স্টাফ রিপোর্টার
২০১৬ সালের দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় মাদ্রাসা বোর্ডে নড়াইল জেলার ১ম এবং খুলনা বিভাগে ৩য় স্থান অধিকারী রাফিসা তাসনিম তামান্না এবারের আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষায় ফলাফল স্থগিত দেখানো হয়েছে। নড়াইলের শাহাবাদ মাজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্রী তামান্না এ বছর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডর অধিনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেয়। তার রোল- ২০৫১৪০, রেজিঃ নং-১২১৮৭৯২৩০২। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চতর গনিত পরীক্ষায় তার উত্তরপত্র থেকে ৫টি অংক কেটে ফেলে একই মাদ্রাসার ছাত্র ইখলাসুর রহমান।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ইখলাস আলীম পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়ে পাশ করেছে। মেডিকেল ভর্তি কোচিং করা মেধাবী ছাত্রী তামান্না লিখিত অভিযোগে জানায়, শাহাবাদ মাজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গত ৭মে উচ্চতর গণিত প্রথমপত্র পরীক্ষা চলাকালে নির্ধারিত সময়ের ১৫-২০ মিনিট পূর্বে উত্তরপত্র সম্পন্ন করে হল পরিদর্শকের কাছে জমা দেন। এ সময় একই হলে পরীক্ষা দেওয়া একই বিভাগের পরীক্ষার্থী ইখলাসুর রহমান(রোল-২০৫১৪৬,রেজিঃ নং-১৩১৮৮২০৬৯৫) কৌশলে হল পরিদর্শক মোহাম্মদ ইমরান এর কাছ থেকে তামান্নার উত্তরপত্র নেয় এবং হিংসার বশবর্তী হয়ে তামান্নার উত্তরপত্র থেকে ৫ টি অংক কেটে খাতা টেবিলে রেখে দৌড়ে পরীক্ষা কেন্দ্র ত্যাগ করে। ঘটনাটি তামান্নার সন্দেহ হলে হল সচিবকে বিষয়টি জানায়। হল সচিব তামান্নার খাতাটি পরীক্ষা করে দেখেন তার ৫টি অংক কেটে দেয়া হয়েছে। এ সময় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামান্নার উত্তর পত্রটি সংশোধনের সুযোগ দেয়। এ ঘটনায় তামান্না ১৫মে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবরে এবং ২০ মে নড়াইল জেলা প্রশাসকের বরাবরে অভিযোগ করে। তার অভিযোগ, একই কায়দায় পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে তার উত্তরপত্রে কাটাকাটি করে তার ভাল ফলাফল করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই ১৯ জুলাই আলিম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় তার ফলাফল স্থগিত হয়ে গেছে।
কেন্দ্র সচিবের দ্বায়িত্বে থাকা টোনা ইসলামীয়া আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল সাইদী তামান্নার উত্তরপত্র কাটাকাটির বিষয়টি স্বিকার করে বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে সমাধান করা হয়। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের তদন্তেও আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। এরপর আমার আর কিছু জানা নেই।
তামান্নার পিতা স্থানীয় শাহাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাওলানা রফিউদ্দিন জানান, একই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওঃ দেলোয়ার হোসেনের পূত্র তামান্নার সহপাঠি ইখলাছ হিংসার বশবর্তী হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো শিক্ষক তামান্নার অন্যান্য পরীক্ষার উত্তরপত্রও নষ্ট করতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, ৫টি অংক কেটে দেওয়ার ঘটনায় হল সচিব কেন্দ্র পরিদর্শককে শো-কজ করলেও সেই কাগজ ছিড়ে ফেলে দেয় মাওঃ জিল্লুর রহমান । তবে মাওঃ জিল্লুর রহমান এ কাগজ ছিড়ে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শাহাবাদ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রকিব বলেন, ঘটনার সময় ঢাকাতে ছিলাম। তামান্নার খাতা পূনর্মূল্যায়নের জন্য মাদ্রাসা থেকে লোক পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ইখলাস ৫টি অংক কেটে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে।
তামান্নার ফলাফল স্থগিত এবং উত্তরপত্র কাটাকাটির বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদরের সহকারী কমিশনার(ভূমি)মো.আজিম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনার পর পরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। মেধাবী ছাত্রীটি যেন তার প্রকৃত ফলাফল থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সুপারিশ করা হয়েছে।