সম্পাদনা, অভিজিৎ কর্মকার
শ্রদ্ধেয় সাব্বির আহমেদ স্যারকে বলেছিলাম। স্যার, আমার কাছে শ্রদ্ধেয় মমতাজউদদীন আহমেদ স্যারের একুশে ফেব্রুয়ারির উপর দেওয়া বক্তব্যটি রেকর্ড আছে। আমি রেকর্ডকৃত বক্তব্যটি লিখব। স্যার আমার কথা শুনে আমাকে মমতাজউদদীন স্যারের রেকর্ডকৃত বক্তব্যটিকে লেখার জন্য খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন। বিইউবিটিতে মমতাজ উদদীন স্যার বক্তবটি দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। বক্তব্যটি আমি রেকর্ড শুনে শুনে কঠিন ধৈর্য নিয়ে লিখেও ছিলাম। কিন্তু যে খাতায় লিখেছিলাম ওই খাতাটি হারিয়ে ফেলেছি। এক সপ্তাহ ধরে কম বেশি দশ বারো ঘন্টা খোঁজাখুজি করার পরেও রেকর্ড থেকে ভাষিত বক্তব্যটি কোথাও খুঁজে পেলাম না। কোন খাতায় লিখেছি তা ও আমার স্মরণে নেই। এরপর শ্রদ্ধেয় সোলায়মান স্যারের কথা মোতাবেক রেকর্ড শুনে পুরো বক্তব্যটি পুনরায় লিখি। রেকর্ড শুনে শুনে দীর্ঘ বক্তব্য খাতা কলমে লিখে তারপর আবার মুঠোফোনে লেখাটা কঠিন ধৈর্যের কাজ। আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে সামনা সামনি (মঞ্চে বসে) এ যাবৎ অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি ও বক্তার বক্তব্য শুনেছি। শ্রদ্ধেয় মমতাজ উদদীন স্যার ও শ্রদ্ধেয় বিশ্বজিৎ ঘোষ স্যার তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। কেননা, পারিভাষিক শব্দ ব্যতীত তাঁরা কেউই তাঁদের বক্তব্যের মাঝে একটাও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন নি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহসীন রেজা স্যারের বক্তব্যও আমাকে খুব মুগ্ধ করতো। স্যারের বক্তব্য আমি বহুবার শুনেছি। এখনও আমার কানে বাজে। বিশ্বজিৎ ঘোষ স্যার ও মহসীন রেজা স্যারের বলার শৈলী ও বাংলা উচ্চারণ এততাই চমৎকার যে, যার বর্ণনা দিতে আমি সম্পূর্ণ অপারগ। শ্রদ্ধেয় মমতাজউদদীন স্যারের মূল বক্তব্যটি ১৯মিনিট ৫৯ সেকন্ড। সম্পূর্ণ বক্ত্যবটি পড়লে যে কেউ নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন।
১) ” সকলে আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন। আমি বাংলা ভাষার লোক। আপনাদের কাছে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে এবং কৃতার্থ বোধ করছি। তার চেয়ে বড় কথা, আমি আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছি। …একুশে ফেব্রুয়ারি, এই শব্দটি এখন আর ইংরেজি শব্দ নয়। বাংলা হয়ে গেছে। বাংলাতে বহু বিদেশী শব্দ আছে। এই একটা শব্দ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি,। “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ”। ইনশল্লাহ এটা এখন আর শুধু আরবি শব্দ নয়। যেমন; হেডমৌলভী। ‘হেড’ ইংরেজি ‘মৌলভী’ আরবি। দু’টো মিলিয়ে বাংলা শব্দ হয়ে গেছে। ‘আনারস’, এলাচ রস। একটা সংস্কত অন্যটা বিদেশী। দু’টো মিলে আনারস হয়ে গেছে। এরকম বহু শব্দ আছে বাংলা ভাষাতে।
