নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইলের তিন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আগামীকাল রবিবার (২৪ মার্চ) ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে নড়াইলের এসব উপজেলায় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে কোনো বিরতি ছাড়াই বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। ২৪৩টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হবে। ৩টি উপজেলায় প্রার্থী ৫০ জন। আর তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ২৬৯ জন ভোটার। উপজেলা ৩টিতে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে।
কিন্তু প্রচারণার শুরুর দিন থেকে ভোটের আগের দিন রাত পর্যন্ত ভোট নিয়ে ভোটারদের তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি মাঠে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জেলার সবকটি উপজেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা থাকলেও ছিল না নির্বাচনী আমেজ। প্রার্থী আর কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষণীয় হলেও ভোটাররা ছিলেন নীরব। প্রচরণার শেষ দিন পর্যন্তও চোখে পড়েনি ভোটের আমেজ। জেলার সব উপজেলায় প্রার্থীদের ভিড়ে ভোট আর প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হলেও জমেনি ভোটের মাঠ। তাই ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের কৌতূহলের শেষ নেই।
নির্বাচন সফল করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। শনিবার দুপুরের পর ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল, অমোছনীয় কালিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নির্বাচন কমিশন থেকে বুঝে নেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা। পরে কঠোর নিরাপত্তায় এসব সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয় প্রচার-প্রচারণা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি বিএনপি অংশ না নেয়ায় আ’লীগের দলীয় প্রার্থীরা সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারতেন। তবে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য তা আর হচ্ছে না। জেলার ৩টি উপজেলায় আ’লীগের প্রার্থীদের অস্বস্তিতে রেখেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
আ’লীগ দলীয় হাই কমান্ড বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এক প্রকার ছাড় দেয়ার সুযোগে অধিকাংশ উপজেলার মতো নড়াইলের তিনটি উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আ’লীগের উপজেলার হেভিওয়েট নেতারা। দল কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী।
নড়াইলের ৩টি উপজেলায় এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। কালিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান খান শামিমুর রহমান ওছি ফেইসবুকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় চেয়ারম্যান পদে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলায় ৪,কালিয়ায় ৩ ও লোহাগড়ায় ৫ জন রয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুরুষ ২৩, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৫ জন প্রার্থী।
নড়াইল সদরে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলুর (নৌকা) সঙ্গে লড়ছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিপ্লব বিশ্বাস বিলো (আনারস), জাতীয় পার্টির মিলন মল্লিক (লাঙ্গল) ও এনপিপি’র (ছালু) নুরুল ইসলাম (আম) মার্কা।
লোহাগড়া উপজেলায় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী রশিদুল বাসার ডলারের (নৌকা) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু (আনারস)। আ’লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুর আমির লিটু (মোটরসাইকেল)। এছাড়া লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান (দোয়াত-কলম) এবং এনপিপির (ছালু) প্রার্থী মারুফ মোল্যা (আম)।
কালিয়া উপজেলায় আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপদ ঘোষের (নৌকা) সঙ্গে লড়ছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এসএম হারুনার রশীদ (আনারস)।
বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা খান শামীম রহমান ওছি (চিংড়ি মাছ) অফিসিয়ালী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এছাড়া এনপিপির (ছালু) প্রার্থী নূর আলম সরদার মিরান (আম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাশাপাশি জেলার ৩টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলায় আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ দু’টি উপজেলায় আ’লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সর্বপরি, ভোটের কাস্টিং পারসেন্টেজ কেমন হবে। ভোট কেন্দ্রে কোনো হামলা-মামলা হবে কি না বরং এমন বিষয় আর শঙ্কা নিয়ে চলছে সর্বমহলে নানা কৌতূহল আর আলোচনা-সমালোচনা।
নড়াইল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম জানান, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে ফিরতে পারেন সেদিকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আনসার ভিডিপি, পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তা ছাড়া বিজিবি ও র্যাব বাহিনী টহলরত থাকবেন।’