এমএসএ
আর কি দেবার বাকি আছে? বব ডিলানের গানটি মনে পড়ে গেল। মানুষকে মানুষ হতে হলে আর কত পথ পাড়ি দিতে হবে? হাটতে হবে সুদীর্ঘ পথ? হয়তো ফ্রস্টই এর উত্তরটি ভালো দিতে পারেন। প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগোতে হবে। দুচোখ বন্ধ হবার আগে যেতে হবে যতদূরে যাওয়া যায়। এভাবেই কর্তব্য কাঁধে আর বল হাতে নিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে দৌড়ে চলেছেন। স্বপ্ন একটাই। দেশের হয়ে একটি বল করার। বুঝতেই পারছেন কার প্রসঙ্গে কথা বলছি। এতটা উপমা না দিয়ে সরাসরি বলা যেত। তবে আর কতবার আমাদের অবাক করতে থাকবেন মাশরাফী। ১৮-১৯ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দুপায়ে ৭টি মেজর অপারেশন নিয়ে আজও তাঁর পারফর্মেন্স দিয়ে মুগ্ধ করে চলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
মাশরাফী আজ জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। দেশের ক্রিকেটে তাঁর অবদান বলে বোঝানো সম্ভব না। ২০০৬ সালে ৪৯টি উইকেট নিয়ে মাশরাফী হয়েছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট অধিকারী। একবার তো টেস্টে ভারতের বিপক্ষে এক ওভারে পরপর চার ছক্কা হাঁকিয়ে ২৬ রান তুলেছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ান ডে ম্যাচে জয় ও জয়ের এভারেজের রেকর্ডটিও তাঁর। আট বছরে (২০১০-২০১৮) ৭০টি ম্যাচের মধ্যে দেশকে ৪০টি ম্যাচে জয় এনে দিয়েছেন। ২০২টি ম্যাচের মধ্যে ১২টি ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ২০০ ম্যাচ খেলার অর্জনও তাঁর দখলে। ২০০৭ সালে এশিয়া একাদশে ও আইপিএলে ডাক পান মাশরাফী। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তাঁর প্রতিনিধিত্বে দেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। দলে তাঁর ভূমিকা বলে শেষ হবে না। কি মনে হয়? সুস্থ মানুষের দ্বারা এত কিছু সম্ভব? ঠিকই অসুস্থ দৃঢ়চরিত্রের মানুষের দ্বারাই এমন কিছু সম্ভব। ইনজুরির জন্য ২০০৯ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ছেড়েছিলেন টেস্ট। অব্যক্ত কোন কারণে ২০১৭ সালে জাতীয় টি২০ দল থেকে সড়ে দাঁড়ান। কি কথা ছিল? স্বাভাবিক চিন্তায় আসে, এমন শারীরিক অবস্থায় তাঁর টি২০ খেলা উচিৎ ছিল। কিন্তু কেন এই ৫০ ওভারের কন্টকাকীর্ণ ফর্ম্যাট তিনি বেছে নিলেন? সমালোচকরা হয়তো বলবেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের জন্য। ঠিক তাই! একটাই আত্মবিশ্বাস দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো। বড় কিছু অর্জনের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এরপর কি? শেষ?
মাশরাফীকে দিয়ে আসলে কোন ভরসা নেই! কখন কি করে বসে! ভাবতেই অবাক লাগে ৪ বারের বিপিএল জেতা মাশরাফী দেশের টি২০ দলে নেই। এখনো নিজের ফিটনেস, লাইন, লেংগথ দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে চলেছেন। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে রংপুরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ম্যাশ। আজ আবার প্রমাণ করলেন এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি। বল হাতে ঝলসে উঠেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে (৮ ডিসেম্বর) কুমিল্লার বিপক্ষে নির্ধারিত ৪ ওভারে ১১ রান খরচ করে তুলে নিলেন ৪টি উইকেট। টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটাই তাঁর সেরা বোলিং ফিগার। আবার দলকে জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এরপর আর কি দেবার বাকি থাকে?