আমার অকৃপণতো নই, আমরা নেকমহারামও নই। আমরা উদার। আমাদের শব্দ আছে ‘পাউরুটি’। পর্তুগিজ শব্দ। ‘পাউ’ মানে রুটি পর্তুগিজ ভাষায়। ‘রুটি’ মানে রুটি সংস্কৃত ভাষায়। দু’টো মিলিয়ে রুটিরুটি হয়ে গেছে। আমরা যেকোন একটা শব্দ নিয়ে খেলা করতে পারি। এ যোগ্যতা আমাদের ভাষার আছে। আমাদের সমাস আছে, সন্ধি আছে, কারক আছে, বিভক্তি আছে, প্রত্যয় আছে, সাদৃশ্য আছে। আমরা ক এই কৃৎ ধাতু দিয়ে বহু শব্দ তৈরি করেছি। করতে পারবো এখনও।
আমাদের শব্দ সংখ্যা কম নয়। আমিতো মনে করি,আমাদের শব্দ সংখ্যা প্রায় দু’লাখ। আমরা কথা বলি কম শব্দ দিয়ে। আমার জননী, আমার মা হয়তো আট-নয়শো শব্দ দিয়ে কথা বলতেন। আমার মা তেমন শিক্ষিত ছিলেন না। আমিও নিজেকে শিক্ষিত মনে করি না। আমি আর কত শব্দ দিয়ে কথা বলি? বড়জোর দু’হাজার। এর বেশি তো আর পারি না। কিন্তু আমার মায়ের ভাষাতে দু’ লাখেরও বেশি শব্দ আছে। অনেক সমৃদ্ধ আমাদের শব্দভান্ডার। এত সমৃদ্ধ, এত উচ্চকিত, এত আরম্ভিত, এত সুরভিত, এত মাধুর্যময় আমাদের ভাষা। আমাদের ভাষা কোন অংশে হীন নয়। ”যে জন বঙ্গতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী/সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি”। বাংলাদেশে বাস করবেন। বাংলাদেশের ভাত খাবেন। বাংলার কই মাছ খাবেন। আর ফর ফর করে ইংরেজি বলবেন। জ্বী না। এটা আমি পারবো না। মানবোও না। আমার ভাষাকে আপনি দূষিত করলে আমি আপনাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করবো। আপনি চলে যান যেখানে খুশি সেখানে। চলে যান পাহাড়ে, মরুভূমিতে। বাংলার বুকে আপনার মতো কুলাঙ্গারের ঠাঁই নাই। আমি আমার ভাষাকে কোনভাবেই দূষিত ও বিকৃত হতে দেব না। আমার মায়ের ভাষা, ভাইয়ের ভাষাকে বিকৃত করার অধিকার আপনার নেই।
মাতৃভাষা। এই শব্দটির ইংরেজি শব্দ মাদার টাং বা মাদার ল্যাংগুয়েজ। এর বাংলা হয়েছে প্রথম বোধ হয় ১৮৫৪ সালে। আমাদের খুবই শ্রদ্ধেয় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (খুব সম্ভবত) এই মাদর টাং ইংরেজি শব্দটির বাংলা করেছিলেন মাতৃভাষা। এই ভাষা যে শুধু আমার মা বলেন, তা নয়। এই ভাষা আমার বাবা বলে, শ্বশুর বলে, শাঁশুড়ি বলে, আমার ছেলে বলে, মেয়ে বলে, আমার বাড়ির কাজের লোক বলে, আমার স্ত্রী বলে, এমন কি আমার প্রেয়সীও বলে। ওগো, কেমন আছো? আমি তোমাকে ভালোবাসি। ছি!ছি!এ তুমি কি বলছো? এরকম বহু আবেগমাখা শব্দ দিয়ে আমার প্রিয়জনরা আমার মাতৃভাষায় কথা বলে। আমাদের মহিলারা প্রায়ই স্বামীকে বাবা বলেন। এমনটি বলায় কেউ কিছু মনে করবেন না, “বাবারে বাবা,ছাড়তো বাবা। আর পারছি না বাবা”। এটা কিন্তু বাবা অর্থে বাবা নয়। এই বাবা মানে প্রিয়, প্রিয়। একইভাবে বিবাহিত পুরুষ, স্বামীরাও স্ত্রীকে কখনো কখনো মা বলেন, “মাগো মা, তোমার জ্বালায় আমি আর থাকতে পারলাম না। আমি সংসার ধর্ম সব ছেড়ে চলে যাব জঙ্গলে”। এত শৈলী, এত কৌশল, এত ভাঙাচোরা, এত সাদৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় খুঁজে পাওয়া যাবে কি’না আমি জানি না। যা আমার মায়ের ভাষাতে রয়েছে। আমার মাতৃভাষা ষোড়শী, সুন্দরী, অপূর্ব তুলনারহিত। আমি কি এমনি ভালোবাসি আমার ভাষাকে। আমার ভাষা আমাকে খাওয়াচ্ছে বলেই তো, ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। আমার দেহে রক্ত বেশি নেই।