নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজনীতির মাঠে নেমেই বিশাল ছক্কা মারলেন এবং জয় ছিনিয়ে নিলেন নড়াইল এক্সপ্রেসখ্যাত মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। খেলোয়াড় থেকে রাজনীতিক মাশরাফী এখন দেশের সেবা করার জন্য প্রস্তুত। তাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে নড়াইলবাসী। তাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়ে আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। তারা মনে করেন, তারুণ্যেও প্রতিক মাশরাফী দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করতে পারবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে নৌকার মাঝি ছিলেন মাশরাফী। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নড়াইলের ইতিহাসে এতো বেশী ব্যবধানের বিজয় আর কেউ পাননি। পাহাড় সমান বাঁধা ডিঙ্গিয়ে এবং শরীর পুরোপুরি ফিট না থাকা স্বত্ত্বেও গত ২১ডিসেম্বর নড়াইলে এসে এক সপ্তাহের তার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। তিনি ও তার স্ত্রী সুমনা হক সুমি দেড় শতাধিক পথসভা ও উঠান বৈঠকে যোগ দিয়েছেন এবং লাখো মানুষের মন জয় করেছেন। এই তরুণ যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই ছিল অসংখ্য তরুণ-তরুনীর ভীড়। মানুষ যখন খবর পেয়েছেন, মাশরাফী এই পথ দিয়ে আসবেন তখন থেকেই তারা তার অপেক্ষার প্রহর গুনেছে এক নজর দেখার জন্য। ফর্সা, সুদর্শন, ৬ফুট লম্বা মাশরাফীকে এক নজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হাজার হাজার মনুষ। তাকে দেখতে এসে ভীড় সামলাতে না পেরে অকেজন আহতও হয়েছেন। তার নির্বাচনী বহরে অধিকাংশই ছিল তরুণরা। বহরে কাওকে না আসতে বললেও অসংখ্য মটরসাইকেল নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত থেকেছে তরুণরা। এমন দৃশ্য না দেখলে বোঝা যাবে না। যেখানে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কর্মী খুজে পাওয়া যায় না, সেখানে মাশরাফির বেলায় সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয় দেশের প্রায় ২০টি জেলা থেকে ৩শতাধিক তরুণ মাশরাফি ভক্ত নড়াইলে এসেছে এবং তাদের নিজ খরচে প্রিয় ম্যাশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তারুণ্যের সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন ম্যাাশ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠন ছাড়াও তরুন সমাজ, সাধারণ ভোটার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষ তার জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টি এমন হয়ে গিয়েছিল যে ‘দল যার যার, মাশরাফি সবার’। ভোটের মাঠেও তার প্রতিফলন দেখা দিল। ভূমি ধ্বস বিজয় পেলেন মাশরাফি। তারুণ্যের প্রতিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। আর তারুণ্যই যে শক্তি তারই প্রমাণ দিলেন লাজুক, স্বল্পভাষি ও প্রচার বিমুখ এই মানুষ বিজয়লাভের পর সাংবাদিকদের এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি,খেলাধুলার উন্নয়নে কাজ করবেন।
নড়াইলে এখন একটি আস্থার নাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মাশরাফী। ইতোমধ্যে তা কিছুটা হলেও তা প্রমাণ করেছেন। ২০১৭ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর নড়াইলে তার নেতৃত্বে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সম্পূর্ণ সেচছাসেবী ও জনকল্যানমূলক সংগঠন গড়ে ওঠার পর সেবামূলক বেশ কিছু ভালো ভালো কাজ শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এসব জনকল্যানমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে- দুস্থ মানুষকে স্বাস্থ সেবা ও শিক্ষার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা, কম খরচে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন থায়রো কেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি ডায়াগনোষ্টিক ল্যাবরোটারির প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট কার্যক্রম, শহরের দু’টি পয়েন্টে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু, তৃণমূল পর্যায় হতে ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় অন্বেষন ও বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, শহরে অত্যাধুিনক একটি জিম নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু, গ্রীণ ও ক্লিন নড়াইল করতে শহর ও লোহাগড়া পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ১২০টি ডাস্টবিন স্থাপন, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ১ হাজার কৃষকের মধ্যে বীনামূল্যে ধানের বীজ বিতরণ এবং নড়াইল শহর এবং লোহাগড়া পৌর এলাকার ২৫টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। এসব সেবামূলক কাজ করার কারনে মাশরাফীর ক্রিকেটার হিসেবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এখানকার রাজীতিবিদ, সাধারন মানুষ এবং তরুণদের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য,শিক্ষা, খেলাধুলা, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাশরাফী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এখন এসব উন্নয়ন আরও সক্রিয় ও দৃশ্যমান হবে। আর তিনি যদি মন্ত্রী হন তাহলেতো কোনো কথাই নেই।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে মানুষ মাশরাফিকে ভালোবেসে এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সাথে মানুষ একাত্ম হয়ে নৌকায় ভোট দিয়েছে। নড়াইলের উন্নয়নে মাশরাফি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাকে যদি মন্ত্রীত্ব দেন তাহলে অবহেলিত এ জনপদে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন।
এদিকে ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বিপিএল এর ৬ষ্ঠ আসরের খেলার জন্য মঙ্গলবার (১ জানুয়ারী) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওনা হয়েছেন। মনোনিবেশ করবেন রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা এনে দেওয়া এই দলপতি।
প্রসঙ্গত, মাশরাফী এ আসনে তিনি ২ লক্ষ ৭১ হাজার ২১০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্ধী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৮৮৩ ভোট। এ আসনে মোট ভোটার ৩লাখ ১৭ হাজার ৮৪৪ জন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় ক্রিকেট দলপতি মাশরাফি নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন এবং তার রাজনীতিতে আগমন ঘটে। ২০ ডিসেম্বর লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাশরাফী একটা হীরের টুকরা। সেই হীরের টুকরাকেই আমি আপনাদেরকে উপহার দিলাম।