স্টাফ রিপোর্টার
সদ্য বিদায়ী নড়াইল সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে সদর উপজেলা সরকারি প্রাথিমিক শিক্ষক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করেছে। বৃহস্পতিবার (১০মে) বিকেলে নড়াইল প্রেস ক্লাবে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সদর উপজেলা সরকারি প্রাথিমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারি শিক্ষক অমিতোষ বিশ্বাস এবং সাধারন সম্পাদক সহকারি শিক্ষক আমিনুর রহমান লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ২৯ মার্চ ২৩৫/২৭নং স্মারকে শুন্য পদে কোনো সার্কুলার ছাড়া সদর উপজেলার ৮টি স্কুলের সহকারি শিক্ষককে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে বদলি করেছেন। যেমন- সদরের পাচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শামীমা নাসরিনকে নীতি বহির্ভূতভাবে সদরের বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছেন। মার্চ মাসের ২৯ তারিখে শামীমাকে বদলির আদেশ দেওয়া হলেও শামীমা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাচুড়িয়া স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এবং ৭ এপ্রিল বনগ্রাম স্কুলে যোগদান করেছেন। আবার সদরের বনগ্রাম সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিপ্রা দাস সম্প্রতি অন্যত্র বদলী হয়েছেন। তিনি (বিপ্রা) ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বনগ্রাম সঃ প্রাঃ স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার ২৭ মার্চ এই স্কুলের সহকারি শিক্ষক পদ শূন্য দেখিয়েছেন। ইতোপূর্বে শিক্ষক শামীমাকে মোটা অংক উৎকোচের বিনিময়ে নিয়ম বহিভূতভাবে সদরের বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে মৌখিক আদেশে এক বছর ডেপুটেশনে রাখা হয়।
শিক্ষক নেতারা জানান, ওই শিক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কক্ষ ও শিক্ষার্থী না থাকলেও তিনি নড়াইল শহর, শহর সংলগ্ন এবং যাতায়াত ব্যবস্থায় সুবিধা হওয়া কমপক্ষে ৮টি স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক বদলি করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি অনুদান শ্লিপের বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকা হতে ১শ ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি স্কুল থেকে তিনি ১৫শত টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এসব স্কুলের আন্তঃ প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয় প্রতি ১৮শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি ১৫শ টাকা করে বিতরণ করেছেন। এছাড়া গত অর্থ বছরে সদরের ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামত কাজে বিদ্যালয় প্রতি বরাদ্দকৃত ১লাখ থেকে ২% ভ্যাটের জায়গায় ২০% টাকা কেটে নিয়েছেন। সদ্য জাতীয়করণকৃত শিমুলতলি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমলেংশু বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ২০হাজার টাকার বিনিময়ে প্রয়াত শিক্ষকের পাওনা অর্থ পরিশোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ৩জন শিক্ষককে আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্য প্রাইমারী শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা সাহায্য তোলা হলেও সাহায্যপ্রার্থী শিক্ষকদের প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়ে বাকিটা তিনি নিজে পকেটস্থ করেছেন।
তারা অভিযোগে জানান, ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিদায়ী শিক্ষা কর্মকর্তা নড়াইল-২ আসনের এমপির নিকট আতœীয় হওয়ায় তিনি অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি করে গিয়েছেন।
শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে বদলি হওয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, শিক্ষক বদলীর বিষয়টি ডিপিইও দেখেন। আর শ্লিপের টাকা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা,বিদ্যালয় মেরামত, শিক্ষকদের সাহায্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি শিক্ষকদের একটি ছোট গ্রুপ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহ আলম বলেন, যেহেতু ওই শিক্ষা অফিসার অন্যত্র বদলী হয়ে চলে গেছেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ আনলে বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা বা ডিজি মহোদয় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন। উল্লেখ্য, আবু হেনা মোস্তফা কামালের সম্প্রতি এডিপিও পদে পদোন্নতি পেয়ে বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসে তার যোগদান করেছেন।