স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল বাস টার্মিনাল থেকে ৬টি রুটের কোনোটিতেই যাত্রীবাহী বাস ছাড়া হয়না। বর্তমানে এখানে সামান্য কিছু বাস পার্কিং করে রাখা হয়। জেলায় কোনা ট্রাক ষ্টান্ড না থাকায় অনেক বালু ভর্তি ও খালি ট্রাক এখানে পার্কিং এবং বালু বেচা-কেনা হয়। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস যাত্রী ওঠানো নামানো এবং যত্রতত্র পার্কিং-এর কাজ চলায় শহরেরর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘ ৬ বছর ধরে টার্মিনালের প্রবেশ মূখের একটি বড় গর্তে নড়াইল পৌর এলাকার নিত্য দিনের ময়লা ফেলা হচ্ছে। ফলে এর দূর্গন্ধে টার্মিনালে আসা বাষের যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা টিকতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনালটি অব্যবহৃত থাকায় এটি ব্যবহারে আরও অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।
নড়াইল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে শহর থেকে আধা কিঃমিঃ দুরে নড়াইল-যশোর সড়কের সাথে লাগোয়া মৎস অফিসের পশ্চিম পার্শ্বে ২০০৫ সালে নতুন বাস টার্মিনাল নির্মান করা হলে এখান থেকে নড়াইল-মাইজপাড়া, নড়াইল-শংকরপাশা, নড়াইল-কালিয়া, নড়াইল-মাগুরা, নড়াইল-যশোর ও নড়াইল খুলনা রুটে বাস ছাড়া হতো। টার্মিনালকে কেন্দ্র করে অর্ধ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। দু’বছর যেতে না যেতেই এটি ব্যবহারে বাস মালিক ও শ্রমিক পক্ষের নেতিবাচক মনোভাব, টার্মিনাল সংস্কারের অভাবসহ বিভিন্ন কারনে গত ১০ বছর ধরে এটির ব্যবহার বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালের মূল ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন রং না করায় ভবনটিও বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। গাড়ি পার্কিং এর নির্দিষ্ট জায়গায় ছোট-বড় গর্ত হয়ে গেছে। টার্মিনালের ভেতরে কয়েকটি নষ্ট বাস ট্রাকে রিপিয়ারের কাজ করছে। দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি গাড়ি রিপিয়ার করার বড় গ্যারেজ। ভিতরে বিভিন্ন স্থানে গরু চরানো হচ্ছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে এটি একটি গরুর খামার। টার্মিনালের ভেতরে মূল গেটের সামনে শহরের বিভিন্ন বর্জ্য ফেলছে পৌরসভার কয়েকজন পরিচ্ছন্ন কর্মী।
নাম প্রকাশে অনিুচ্ছুক এক বাস চালক জানায়, তিনি প্রতিদিন জেলা আ’লীগ কার্যালয়ের সামনে মেইন রোডের পাশে গাড়ি পার্কিং করেন। কারন নতুন বাস টার্মিনালে গন্ধে যাওয়া যায়না। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং করেন তিনি।
শহরের তুলি আর্ট এবং ডিজিটাল প্রিন্ট হাউজের মালিক মিঠুন কুমার জানান, তার ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সামনে সর্বক্ষনিক ৩ থেকে ৪টি বাস অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। এতে তার মত অনেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। তার দাবী বাস-ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হোক।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সাবলম্বির নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, বাস টার্মিনালের সামনে ময়লা ফেলায় একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবার এটি ব্যাবহার না করায় আরও ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। দ্রুত টার্মিনালটি ব্যাবহার উপযোগি ও চালু করে শহরকে যানজট মুক্ত করতে হবে বলে জানান।
জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক নেতা তাপস মিনা জানান, নতুন টার্মিনালটি শহর থেকে একটু দূরে হওয়ার কারনে যাত্রীরা এখানে যেতে চায় না। ফলে টার্মিনাল থেকে অনেকটা যাত্রী ছাড়াই বাস ছাড়তে হয়। মালিক পক্ষ এটাকে লস মনে করেন। এছাড়া এখানে শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই।
জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাজী জহিরুল হক জানান, নতুন বাস টার্মিনালে কোনো নিরাপত্তা নেই, অনেকে টাকে বালুর ব্যবসা করে, টার্মিনালে প্রবেশ মুখে পৌরসভা ময়লা ফেলে। সংস্কারের অভাবে এটি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় নড়াইল পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টার্মিনালটি শহর থেকে একটু দূরে ও এক পাশে হওয়ায় যাত্রীরা এখানে যেতে চায় না। বাইপাশ সড়কও নেই। তারপরেও টার্মিনালটি ব্যবহারের উপযোগি এবং সবাই আন্তরিক হলে টার্মিনালটি আবার চালু করা যায়।
নড়াইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র রেজাউল বিশ্বাস বলেন, টার্মিনাল চালু থাকলেও বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন তাদেও স্বার্থগত কারনে সেখানে যান না। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা বাস ছাড়ার ব্যবস্থা করে থাকে।
নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, টার্মিনালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একটি প্রকল্পও করা হয়েছে। আশা করছি আগামি বছর আর্থিক সহায়তা পেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। দ্রুতই নতুন স্থান নির্ধারন করে সেখানে ময়লা অবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।