পুষ্টিকর খাদ্য খেতে পারিনি, সেই সময়। ১৯৫২ সালে।
২) আমি গিয়েছিলাম মানিকগঞ্জের পাড়ি গ্রামে।সেখানে একজন ভাষা শহিদকে দেখতে গিয়েছিলাম। নাম রফিকউদ্দীন। রফিক উদ্দীনের সাথে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তার নাম পলোবিনী। তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তার গায়ে হলুদ হয়েছিল। ভাষা শহীদ রফিকউদ্দীনেরও গায়ে হলুদ হয়েছিল। রফিকউদ্দীনের বাবা ঢাকা শহরে ছিলেন সদরঘাটে, পেশায় বুক বাইন্ডার। রফিকউদ্দীন মানিকগঞ্জের কলেজে পড়ালেখা করতেন। ঢাকা এসেছিলেন বিয়ের বাজার করতে। বেশি বয়স না। ২৫ কি ২৬ বছর হবে।চুলগুলো ঘন,কালো।তখনকার, সে যুগের রাজা কলম। বিয়ের বাজার করতে এসে মিছিল দেখে সে ঢুকে পড়েছিল। ঠিক ৩ টা ৩৩-৩৪ মিনিটে একটা গুলি ছুটলো। একেবারে সোজা গুলিটা দেখল রফিক উদ্দীন কোথায় আছে? সাই করে, গুলিটা তার মাথায় ঢুকে গেল।রফিকউদ্দীনের মগজটা রাস্তায় পড়েছিল। বাংলা ভাষার প্রথম শহীদ রফিকউদ্দীন। আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। রফিকউদ্দীনের কবর নেই। মাওলানা আব্দুল গফুর তিনি জানিয়েছেন যে, জানাজা পড়ানো হয়েছে। আমার কেন জানি একথা বিশ্বাস হয় না। কারও জানাজা পড়ানো হয়নি। সব লাশ যেখানে সেখানে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ লাশ কবরে থাকবে না। উঠে আসবে। এ লাশ উঠে আসবে। ২৫-৩০-৪০ বছর পর, উঠে এসে বলবে, “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই”। এ লাশ আমার সঙ্গে আছে। এ লাশ আমার চিত্তের সঙ্গে আছে, আমার ভাষার সঙ্গে আছে, আমার মায়ের সঙ্গে আছে, আমার জনপদের সঙ্গে আছে।
এই যে আবুল বরকত। তিনি নয়া পল্টনে থাকতেন মামার বাড়ি। আদি নিবাস মুর্শিদাবাদ।রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এম.এ ক্লাসের ছাত্র। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন মেডিকেল কলেজের ১২ নম্বর ব্যারাকের সামনে। হঠাৎ গুলিটা এসে লাগলো তার পায়। অঝরে রক্ত ঝরলো। অঝরে রক্ত ঝরলো। তখনকার ডাক্তার নার্স রক্ত দিলেন। তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হল। আটটার সময়। রাত আটটা। এম.এ ক্লাসের ছাত্র, লিকলিকে পাতলা। সেই ছেলেটই এখনও দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা,পাতলা। ভাষা শহীদ বরকত। রাত আটটার সময় তিনি বললেন যে, আমি চলে যাচ্ছি। আমার মামাকে খবর দিয়েন। আমারই হাত দিয়ে চলে গেল, বরকত… চলে গেল। আমার বন্ধু, আমার ভাই, আমার সহোদর, সে বাংলা ভাষায় কথা বলে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে জীবন উৎসর্গ করে সে চিরতরে চলে গেল।
