স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনার অভিযোগে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভূগি ওই শিশুর বাবা বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা করে। এদিকে ওই এলাকার কয়েক ইউপি মেম্বর, ইউনিয়ন আ’লীগের নেতা এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ধারণা একজন নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে ধর্ষণ চেষ্টার নাটক সাজানো হচ্ছে ! প্রকৃত ঘটনা কি এবং প্রকৃত দোষীর বিচার হোক এ দাবিতে সোমবার বিকেলে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় ৩৫ থেকে ৪০জন সদর থানায় আসেন।
সদর হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ মোঃ মশিউর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, মঙ্গলবার (৭মে) একজন নারী চিকিৎসককে দিয়ে ওই শিশুর পরীক্ষা-নীরিক্ষা করানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট দু’একদিন পাওয়া যাবে।
সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মংনা খাতুন জানান, শনিবার ( ৪মে) বেলা ১১টার দিকে আমার স্বামী আলতাব হোসেন জমিতে ধান কাটতে যায়। দু’ছেলে অহিদুল (১২) ও মহিদুল (৯) বাড়িতে ছিলনা। আর আমি হাস আনতে বিলে যাই। একা বাড়িতে শিশু কন্যা ছিল। কিছু সময় পর মেয়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে বাড়িতে এসে দেখি একই গ্রামের শিশির সরকার (৩৮) মেয়ের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করছে। এ সময় ঝাটা নিয়ে এগিয়ে আসলে সে দৌড়িয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোষীরা ভয়ভীতি দেখায় এবং আপোষ মিমাংসার কথা বলে। পরে তাদের আর কোনো আগ্রহ না দেখে রোববার হাসপাতালে নিয়ে আসি।
বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর জমাদ্দার জানান, সোমবার বিকেলে অভিযুক্ত শিশির, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ৮নং ওয়ার্ড মেম্বর সাবু শেখ, বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আনান মোল্যা,সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানসহ প্রায় ৩৫-৪০ থানায় আসি। পুলিশ মিমাংসার জন্য শিশিরকে আসতে বললেও পরে তাকে আর ছাড়েনি। তিনি বলেন, শিশিররা কৃষিকাজ এবং বিলে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করে। আলতাফের দু’ছেলে ছোট হলেও ওরা বিলের মাছ ধরার ঘুনি-বাইনেসহ বিভিন্ন ছোট-খাট চুরির সাথে যুক্ত। শিশির দু’দিন এসব ঘটনা ধরিয়ে দেওয়া ওরা তার (শিশির) ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। ওই শিশুর বাবা-মা গ্রামের কোনো মেম্বর-মাতব্বর কাওকে কিছু জানায়নি। আমরা হাসপাতালে গিয়ে ওই শিশুকে ঘটনার বিবরণ জানতে চাই। তখন ওই মেয়ে কিছুই বলেনি। আমরা এ ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার চাই।
তোফায়েল মাহমুদ তুফান বলেন, আমি এ বিষয় নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, আরএমও এবং ওসির কাছে অনুরোধ করেছি। আমি শুনেছি ওই মহিলা শিশিরের কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল। ঘটনা শনিবারের। তাহলে কেন রোববার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো ? শিশির অন্যায় করলে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেত। পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে এ মামলা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
এ ব্যাপারে শিশির সরকারের ভাই অরবিন্দু সরকার তার ভাইকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমরা সহজ-সরল মানুষ। কৃষিকাজ এবং বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। তার ছেলে-মেয়ে আছে। সে যদি করতো তাহলে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেত। ওই মহিলা ও তার পরিবার মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সদর থানার ওসি মোঃ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, শিশুর বাবা বাদি হয়ে শিশিরের নামে মামলা করেছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। ভূক্তভোগি শিশু মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিচ্ছে বলে জানান।