ডেস্ক রিপোর্ট
টেস্টে না পারলেও ওয়ানডের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজও জিতে নিলো সফরকারী বাংলাদেশ। আজ (সোমবার) ফ্লোরিডার লডারহিলে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ক্যারিবিয়দের ১৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো সাকিব আল হাসানের দল।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচের সিরিজ জিতেছিলো টাইগাররা। ২০১৫ সালের পর আবারো টি-২০ সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে টস লড়াইয়ে জিতে ব্যাটিং-এর সিদ্বান্ত নেন সাকিব। ব্যাট হাতে নেমে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ফোটান বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। ৪ ওভারে স্কোর বোর্ডে বাংলাদেশকে ৫৬ রান এনে দেন তারা। এ সময় লিটনের রান ১২ বলে ৩৫ এবং তামিমের ১২ বলে ২১।
শুরুটা উড়ন্ত করার পর পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে কার্লোস ব্র্যাথয়েটের শিকার হয়ে নিতে হয় আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় তামিমকে। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৩ বলে ২১ রানেই থামতে হয় থাকে। তামিমের বিদায়ে ক্রিজে যাবার সুযোগ ঘটে সৌম্য সরকারের।
ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা সৌম্য কেমো পলের বলে পাওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১টি চারে ৪ বলে ৫ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। এই ফরম্যাটে শেষ দশ ইনিংসে তার মোট রান ৮৭। এরপর চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে লিটনের সাথে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। এ সময় লিটনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাওয়ার প্লে’তে ৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষ হবার পর দলের স্কোর বড় করার পথেই হাটচ্ছিলেন লিটন ও মুশফিক। কিন্তু জুটিতে ৩১ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হতে হয় তাদের। ১৪ বলে ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মুশফিক।
মুশফিক ফিরে যাবার কিছুক্ষণ পর উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন লিটনও। কেসরিক উইলিয়ামসের বলে এ্যাশলে নার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৫তম ম্যাচে টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া ও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬১ রান করা লিটন। ৩২ বল মোকাবেলা করে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা নিজের ইনিংসটি সাজান লিটন।
১১তম ওভারে দলীয় ১০২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে দারুন এক জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন অধিনায়ক সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রান তোলার গতি ধরে রেখে স্কোর বোর্ডকে শক্তপোক্ত করছিলেন তারা।
তবে ১৬তম ওভারের শেষ বলে থামতে হয় সাকিবকে। ২টি চারে ২২ বলে ২৪ রান করেন সাকিব। দলনেতা যখন ফিরেন তখন দলের স্কোর ১৪৬। ইনিংসে ৪ ওভার তখন বাকী ছিলো। এ অবস্থায় শেষ ৪ ওভারে ৩৮ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ ও সাত নম্বরে নামা আরিফুল। ফলে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। নিজেদের টি-২০ ইতিহাসে পঞ্চম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটি।
মাহমুদুল্লাহ ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২০ বলে অপরাজিত ৩২ ও আরিফুল ১টি চারে ১৬ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও কেমো পল ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৮৫ রানের টার্গেট খেলতে ভালো শুরুর পথেই যাচ্ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু উদ্বোধণী জুটিতে ২৬ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হতে হয় ক্যারিবীয়দের দুই ওপেনার চাঁদউইক ওয়ালটন ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে। ৬ রান করা ফ্লেচারকে শিকার করেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
কিছুক্ষণ পর থামতে হয় ওয়ালটনকেও। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম তার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়লে বাকী বল শেষ করার জন্য আক্রমনে আসেন মিডিয়াম পেসার সৌম্য। ঐ ওভারের পঞ্চম বলেই ওয়ালটকে তুলে নেন সৌম্য। ১৯ রান করেন ওয়ালটন। তিন নম্বরে নামা মারলন স্যামুয়েলসকে বোল্ড করে বাংলাদেশের হাতে ম্যাচের লাগাম দিয়ে দেন সাকিব।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ অবস্থায় দলকে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করেন রোভম্যান পাওয়েল ও দিনেশ রামদিন। রান তোলার গতি বাড়িয়ে দলকে খেলায় ফেরার চেষ্টায় ছিলেন তারা। নিজেদের পরিকল্পনায় সাফল্যও পেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পাওয়েল ও রামদিনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। জুটিতে ৩৫ বলে ৪৫ রান আসার পর রামদিনকে থামান রুবেল।
বেশিদূর যেতে পারেননি পাওয়েলও। ফলে ৯৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কারন এসময় ৪১ বলে ৮৯ রান প্রয়োজন ছিলো ক্যারিবীয়দের।
তবে এ অবস্থায় ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনা করে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন হার্ড-হিটার আন্দ্রে রাসেল। উইকেটে গিয়েই ছক্কার নেশায় মেতে উঠেন তিনি। তবে অন্যপ্রান্ত দিয়ে কোন সহায়তা পাচ্ছিলেন তারা রাসেল। তারপরও নিজের সেরাটা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ফলে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশকে চিন্তা মুক্ত করেন মুস্তাফিজ। ভয়ংকর রাসেলকে বিদায় দেন তিনি। ৬টি ছক্কা ও ১টি চারে ২১ বলে ৪৭ রান করেন রাসেল। তার বিদায়ের পরপরই বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাড়ায় ১৭ দশমিক ১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান। এসময় বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে পিছিয়ে ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ইতি টানেন আম্পায়ার ও রেফারিরা। ফলে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে ম্যাচ হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৪/৫ (লিটন ৬১, তামিম ২১, সাকিব ২৪, মাহমুদউল্লাহ ৩২*, আরিফুল ১৮*; ব্র্যাথওয়েট ২/৩২, পল ২/২৬, উইলিয়ামস ১/৩২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৭.১ ওভারে ১৩৫/৭ (ওয়ালটন ১৯, পাওয়েল ২৩, রামদিন ২১, রাসেল ৪৭; আবু হায়দার ১/২৭, রুবেল ১/২৮, মুস্তাফিজ ৩/৩১, সৌম্য ১/১৮, সাকিব ১/২২)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইসে বাংলাদেশ ১৯ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: লিটন দাস
সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান
Pic: AFP