জব্বর এসেছিল তার অসুস্থ্ শাঁশুড়িকে দেখতে।একটা গুলি এসে বিঁধলো জব্বরের শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে জব্বর মারা গেলেন।
এই যে হুগলি জেলার শফিউর রহমান সাহেব।হাইকোর্টের কেরানি ছিলেন। সাইকেল করে আসছিলেন নবাবপুর রোডে। গুলি করলো পেছন থেকে। সাইকেলটা পড়ে গেল। তিনিও পড়ে গেলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হল। তিনি মারা গেলেন হাসপাতালে। তখন তার স্ত্রী অন্ত্বঃসত্তা। তার মৃত্যুর পর তার সন্তান হল। ভাষা শহিদ শফিউরের সন্তানের নাম শফিকউর রহমান। তার সাথে আমার দেখা হয়েছে,কথা হয়েছে। এসব দেখা। আপনারও দেখবেন। আপনারও জানবেন। বাংলাদেশের যে কোন ঘাসকে গিয়ে বলেন। বরকত কোথায়? উত্তর দেবে, সঙ্গে আছে। রফিক কোথায়? উত্তর দেবে, এইতো সঙ্গে আছে। আপনিইই তো বরকত। আপনিই তো শফিক, সালাম, জব্বর, রফিক।
৩) কবর নেই, মাত্র দু’টি কবর আছে। শফিউর রহমানের কবর আছে। খুব অনুরোধ করেছিলেন, তার স্ত্রী, শ্বশুর, শাঁশুড়ি, আত্নীয় স্বজনরা। লাশটা আমাদের দিয়ে দেন। আমার কাফন পড়াবো।গোসল করাবো।তারপর লাশটা কবরে দেব। জায়গা জমি আমরা কিনে দিচ্ছি আজিমপুর কবরস্থানে। আবুল বরকতের মামার জায়গা কেনা ছিল আজিমপুর কবরস্থানে। তাকে সেখানে দাফন করা হয়। এখন দু’টি মাত্র কবর আছে। আপনার গেছেন নিশ্চয় সেখানে। পাশাপাশি দু’টি কবর। বাংলা ভাষার কবর। আমার ভাইয়ের কবর, আমার অস্তিত্বের কবর, আমার আত্নীয়ের কবর। তারা কেউই মরেনি। কি করে মরবে? প্রায় ত্রিশ বত্রিশ কোটি মানুষের মুখের ভাষা এখন বাংলা। প্রায় দুই লক্ষ শব্দ। আমরা আরবি, ফারসি, সংস্কৃত, ইংরেজি, চীনাজাপানি, জর্মনী, ওলন্দাজ, পর্তুগিজ, হিন্দি সব ভাষার শব্দকে গ্রহণ করেছি। আমরা নিয়েছি অকাতরে,উদার করে দিয়েছি আমাদের বক্ষ। ইরান থেকে এসেছ, আরব থেকে এসেছ বল শব্দ বল। “আম্মা লাল তেরি খুনে কিয়া খুনিয়া” “লা শরিক আল্লা” আমরা সব শব্দ নিয়েছি। আমার বাংলা ভাষা বড় উদার। আমরা আরবি ফারসি থেকে প্রায় ৪০০০ শব্দ নিয়েছি। আমার মা বেশি শব্দ জানতেন না, তাতে কি হয়েছে? আমাদের ভাষায় পর্তুগিজ শব্দ আছে কম বেশি ২০০। ইংরেজি শব্দ আছে প্রায় ১২,০০০। আমরা সব শব্দ আমাদের করে নিয়েছি। টেবিল নিয়েছি। চেয়ার নিয়েছি। জাঁদরেল নিয়েছি জেনারেল থেকে।পিয়ন নিয়েছি আদারলির জায়গায়।এগুলো এখন আর ওদের শব্দ না। অলিখিতভাবে আমাদের হয়ে গেছে। এই তোর বাপের কি তেরটেরি আছে। এই তেরটেরি মানে টেরিটরি। নির্দিষ্ট ভূখন্ড।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। সাধারণ ছাত্ররা বলল আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙবো। সেদিন রাতে বাঙালি ডিসি কে বদলি করে দেওয়া হল সিলেটে। তার জায়গায় আনা হল একজন অবাঙালি ডিসিকে। যাতে তিনি গুলি করার হুকুম দিতে কুন্ঠিত না হন। সাধারণ ছাত্র ও জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে অবাঙালি ডিসি মহোদয় হুকুম দিয়েছিলেন, গুলি কর… গুলি কর, বাঙালিকে গুলি কর। বাংলার অ আ ক খ কে গুলি কর।
