স্টাফ রিপোর্টার
জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের বেতকান্দি এলাকার এশারত বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বেলতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হওয়ায় দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করলেও এলাকার কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
ইতোমধ্যেই এশারত বাহিনী একই ইউনিয়নের আইগবেড়া গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেনের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তার মধ্য হতে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে। বাকী ৮০ হাজার টাকা দাবি করে নিয়মিত ইসমাইল হোসেনকে মারপিট ও খুন জখমের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এশারত বাহিনী।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজাদপুর থানায় ইসমাইল হোসেনের দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইসমাইল হোসেন একজন দিন মজুর ও পান সুপারি বিক্রেতা। গত ০৪/০১/২০১৯ ইং তারিখে ইসমাইলের প্রতিবেশী বরাত আলীর মেয়ে সুমী খাতুন (১৫) তার ছেলে আশরাফ আলী (২০)’র সাথে প্রেমের দাবিতে বিয়ের জন্য তার বাড়িতে ওঠে। এ সময় সে মেয়ের বাবা সহ গ্রাম্য প্রধানদের শরণাপন্ন হয়।
মেয়ের বাবা বরাত আলী এবং এলাকার প্রধান আব্দুল গফুর, পিতা- মৃত. জুলমত ও আঃ সামাদ, পিতা- মৃত. ইমান আলী সহ অন্যান্যরা ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ায় বিয়ের ব্যবস্থা না করে মেয়েকে তার বাবা আশরাফ আলীর সাথে পাঠিয়ে দেয়। তাছাড়াও আশরাফ আলী ছেলের বাবা ইসমাইলের গরীব সংসারে মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনা যেকোন ভাবে জানতে পেরে এলাকার সন্ত্রাসী ১. এশারত আলী (৬০), পিতা- মৃত. কছের প্রামানিক ও তার ৩ পুত্র আঃ লতিফ (৪৫), আনোয়ার হোসেন (৩৫), মোঃ বাবু মিয়া (৩০) কে সঙ্গে লইয়া ইসমাইলের বাড়িতে হাজির হয়।
উভয়ের মুখে ঘটনা জানার পর এশারত ও তার বাহিনী উক্ত প্রধান আঃ গফুর এবং আঃ সামাদকে মারপিট করে। মারপিটের পাশাপাশি হতদরিদ্র ইসমাইল হোসেনের ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। গত ১৩/০১/২০১৯ ইং তারিখে সকাল ১১ টায় ইসমাইল তার জীবন রক্ষার্থে স্ত্রী আয়শা খাতুন ও স্ত্রীর বড় ভাই মোঃ আঃ কুদ্দুসকে সঙ্গে নিয়ে চরবেতকান্দি এলাকায় গিয়ে ২০ হাজার নগদ টাকা এশারতের হাতে তুলে দেয়। বাকী ৮০ হাজার টাকা দেয়ার কোনই সামর্থ্য নেই বলেও এশারতের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে।
কিন্তু, সন্ত্রাসী এশারত তাতে রাজি না হয়ে বাকি ৮০ হাজার টাকার জন্য তাকে মারপিট ও হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে ইসমাইল হোসেন গত ২৪/০১/২০১৯ ইং তারিখে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর এবং একই তারিখে স্বাক্ষরিত অন্য একটি অভিযোগ গত ২৫/০১/২০১৯ ইং তারিখে শাহজাদপুর থানায় দায়ের করে। পাশাপাশি এশারত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হওয়ায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বরাবর গত ২৯/০১/২০১৯ ইং তারিখে ইসমাইল হোসেন এশারতের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
এশারত ও তার বাহিনীর এ চাঁদাবাজি বন্ধ এবং ইসমাইলের দেয়া ২০ হাজার টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সকল স্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং উপজেলা আওয়ামী দলীয় সকল নেতা-কর্মীর কাছে জোর দাবি জানিয়েছে অসহায় দিনমজুর ইসমাইল হোসেন।
এ ব্যাপারে এশারত আলীর সাথে তার বাড়িতে গেলে, এশারত ও তার ছেলে জানান, ইসমাইলের ১ লাখ টাকা চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। তার কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশে একটি মহলের জোকসাজোগে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে । আমি কাউকে মারিনি শুধু দুই একটা চর থাপ্পড় দিয়েছি ।
রফিক নামের স্থানীয় একজন জানান, হেনো অপকর্ম নেই যা এশারত বাহিনী এই এলাকায় ঘটনায় না। পূর্বে ব্যাংক ডাকাতির হোতা এই এশারত প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, প্রকাশ্যে নারীদের সম্ভ্রমহানী, জুয়া, যাত্রা আয়োজন করে এলাকার তরুণ ও যুব সমাজকে নষ্ট করাই তার কাজ। এই সকল অপকর্ম করে সে অল্প দিনেই বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেছে।
তিনি আরো জানান, গত ২০১৭ সালে উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্য জেলা প্রশাসক বরাবর এশারতে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, বিভিন্ন অসামাজিক কাজের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেসময় বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছিল। তাই এখনই এই কুখ্যাত এশারত ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি না দিলে তার দ্বারা সমাজ ও এলাকার মানুষের জানান মালের অপূরনীয় ক্ষতি হতে পারে।
ছবিঃ এশারত