবে সেটা প্রথাগত কোনো নির্যাতন নয়। আমার ফোন করার সুযোগ ছিল। আমি ছেলেকে, মেয়েকে, নাতি-নাতনিকে ফোন করতাম। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতাম।’

তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি উল্লেখ করে প্রিন্স ওয়ালিদ বলেন, ‘সবার কাছে এটা পরিষ্কার করতে চাই যে এখানে অভিযুক্ত করা বা অপরাধ স্বীকারের মতো কিছু ছিল না। এটা ছিল ভুল-বোঝাবুঝি। সেখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে একটি নিশ্চিত বোঝাপড়ায় পৌঁছেছিলাম। তবে এটা খুবই গোপনীয়।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। তাই কোনো সমঝোতাও করিনি। অনেকে এটাকে সমঝোতা বলতে পারেন। তবে আমি তা বলি না। কারণ, সমঝোতা মানে এটা স্বীকার করে নেওয়া যে আমি কোনো অপরাধ করেছি। আমি তেমন কিছু করিনি।’

প্রিন্স ওয়ালিদ বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হলেন পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের চেয়ারম্যান। এর সঙ্গে তার আলোচনা চলছিল সৌদি আরবের ভেতরে বিনিয়োগ নিয়ে। রিটজ কার্লটন হোটেলে থাকার আগে থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছিল। এ আলোচনায় তার ফোর সিজনস হোটেলটি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের অধীনে রেড সি প্রজেক্টের আওতায় আনার কথা হচ্ছিল।

চাচাতো ভাই যুবরাজ সালমানের হাতে বন্দী হয়ে কেমন লেগেছিল? জানতে চাইলে প্রিন্স ওয়ালিদ বলেন, ‘স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বন্দী হওয়াটা সহজ না। তবে আমার মধ্যে কোনো খারাপ লাগা নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাদশাহের কার্যালয়, সালমান ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়ে গেল। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্য।’

সালমানের সঙ্গে প্রিন্স ওয়ালিদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় বলে মন্তব্য করে ওয়ালিদ বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টিই ভুলে গেছি ও ক্ষমা করে দিয়েছি। তাঁর সঙ্গে আমার কথা বা খুদে বার্তা আদান-প্রদান হয় না, এমন তিন দিনও যায় না। তবে কথার চেয়ে খুদে বার্তা আদান-প্রদান হয় বেশি।’ প্রিন্স বিন সালমান সৌদিতে নতুন যুগের সূচনা করেছেন বলে তিনি মনে করেন।

তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।