আমরা ভাষার জন্য জীবন দিলাম, রক্ত দিলাম, মগজ দিলাম…ভাষার জন্য বিরোধ হয়েছে আসামে তবে ইতিহাসের পাতায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির মত হৃদয় বিদারক ঘটনা বিরল। আমরা একটা অনন্য উদারণ স্থাপন করেছি। ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্ববরের পর সারা পৃথিবীব্যাপী ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা স্নাত হয়ে গেছে। দু’জন কানাডা প্রবাসী বাঙালি সালাম ও বরকত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ১৯৯৯ সালে এই অনুপম কাজটি করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতিসংঘে বহু দিবস আছে। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতি সংঘের ১৮৪ টি দেশ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াটা আমাদের জন্য পরম প্রাপ্তি ও গৌরবের বিষয়।
বাঙালি হয়ে বাংলা ভাষাকে অবহেলা করবেন না। বাংলা ভাষার মাধ্যমকে শক্ত করেন, উপযুক্ত করেন। সম্ভব হলে বাংলা ভাষাকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যান।এতেআপনার গৌরব বাড়বে বই কমবে না। জাপানে গিয়ে দেখেন। সেখানে তারা সবকিছু তাদের নিজেদের ভাষাতে চর্চা করছেন। আমরা গরিব দেশ। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানকে আমাাদের ভাষাতে অনুবাদ করতে আরও সময় লাগবে। তবে একদিন পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করাটা আমাদের ভাষাতে সম্ভব হবে যদি আমরা আমাদের ভাষার প্রতি যত্নশীলও আন্তরিক হই। পাশাপাশি বিদেশী ভাষাটাকে যদি চমৎকারভাবে চর্চা করি।
কিছু লোক বেপরোয়া হয়ে গেছে। সবাইকে ইংরেজি শেখাতে চায়। আমার বাবাকে চায়।আমাট মাকে চায়।আমার কৃষককে চায়। আমার ছোট শিশুকে চায়। বাবা না বলে ডাড বলতে হবে। ডাড! হাউ ডাড! বাবা কি দাদা না’কি? ডাড, ডাড, বাপি, বাপি বলতে হবে! মম্মি, হ্যালো মম্মি, মম হাই মম! আরে মা বল, মা… কেউ কেউ বলে আন্টি। আরে আন্টি কি? আংকেল! কল…কল আংকল, এসব কি? আমার ভাষাতে মার ভাই মামা আছে। বাবার ভাই চাচা, কাকা, জ্যাঠা আছে। মার বোন মাসি ও খালা আছে। বাবার বোন ফুপু ও পিসি আছে। ফুপুর জামাই ফুপা, মাসির জামাই মেসো, খালার জামাই খালু, পিসির জামাই পিসো আছে। তা না আংকেল, আন্টি ড্যাডি মম্মি বাপি মম। ইচ্ছে করে কেউ কেউ ভাষাকে বিকৃত করছে। এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি আর কথা বলতে পারবো না। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আপনার বাংলা ভাষার অস্তিত্বকে গ্রহণ করেন। বাঙালি হন। মাতৃভাষাকে ভালোবাসুন। আমি আবার বলছি আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা”।