অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী

1
13

নিউজ ডেস্ক

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চকবাজার ট্রাজেডি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম মালিকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। তিনি বলেন, এবার নিশ্চই এসব গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে তারা আর আপত্তি করবেন না। তিনি বলেন, ‘বারবার এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আর যারা আহত তাদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামীকাল অফিস খুললে আমরা একটি শোক দিবসেরও ঘোষণা দেব।’

এ সময় দমকল কর্মী এবং পুলিশ ও র‍্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী এবং চিকিৎসকদের সচেতনতার এবং রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যে অনেকের লাশ সনাক্ত হয়েছে এবং তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। কয়েকজন এখনো যে সনাক্ত হতে পারেননি তাদের ডিএনএ টেস্ট করে স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হবে, সেই প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে নিমতলীতে যখন আগুন লাগলো সে সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখান থেকে যত কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রয়েছে তার সব সরানো হবে। সেজন্য কেরানীগঞ্জে একটি জায়গাও আমরা ঠিক করলাম, উদ্যোগটা নিলাম এবং সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হলো- এখানকার কেমিক্যালের যত গুদাম আছে (বৈধ বা অবৈধ) সেগুলো কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হবে। যাতে করে এখানে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে না পারে।’ ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাদের অনেকেই (মালিক পক্ষ) এতে রাজী হন নাই,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে তাঁর সরকার বহুতল ভবন করে আধুনিক গোডাউন তৈরি করে দিতে চাচ্ছিলো। যাতে করে এগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং কোনরকম দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। আবার ঘটলেও যেন একটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। সেভাবেই আধুনিক একটি পদ্ধতিতে এসব সরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেহেতু মালিকরা রাজী হন নাই তাই এটা আর কার্যকর করা যায়নি। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আশা করি এই দুর্ঘটনার পর যারা তখন এই আপত্তি জানিয়েছিলেন তারা এখন আর সেই আপত্তি করবে না।’তিনি এ সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে রাসায়নিকে গুদাম পুরান ঢাকার থেকে স্থানান্তরে তাঁর সরকার উদ্যোগ নিলে তা কাজে আসেনি বলে জানান।

তিনি দুর্ঘটনা থেকে পুরান ঢাকাকে রক্ষার জন্য রাসায়নিকের গুদামগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বহুতল গোডাউন গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার পদক্ষেপ নেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই অলি-গলি রাস্তাগুলোকে আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে দমকলবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঢাকার ধোলাইখাল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল থেকে শুরু করে ঢাকার অনেক খাল এবং জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘পুকুর খাল এগুলো যেন আর বন্ধ করা না হয়। এগুলো যেন রক্ষা পায়। কারণ এ ধরনের আগুন লাগলে পানির অভাবটা যেন আর না থাকে। সে বিষয়টি খেয়াল করেই সংশ্লিষ্ট সকলে কাজ করবেন।’
তিনি এ সময় এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।

উৎসুক জনতার জনসমাগম এবং ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেলে লাইভ প্রচার করতে গিয়ে উৎসুক সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘এই উৎসুক্যের কারণে যারা আগুন নেভানোর কাজে সম্পৃক্ত থাকেন তাদের কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়’।‘আমি জানিনা এই সময়টা কোন প্রশ্ন করার সময় কিনা বা সেখান থেকে একটা উত্তর কিভাবে আশা করা যায়?’ টেলিভিশন সাংবাদিক বা নিউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণমাধমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভদ্রলোক (আগুন নেভানোয় ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট দমকল কর্মী) কাজে যাবেন তাকে ধরে রেখে একের পর এক প্রশ্ন, কোন কোন চ্যনেল এই কাজটি করেছেন। ভবিষ্যতে দয়া করে সেটা না করে সুস্থভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা সকলে নেবেন। সেটাই আমরা চাই।’

তিনি এ সময় দায়িত্ব পালনের নামে মেডিকেলে রোগীর কাছেও মিডিয়া কর্মীদের ভিড় করার সমালোচনা করে বলেন, এ সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টা বা ৭২ ঘন্টা না পার হলে (ইনফেকশনের কারণে রোগীর অবস্থা আরো গুরুত্ব হয়ে যেতে পারে বা রোগীরা ইমোশনাল হয়ে গেলে সেটাও তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে) সেসব রোগীর কাছে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, তাদের দেখানো বা তাদের ছবি তোলা- এসব বন্ধ করতে হবে। আমি দেশবাসীকেও বলবো এই বিষয়গুলোর দিকে একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

কয়েকদিন আগেই সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে আগুন লাগার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত রোগীদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করায় সেখানে আল্লাহর রহমতে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে, সেখানে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো তদন্ত চলছে।

এ সময় নতুন রাস্তা-ঘাট, স্থাপনাসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণের সময় সে সব জায়গায় যেন পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা মজুদ থাকে সেই দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের চুরিহাট্টা জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৬৭ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। অগ্নিকাণ্ডে ৫টি ভবন পুরোপুরি ভস্মিভূত হয় যেখানে কেমিক্যালের মজুদ এবং বিভিন্ন পণ্যের কাচামাল হিসেবে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের কারখানা ছিল বলে দমকল বাহিনীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে। এরআগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় অনুরূপ এক রাসায়নিক গুদাম থেকে সৃষ্ট আগুনে অন্তত ১২৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছিল।
(সূত্রঃ বাসস)