স্টাফ রিপোর্টার
আজ ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে নড়াইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদেশীয় রাজাকার ও পাক সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে নড়াইলকে মুক্ত করে। ৭ তারিখ শহরের মাছিমদিয়ায় রাজাকারদের হাতে কলেজ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান ও ৯ তারিখ শহরের রূপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থানরত পাকিস্তানি রিজার্ভ ফোর্স, পুলিশ ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হলে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল গতিতে হানাদারদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়। নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও খড়রিয়া মুক্তযোদ্ধা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে শহরে ত্রিমুখি আন্দোলন শুরু করে।
এদিন রাতে আনুমানিক দেড়’শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রূপগঞ্জ ওয়াপদায় অবস্থিত পাকিস্তানি ও রাজাকার বাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্যাম্পের দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে রূপগঞ্জ জামে মসজিদ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমির হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেন রানার নেতৃত্বে বর্তমান উৎসব কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাঈদুর রহমান সেলিম, জিন্দার আলী খান, মোঃ কুবাদের নেতৃত্বে এবং ব্যবসায়ী মালেক মোল্লার দোতলায় সদর উপজেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শরীফ হুমায়ুন কবির, হালি মুন্সি, সাইফুর রহমান হিলু, শেখ আজিবর রহমান, ফজলুর রহমান জিন্নাহ প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুপক্ষের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাক বাহিনীর দু’সেন্ট্রি গুরুতর আহত হলে তারা ভীত হয়ে পড়ে। পরে ১০ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনীর অধিনায়ক বেলুচ কালা খান ২২ পাকিস্তানি সেনা, ৪৫ জন রাজাকার ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ মক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় নড়াইল। এর পূর্বে ৮ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানা এবং ১০ ডিসেম্বর কালিয়া থানা শত্রুমুক্ত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে গণকবর ও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, শহরে শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে গণসংগীত ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এছাড়া ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় শহরের রূপগঞ্জ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধের মাধ্যমে যেভাবে নড়াইলকে মুক্ত করেছিল; ঠিক সেভাবে চিত্রা থিয়েটারের নাট্য কর্মিরা প্রতিকি যুদ্ধ এবং পাক হানাদার ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণের দৃশ্য অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাবেন।