এমএসএ
চলে গেলেন সংগীতের জাদুকর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইলাহি রাজিউন)। শুধু যাওয়ার সময় রেখে গেলেন তাঁর সৃষ্টি ও অসংখ্য স্মৃতি। দীর্ঘদিন হৃদরোগে ভুগে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকলের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গানের পাশাপাশি দেশ ও মানুষের প্রতি এই বরেণ্য শিল্পীর ছিল এক অন্যরকম প্রেম ও ভালোবাসা। আজ তাঁর বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। এই গুণী শিল্পীকে হারিয়ে দেশের যে ক্ষতি হল তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তিনশ’র অধিক বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। দেশের একমাত্র সুরকার যিনি সব থেকে বেশি দেশের গান করেছেন। আধুনিক গানেও ছিল তার আধিপত্য। দেশের সংগীতে অবদানের জন্য ২০১০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন আহেমদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এ ছাড়া তিনি সংগীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছিল গভীর প্রেম। ক্রিকেট যে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলছে এ বিষয়টি তিনি বুকে অনুধাবন করতেন। দল হারলেও তার মুখে কখনো আফসোস আসেনি। বরাবরই অনুপ্রেরণা যোগাতেন শিল্পী। বাংলাদেশ দলকে তিনি বাঘা বাহিনী বলে সম্বোধন করতেন। দলের অধিনায়ক মাশরাফীকে বাঘ মামা বলে ডাকতেন তিনি। প্রয়াত ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতির পৃষ্ঠা উলটাতে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৬-২০১৭ সালের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রাপ্তিও ছিল অনেক। ইংল্যান্ডের ঐ সফরে টেস্টে প্রথম বারের মত তাদের পরাজিত করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে কথা বলবো ৭, ৯ ও ১২ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ম্যাচগুলি প্রসঙ্গে। কারণ ম্যাচগুলির সাথে জড়িয়ে আছে ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতি ও ভালোবাসা।
৭ অক্টোবর, ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে। ম্যাচটিতে ২১ রানে হারে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ৩০৮ রানের টার্গেটে সব উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা। মাশরাফী সে দিন ২ উইকেট নিয়েছিলেন। অধিনায়ক মাশরাফীর মন খারাপ দেখে তাঁকে উৎসাহ দিতে বুলবুল ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “ও royal Bengal tiger মামা, আপনাকে আমরা হালুম হালুম tiger এর মতোই দেখতে চাই, অন্য কিছুর মতো নয়। Good Luck, বাঘা মামা”।
৯ অক্টোবর টসে হেরে ব্যাট করতে যায় টাইগাররা। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান সংগ্রহ করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এত কম রান করে জেতা মুশকিল ছিল। সেদিন বল হাতে গর্জে ওঠে বুলবুলের বাঘ মামা। ২০৪ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরা হন অধিনায়ক মাশরাফী। বুলবুল মনে করতেন বিশ্ব ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফী শ্রেষ্ঠ। মনে প্রাণে একথা বিশ্বাস করতেন তিনি। ১০ অক্টোবর তিনি আবার লিখেন, “Dear বাঘা মামা, আপনাকে ও আপনার সহযোগী বাঘা বাহিনীদের জানাই ১৬ কোটি বাংলাদেশীর সালাম, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। (গতকাল আপনার সামান্য ব্যাঘ্রনখ এর আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত English Cricket Team, আগামীদিন আপানার অসামান্য ব্যঘ্রথাবার পরিণতি দেখার অপেক্ষায় রইলাম) আপনাকে জানাই ‘লাল সবুজ” পতাকার উড়ন্ত বিজয়ী উল্লাস। আপনার অপর নাম G.Cap (the greatest captain)”। হুবহু একথা লিখেন তিনি।
১২ অক্টোবর ছিল দেশবাসীর জন্য দুঃখের দিন। ২৭৭ করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ভালো খেলেও স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে হারতে হয় ইংরেজদের কাছে। ১৩ তারিখ বুলবুল মাশরাফীর একটি হাসিমাখা মুখের ছবি পোস্ট করে লিখেন, “Dear বাঘা মামা, Wonderful captaincy and wonderful play. No দুশ্চিন্তা No মনকষ্ট এবং No চোখেরজল। আমরা ১৬ কোটি বাংলাদেশী আপনাদের আনন্দ – বেদনায় পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো আজীবন, ইনশাল্লাহ”।
ইংল্যান্ড এর কাছে ওডিআই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও টেস্টে ১-১ ব্যবধানে ড্র করতে বাধ্য হয় ইংল্যান্ড। ১ম টেস্ট হারের পর সিরিজের ২য় টেস্টে ১০৮ রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে আনে বুলবুলের বাঘাবাহিনী। টেস্টে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। দেশের মানুষের মনে জেগে ওঠে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসমাখা ভালোলাগা।